বসতভিটা বিক্রি করেও চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে দুশ্চিন্তা

অস্ত্রোপচারের পর মা ও ছেলে
ছবি: সংগৃহীত

সন্তানের দুটি কিডনিই বিকল। কীভাবে ছেলেকে ভালো করে তুলবেন, সেই চিন্তা মায়ের মাথায়। সন্তানকে বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি দিলেন মা। তবে কিডনি প্রতিস্থাপনসংক্রান্ত চিকিৎসাও অনেক ব্যয়বহুল। ব্যয় মেটাতে বিক্রি করা হলো পরিবারের শেষ সম্বল ১০ শতাংশের বসতভিটা। ইতিমধ্যে মায়ের দেওয়া কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে মা-ছেলে দুজনই সুস্থ। তবে এখানেই শেষ নয়, চিকিৎসক তাঁদের ছয় মাসের পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। এ জন্য ঢাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকছেন তাঁরা। তা ছাড়া প্রতিদিন প্রায় চার হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বিপুল পরিমাণ টাকা কীভাবে জোগাড় হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান। বাড়ি পঞ্চগড় জেলার থেকরপাড়া এলাকায়। মায়ের দেওয়া একটি কিডনি তাঁর শরীরে প্রতিস্থাপনের পর মা-ছেলে দুজনই সুস্থ আছেন। ঢাকার একটি হাসপাতালের পাশে শ্যামলী এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন তাঁরা।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ করে গত বছরের অক্টোবরে পঞ্চগড়ে নিজ বাড়িতে ফেরার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন জাহিদ। এরপর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর ধরা পড়ে তাঁর দুটি কিডনিই বিকল। সেখানে কয়েক দিন চিকিৎসার পর গত বছরের ৩ নভেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসেন। সেখানে শ্যামলী সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। এরপর গত ২২ জানুয়ারি রাতে মা ও ছেলের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। অস্ত্রোপচারের ১০ দিনের মাথায় মা বুলি বেগম ও ছেলে জাহিদ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়লেও হাসপাতালের পাশেই একটি ভাড়া বাড়িতে থাকছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

জাহিদের বড় বোন নূর নাহারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য সম্প্রতি শেষ সম্বল বসতভিটা বিক্রি করতে হয়েছে। এর ফলে তাঁদের বসবাসের আর কোনো জায়গা থাকল না। হাসপাতালে মা ও ভাইয়ের অস্ত্রোপচার, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ১১ দিন থাকা বাবদ এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সুস্থ হয়ে ফেরার পর তাঁরা কোথায় থাকবেন জানতে চাইলে জাহিদের বোন বলেন, ‘কী আর করার আছে? পঞ্চগড়ে আমার বাড়িতে থাকতে হবে। মা আর ভাইকে তো ফেলে দিতে পারি না।’

হাসপাতালের বিছানায় জাহিদ হাসান
ছবি: সংগৃহীত

নূর নাহার আরও বলেন, কিডনি প্রতিস্থাপিত হলেও দীর্ঘ ছয় মাস অবজারভেশনে থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এ জন্য ঢাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকছেন তাঁরা। বাসা ভাড়া ছাড়াও প্রতিদিন ৩ হাজার ৮০০ টাকার ওষুধ কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যয় আরও বাড়তে পারে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। এসব চিন্তা করলে রাতে ঘুম আসে না।

এ সময় জাহিদের বড় বোন আরও জানান, ‘অপারেশনের পর মা বলেছেন, “আমার কাছে সন্তানই বড়। তার জীবন রক্ষার জন্য দুটি কিডনির মধ্যে একটি কিডনিতে ছেলে যদি জীবন ফিরে পায়, এর চেয়ে বড় আর কী হতে পারে।” মায়ের কিডনি দেওয়ার পর হাসপাতালে থাকা অবস্থায় জাহিদ বারবার মা ভালো আছে কি না, জিজ্ঞাসা করছিল।’

আরও পড়ুন