ফোনালাপ ফাঁসের উৎস বের করা কঠিন নয়

তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডিনেট ও আই সোশ্যালের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী অনন্য রায়হান
ছবি: সংগৃহীত

তথ্য সুরক্ষা দিবস আজ (২৮ জানুয়ারি)। কাউন্সিল অব ইউরোপ ২০০৬ সাল থেকে প্রতিবছর এ দিনে তথ্য সুরক্ষা দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ২০০৮ সাল থেকে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এদিনকে বেছে নেওয়ার কারণ হচ্ছে ১৯৮১ সালের ২৮ জানুয়ারি কাউন্সিল অব ইউরোপ কনভেনশন ১০৮ প্রণয়ন করে, যা ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় আন্তর্জাতিকভাবে প্রথম বাধ্যতামূলক আইনি পদক্ষেপ। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা পরিস্থিতি, ফোনালাপ ফাঁস, আড়ি পাতা ও তথ্য সুরক্ষার আইনি কাঠামো নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডিনেট ও আই সোশ্যালের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী অনন্য রায়হান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুহাদা আফরিন

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি খাতে নানাভাবে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তাদের কাছে তথ্য কতটুকু নিরাপদে থাকে?

অনন্য রায়হান: এখানে কয়েকটি বিষয় দেখতে হবে। প্রথমত, ব্যক্তির সম্মতিক্রমে সংগৃহীত ব্যক্তিগত তথ্য যে উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে, তার বাইরে অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না। অথবা ব্যক্তির সম্মতি ছাড়া ওই তথ্য অন্য কাউকে দেওয়া হচ্ছে কি না। দ্বিতীয়ত, সংগৃহীত তথ্যের স্পর্শকাতরতাভেদে যথাযথ সাইবার নিরাপত্তাবলয়ে রাখা আছে কি না। আমার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন হলো, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতেই এর গুরুত্ব অনুধাবনে ঘাটতি আছে এবং উদ্যোগ নেই। সেই অর্থে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নেই। যেসব প্রতিষ্ঠান সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে থাকে, তাদের তথ্যের স্পর্শকাতরতাভেদে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্যোগ প্রয়োজন।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আমরা দেখছি, মানুষের ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এমনকি ফোনালাপ দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করে এমন একটা সময় ফাঁস করা হচ্ছে, যা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বেকায়দায় ফেলছে। এর দায় কার?

অনন্য রায়হান: যেকোনো তথ্য সংগ্রহ ও স্থানান্তরে ডিজিটাল ছাপ রয়ে যায়। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কারও ব্যক্তিগত তথ্য বিনা অনুমতিতে প্রকাশ করলে তা আইনের চোখে অপরাধ। ডিজিটাল ছাপ থেকে তথ্য ফাঁসের উৎস খুঁজে বের করা কোনো কঠিন কাজ নয়। ফোনালাপ ফাঁস ও প্রচারে কয়েক ধাপে অপরাধ ঘটছে—যিনি বা যে প্রতিষ্ঠান তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে, যিনি বা যাঁরা তা প্রকাশ করছেন, সেটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, টেলিভিশন, বেতার বা অনলাইন মিডিয়া হোক, এই প্রচারের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিরপেক্ষ আচরণ রয়েছে। সুতরাং ফোনালাপ ফাঁসের দায় সংশ্লিষ্ট সবার। আমাদের তথ্য সুরক্ষার সংস্কৃতি নেই, শিক্ষা নেই এবং আইনগত কাঠামো নেই। ব্যক্তিগত তথ্যে বৈধ-অবৈধ অভিগম্যতা লাভের তোড়জোড় রয়েছে। তবে নাগরিকের নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষার তাগিদ সেখানে আছে কি না, তা দেখা যেতে পারে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: উন্নত গণতান্ত্রিক দেশেও কি এমন ঘটনা ঘটে? তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতির পার্থক্য কী?

অনন্য রায়হান: সব ধরনের অপরাধ সব দেশেই হয়ে থাকে। তার মানে এই নয়, সংঘটিত অপরাধ মাফ হয়ে যায়। নাগরিকের স্বার্থ সুরক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান আছে কি না এবং তা থাকলে নাগরিকের নিরাপত্তা বা অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রভাবমুক্ত থেকে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে কি না, তার ওপর নির্ভর করে পার্থক্য।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: সকালে উঠে কি কম দামে ডিম বিক্রির খুদে বার্তা মুঠোফোনে পান? নম্বর তারা কই পায়?

