প্রয়োগ না হলে আইন করে কী লাভ: সংসদে হারুনের প্রশ্ন

জাতীয় সংসদ ভবন
ফাইল ছবি

আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিরোধী দল বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। তিনি বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নামধারী গুন্ডারা একজন ছাত্রীকে নিপীড়ন করেছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি প্রশ্ন রাখেন, আইনের প্রয়োগ না হলে আইন প্রণয়ন করা কেন?
আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে একটি বিল তোলার সময় আপত্তি জানিয়ে হারুনুর রশীদ এই প্রশ্ন রাখেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২২’ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করতে গেলে তাতে আপত্তি জানান হারুন। এ সময় তিনি বলেন, কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম ১০ বছরের দণ্ডিত হয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, হাজী সেলিম আইন মেনে বিদেশ গিয়েছেন। অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসার জন্য আবেদন করেছেন, কিন্তু এ ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার সুযোগ নেই। এটিকে তিনি আইনের বৈষম্য হিসেবে বর্ণনা করেন।

বিরোধী দলের কর্মসূচি পালনের অধিকার আছে কি না—এমন প্রশ্ন রেখে বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, সরকারি দল কর্মসূচি পালন করছে পুলিশি প্রহরায়। আর বিরোধী দলকে কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রসঙ্গ টেনে হারুনুর রশীদ বলেন, ‘এটা কি আমরা সভ্য সুশাসনের রাষ্ট্র বলতে পারি? সুপ্রিম কোর্টের অঙ্গনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তন্বীকে ছাত্রলীগ নামধারী গুন্ডাপান্ডারা নিপীড়ন ও নির্যাতন করেছেন, যা গণমাধ্যমে দেখানো হয়েছে। কিন্তু আইন এই ব্যাপারে এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আইন তৈরি করবেন কার জন্য? মানুষের জন্য আইন তৈরি করবেন। কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ তো আমরা পাচ্ছি না।’

এ সময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী জানতে চান, বিলটি উত্থাপনে হারুনের আপত্তি কোথায়। সরকারি দলের সদস্যরাও হইচই করে হারুনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।

পরে হারুনুর রশীদ বলেন, বিলটি নিয়ে তাঁর আপত্তি নেই। দেশে এখন সবচেয়ে বড় সংকট সুশাসনের অভাব—মন্তব্য করে তিনি বলেন, আইনের প্রয়োগ না পেলে আইন করে কী লাভ হবে?

এর আগে হারুনুর রশীদ বলেন, বিচারকদের সুযোগ–সুবিধা বাড়ানো, আরও বিচারক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন আছে। একটি মামলা শেষ হতে ৩০ বছর লেগে যাচ্ছে। বিচার পেতে পেতে বিচারপ্রার্থী মৃত্যুবরণ করছেন।

হারুনের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘দুঃখে কানব না হাসব, বুঝতে পারছি না। কারণ সংসদ সদস্য আমাকে যে জ্ঞান দিলেন, সেটা না হয় আমার কাজে লাগবে কিন্তু ওনার কতটুকু কাজে লেগেছে, আমি ঠিক জানি না। তার কারণ উনি আমাকে বললেন, মানুষ যেন বিচার পায়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবার হত্যার পরে বিচারের সুযোগ ছিল? ছিল না।’

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধে দায়মুক্তি আইনের কথা উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ওনারা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ করে বিচার বন্ধ করেছিলেন। আর আজকে উনি আমাকে বিচার শেখাচ্ছেন।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার শেখান এখন আমাকে। আমি এখন বলতে পারি প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, জেলহত্যার বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সেই জন্য সাহস করে বিচারপতিদের সুযোগ–সুবিধা বৃদ্ধির আইন আনতে পেরেছি।’

পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২২’ সংসদে তোলেন। ৩০ দিনের মধ্যে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

১৯৮২ সালে সামরিক আমলে অধ্যাদেশ দিয়ে এ–সংক্রান্ত আইন করা হয়। সেটি বাতিল করে বাংলায় নতুন আইন করতে বিলটি আনা হয়েছে।

বিলে বলা হয়েছে, অবসরের পর প্রধান বিচারপতি তাঁর জীবদ্দশায় গৃহসহায়ক, গাড়িচালক, দারোয়ান সেবা, সাচিবিক সহায়তা এবং অফিস কাম বাসভবনের রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা পাবেন। এই ব্যয় নির্বাহের জন্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকা বিশেষ ভাতা পাবেন।

বিলে বলা হয়েছে, একজন বিচারককে তাঁর মোট কর্মকালীন ছুটির শর্ত অনুযায়ী অর্ধ গড় বেতনে মোট ৩৬ মাসের অধিক ছুটি মঞ্জুর করা যাবে না। কোনো বিচারকের প্রকৃত কর্মকালের এক-চব্বিশাংশ ভাগ মেয়াদ পর্যন্ত তাকে পূর্ণ গড় বেতনে ছুটি মঞ্জুর করা যাবে। পূর্ণ গড় বেতনে ছুটি এককালীন পাঁচ মাস এবং অন্য কোনো ছুটি এককালীন ১৬ মাসের অধিক মঞ্জুর করা যাবে না। কোনো বিচারক পূর্ণ গড় বেতনে ছুটিতে থাকাকালে তাঁর নির্ধারিত মাসিক বেতনের সমান হারে ছুটিকালীন বেতন প্রাপ্য হবেন।

কোনো বিচারক অনভিপ্রেত কোনো আঘাতের দ্বারা বা কারণে অথবা স্বীয় দায়িত্ব পালনকালে আহত হয়ে কর্মে অক্ষম হলে বিশেষ অক্ষমতাজনিত ছুটি প্রাপ্য হবেন।
বিলে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি বিচারকদের পেনশন ও আনুতোষিক মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ হবেন। অবসরে যাওয়া বিচারকেরা উৎসব ও বাংলা নববর্ষ ভাতা পাবেন।