রাজশাহীতে গুলিবিদ্ধ পুলিশ, বগুড়ায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা পুলিশের একটি মোটরসাইকেল ও কলেজের আসবাবে আগুন ধরিয়ে দেন। ছবি: শহীদুল ইসলাম, রাজশাহী
রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা পুলিশের একটি মোটরসাইকেল ও কলেজের আসবাবে আগুন ধরিয়ে দেন। ছবি: শহীদুল ইসলাম, রাজশাহী

গেজেট সংশোধন এবং ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি ও প্রশিক্ষণের ভাতা বাড়ানোর দুই দফা দাবিতে আজ সোমবার সকাল থেকেই বগুড়া, রাজশাহী. পটুয়াখালী ও ফেনীতে  পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেছেন।এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে।এতে পুলিশসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।রাজশাহীতে এক পুলিশ গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলেও জানা গেছে।রাজশাহী, বগুড়া ও পটুয়াখালী  থেকে ৩৬জনকে আটক করেছে পুলিশ।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
রাজশাহী: আজ বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন।একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশের একটি মোটরসাইকেল ও কলেজের আসবাব বাইরে নিয়ে এসে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন।পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে ক্যাম্পাসের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়।একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা রাজশাহী-নওগাঁ সড়কে অবস্থান নিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়লে পুলিশও পাল্টা লাঠিপেটা ও রাবার বুলেট ছোড়ে।এতে এনামুল হক নামের এক পুলিশ কনস্টেবল গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২৬ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে।

বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা পুলিশের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছেন এবং ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন।এ কারণে বাধ্য হয়ে পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে।এই আন্দোলনে শিবির নেতৃত্ব দিচ্ছে।তিনি দাবি করেন, শিক্ষার্থীদের ছোড়া গুলিতেই পুলিশ কনস্টেবল গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

বগুড়া: আজ সকাল থেকে বগুড়া সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ শুরু করেছেন।তাঁরা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের গত দুই দিনের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে বগুড়ার ঠনঠনিয়ায় সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।এদিকে আজ সকাল ১০টা থেকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের নির্ধারিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু সকাল নয়টার দিকে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করেন এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সাতমাথা-শেরপুর সড়ক অবরোধ করে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন।পুলিশ বাধা দিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে।শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশও পাল্টা রাবার বুলেট ছোড়ে।পরে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আশপাশের গলিতে ঢুকে যান।পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চার শিক্ষার্থীকে আটক করেছে।

এদিকে, গাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে লাঠিসোঁটা নিয়ে পরিবহনশ্রমিকেরা রাস্তায় নামেন।তাঁরা এ সময় ‘আমার গাড়ি ভাঙল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’; ‘গাড়ি ভাঙচুরকারী সন্ত্রাসীদের কালো হাত ভেঙে দাও’ স্লোগান দেন।

আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীকে পেটাচ্ছে পুলিশ। ছবি: শহীদুল ইসলাম, রাজশাহী
আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীকে পেটাচ্ছে পুলিশ। ছবি: শহীদুল ইসলাম, রাজশাহী

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ শহীদ আলম বলেন, শিক্ষার্থীরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ করবেন, এটি ধারণায় ছিল না।এই আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরের ইন্ধন আছে।তবে এখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে।ক্যাম্পাসের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রকৌশলীর সংজ্ঞায় ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অন্তর্ভুক্ত করে ২০০৮ সালের গেজেট সংশোধন এবং ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি ও প্রশিক্ষণ ভাতা বাড়ানোর দাবিতে সারা দেশে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছেন।

পটুয়াখালী: দুই দফা দাবিতে আন্দোলনরত পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা আজ সোমবার সকালে শহরের করমজাতলা এলাকার মহাসড়কে  একটি যাত্রীবাহী বিআরটিসি বাস ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।পুলিশ এ ঘটনায় পলিটেকনিকের ছয় ছাত্রকে আটক করেছে।তাঁরা হলেন, মো. ইদ্রিস মিয়া , সাইদুর রহমান , সজীব চক্রবর্তী , সাখাওয়াত হোসেন , মো. সুজন ও ইউসুফ বারী। এ ছাড়া গতকাল  রোববারের সংর্ঘষের ঘটনায় আটক ২৫জনসহ অজ্ঞাত আরো ৫০০ জনকে আসামি করে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।আজ  আটক ব্যক্তিদের  আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ফেনী: সকাল ১০টার দিকে ফেনী পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তারা ফেনী সদর হাসপাতাল মোড়, একাডেমি এলাকা, গুদাম কোয়াটার রেলগেট ও ফেনী সরকারি কলেজের সামনের সড়কে দোকানপাট, ব্যাংকে ইটপাটকেল ছোড়ে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ফেনী কলেজের সামনে পাঁচটি ককটেল ছোড়ে। পরে আবারও ফেনী হাসপাতাল মোড় এবং ফেনী সদর উপজেলা পরিষদের সামনে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। এ সময় চার পুলিশ সদস্য এবং দুই স্থানীয় সাংবাদিকসহ কমপক্ষে  ১৫ জন আহত হন। পুলিশ ও সাংবাদিকদের ফেনী সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়া হয়েছে। অন্যরা বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিত্সা নিয়েছেন। দুপুর দেড়টার দিকে পলিটেকনিক শিক্ষক-ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশ ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিরা  বৈঠকে বসেন। ফেনী থানার পুলিশ পরিদর্শক  (ওসি-তদন্ত ) আবুল কালাম আজাদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।