অনন্য রায়হান: ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা বা তার সম্ভাব্য অপব্যবহার নিয়ে সাধারণ নাগরিকের ধারণার ঘাটতি রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী। আমাদের আত্মরতি আর লোভ—এ দুটিই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মূল পুঁজি, যারা ব্যক্তির তথ্যকে বাণিজ্যিক বা ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করে। আমরা নিজেরাই স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রায় সব তথ্য দিয়ে থাকি। সেগুলোর বিশ্লেষণে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আমাদের মনস্তত্ত্ব নিজেদের থেকেও ভালো জানে। সুতরাং ডিমের খুদে বার্তা পাওয়ার ব্যাপারে নাগরিকের কিছু দায় রয়েছে। কিন্তু মূল দায় ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর, যারা ফোন নম্বর ‘বাজার’ থেকে সংগ্রহ করে। এটা সম্ভব হয়। কারণ, যে প্রতিষ্ঠান আপনার কাছ থেকে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে, তারা নিজেরা অথবা প্রতিষ্ঠানের কর্মী তা অর্থের বিনিময়ে অন্যদের সরবরাহ করে। এসব হয়ে আসছে। কারণ, ওই সব প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার কোনো নীতিমালা নেই, ডিজিটাল পদ্ধতি নেই, সর্বোপরি কোনো আইনগত বাধা নেই।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য অন্য কাউকে দিতে পারে? দিলে কী করার আছে?

অনন্য রায়হান: পারে, যদি আপনার জ্ঞাতসারে অথবা অজ্ঞাতসারে আপনার সম্মতি নিয়ে থাকে। পারে না, যদি আপনি সম্মতি না দেন। না দেওয়ার ব্যাপারটি ততক্ষণ পর্যন্ত নৈতিকতার লঙ্ঘনের পর্যায়ে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত এর আইনগত ভিত্তি প্রস্তুত না হয় এবং আইন প্রয়োগে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এটা প্রতিরোধে সক্রিয় থাকে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তির তথ্য থাকে। সেগুলো কি চাইলেই সরকারের অন্য সংস্থা নিতে পারে?

অনন্য রায়হান: সাধারণভাবে বলব, পারে না। এখানেও সম্মতির ব্যাপার রয়েছে। তথ্যের অপব্যবহার রোধে প্রযুক্তিগত ও আইনি কাঠামো প্রয়োজন এখানেও। যদি তথ্য আদান-প্রদান নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়ে হয়, সেখানেও একটি নিরপেক্ষ পক্ষ থাকতে হয়, যেন কোনো প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের কোনো ব্যক্তি ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারেন।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাডের তথ্যমতে, বিশ্বের ১৯৪টি দেশের মধ্যে ১২৮টিতে তথ্য সুরক্ষা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার আইন রয়েছে। বাংলাদেশে তথ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা ও আইন আছে কি?

অনন্য রায়হান: আইন তৈরি হচ্ছে জানি। যেহেতু এ আইন ব্যক্তির তথ্যের তথা নাগরিকের নিরাপত্তার স্বার্থে, তাই এই আইন প্রণয়নে নাগরিকের ব্যাপক সম্পৃক্ততা প্রয়োজন রয়েছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকার যেকোনো তথ্য নিতে পারবে এবং দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারবে। এ বিধান রেখে আইনটি পাস হলে ব্যক্তিগত তথ্য কি সুরক্ষিত থাকবে?

অনন্য রায়হান: আইনের খসড়া দেখার সুযোগ আমার হয়নি। দেখে মন্তব্য করতে পারব। সাধারণত, যেকোনো আইন প্রণয়নের আগে জনমত নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে এখনো সেটা দেখছি না। তবে ‘দেশের প্রয়োজন’কে সুনির্দিষ্ট করার প্রয়োজন রয়েছে। আর কে কতটুকু তথ্যে অভিগম্যতা পাবে, তা সীমিত করার দরকার আছে। নয়তো সংকীর্ণ ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক স্বার্থে তা ব্যবহৃত হতে পারে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কতটা নাগরিককে সুরক্ষা দিয়েছে আর কতটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার। সরকার চাইলে ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষিত নাগরিকের সব তথ্যই অনুমতি ছাড়া নিতে পারে। নেবে কি না, তা সরকারের চরিত্রের ওপর নির্ভর করে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: দেশের ডেটা দেশে রাখতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে বাংলাদেশে সার্ভার স্থাপন করতে হবে—এমন বাধ্যবাধকতা রেখে নীতিমালা তৈরির কথা শোনা যাচ্ছে। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় এটা কি প্রয়োজনীয়?

