বই প্রকাশের মধ্য দিয়ে দেশকে কীভাবে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা যায়, তা মহিউদ্দিন আহমেদ দেখিয়ে গেছেন। নিজের গড়ে তোলা প্রকাশনা সংস্থা ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) থেকে দেশের ইতিহাস, সাহিত্য, সমাজ ও অর্থনীতি নিয়ে তিনি একের পর এক মানসম্মত ও গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। দেশের প্রকাশনাশিল্পকে তিনি নিয়ে গেছেন আন্তর্জাতিক স্তরে।
সদ্য প্রয়াত মহিউদ্দিন আহমেদের স্মৃতিচারণায় এভাবেই তাঁর কাজের মূল্যায়ন করেছেন বিশিষ্টজনেরা। শনিবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দিনের মতো মহিউদ্দিন আহমেদের স্মরণে ভার্চ্যুয়াল সভা হয়। সেখানে প্রথিতযশা এই প্রকাশককে নিয়ে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক আলী রীয়াজ, অর্থনীতিবিদ বিনায়ক সেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক মেঘনা গুহঠাকুরতা, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, পরিবেশবিদ ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ আতিক রহমান, আহরার আহমেদ, খালেদ শামস, আমিনা সাঈদ, সুদীপ সেন, জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।
মহিউদ্দিন আহমেদ তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু ছিলেন উল্লেখ করে হামিদা হোসেন বলেন, তিনি দেশের অগ্রগণ্য প্রকাশক ছিলেন। শুধু ইংরেজি মাধ্যমে নয়, বাংলা মাধ্যমেও বহু গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ করে তিনি দেশের প্রকাশনাশিল্পকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দেশের সমাজ, অর্থনীতি নিয়ে গবেষণামূলক বই প্রকাশ করে মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করেছেন।
অর্থনীতিবিদ বিনায়ক সেন বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) উল্লেখযোগ্য গবেষণা তিনি প্রকাশ করেছেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে সবার খোঁজখবর রাখতেন। কীভাবে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করে দেশের জ্ঞানচর্চাকে ঋদ্ধ করা যায়, তা তিনি করে দেখিয়েছেন।
মহিউদ্দিন আহমেদ জ্ঞাননির্ভর প্রকাশনা জগতের পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, দেশের প্রকাশনাশিল্পে নানা সীমাবদ্ধতা নিয়েও মহিউদ্দিন আহমেদ মানসম্মত বই প্রকাশ করে গেছেন। তিনি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বই অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন।
জাতীয় গ্রন্থনীতি প্রণয়নে মহিউদ্দিন আহমেদ অন্তত মেধা, শ্রম দিয়েছেন বলে জানান সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলেন, ভবিষ্যতেও জাতীয় গ্রন্থনীতির বিষয়ে তাঁর জ্ঞানকে প্রয়োগ করতে হবে।
দেশের জ্ঞানচর্চা, বুদ্ধিভিত্তিক চর্চার ক্ষেত্রে ইউপিএল খুব সমৃদ্ধ বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘প্রথমাসহ দুটি প্রকাশনার ক্ষেত্রে এ রকম উদ্যোগ দেখতে পাই। খুবই দুঃখ লাগে যখন এ রকম মানুষ চলে যান। মনে হয়, তাঁরা অনেক আগে চলে গেলেন।’
কবি–সাংবাদিক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ দুটি উপন্যাস শওকত আলীর ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ এবং আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’ প্রকাশ করে মহিউদ্দিন আহমেদ প্রকাশনার তাৎপর্য বদলে দিয়েছেন।
প্রকাশনাশিল্পে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মহিউদ্দিন আহমেদকে ২০১৪ সালে ‘ইমেরিটাস প্রকাশক’ সম্মাননা দেয় বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। ৭৭ বছর বয়সী মহিউদ্দিন আহমেদ গত ২১ জুন রাতে মারা যান।
স্মরণসভায় স্বাগত বক্তব্য দেন প্রয়াত মহিউদ্দিন আহমেদের মেয়ে মাহরুখ মহিউদ্দিন। তিনি অনুষ্ঠান সঞ্চালনাও করেন। পরে সঞ্চালনায় যোগ দেন মহিউদ্দিন আহমেদের আরেক মেয়ে শামারুখ মহিউদ্দিন।