অনন্য রায়হান: বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিগত কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিজেরাই সার্ভার স্থাপন করে। ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষায় সার্ভার দেশে থাকতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সুরক্ষা নির্ভর করে আইনগত কাঠামো, নীতি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সক্ষমতার ওপর।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: অভিযোগ আছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তার গ্রাহকের কথা শোনে এবং আদান-প্রদান করা বার্তাও নজরে রাখে। সে অনুযায়ী বিজ্ঞাপন দেখায়। যদিও অভিযোগটি তারা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো দ্বারা মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য কতটা বেহাত হচ্ছে?

অনন্য রায়হান: আগেই বলেছি, আমরা সাইনআপ করার সময়ে এবং নিউজফিডে আমাদের সব তথ্য স্বেচ্ছায় উজাড় করে দিচ্ছি। তাই বেহাতের দায়টা কিছুটা আমাদের। তবে না জানার কারণে ঠকানোটা আইনসম্মত হলেও অনৈতিক। আর যখন কোনো কিছু অনৈতিক প্রমাণিত হয়, তখন আইন বদলানোর দরকার রয়েছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: অনেক সময় দেখা যায়, একটি অ্যাপ ডাউনলোড করে মুঠোফোনে ইনস্টল করতে গেলে সব ধরনের তথ্য চাওয়া হয়। অ্যাপ কত তথ্য চাইতে পারবে, সে বিষয়ে কি বৈশ্বিক কোনো বিধিবিধান আছে?

অনন্য রায়হান: একটি নীতি আছে। এটিকে বলা হয় ‘ডেটা মিনিমাইজেশন’, অর্থাৎ যতটুকু দরকার, শুধু ততটুকু নেওয়া। প্রয়োজন শেষ হলে তথ্য ধ্বংস করা। অ্যাপ যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত তথ্য চায়, তা কিছু দেশে আইনগতভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: সরকারি সংস্থাকে আইনে আড়ি পাতার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে কী বলবেন? আড়ি পাতার সুযোগ কি অপব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা থাকে?

অনন্য রায়হান: বিশ্বব্যাপী গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আইন বা নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে আড়ি পাতে। এর অপব্যবহার ওই প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে বা প্রতিষ্ঠানের কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত স্বার্থে হয়ে থাকে। সম্ভাব্য অপব্যবহার কী হতে পারে, তা যাচাই করে খুবই সীমিত আকারে আড়ি পাতার সুযোগ থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে একাধিক প্রতিষ্ঠানকে সেই সুযোগ না দেওয়াই শ্রেয়। আর যে কারও ফোনে আড়ি পাতার সুযোগ ক্ষতির কারণ হয়।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে কোনো রাষ্ট্রের জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য কতটা সুরক্ষিত, তা থেকে বোঝা যাবে গণতন্ত্র কতটা শক্তিশালী—গত বছর আপনি প্রথম আলোকে এ কথা বলেছিলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

অনন্য রায়হান: নাগরিকের তথ্য সুরক্ষিত নয়, এটি বলতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। এটির গুরুত্ব অনুধাবন করে সুরক্ষিত করতে আইনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এটি একটি সুখবর। তথ্য সুরক্ষার আইন কেমন হবে, আর নাগরিকের সুরক্ষায় প্রতিষ্ঠানগুলো আইনটি কীভাবে প্রয়োগ করবে, তা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি কি মনে করেন জনগণের তথ্য রাজনীতি ও নির্বাচনী কৌশল সাজাতে ব্যবহৃত হতে পারে?

অনন্য রায়হান: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া তথ্য নাগরিকের মনোভাব বুঝতে সাহায্য করে। কোনো দল যদি তা কাজে লাগিয়ে রাজনীতি ও নির্বাচনী কৌশল সাজায়, তাতে কোনো সমস্যা দেখি না। তবে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিগত তথ্য রাজনৈতিক কাজে লাগানো কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য নয়।