সাক্ষাৎকার: অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক
‘বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন শিক্ষাক্রমের চর্চা করব’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত বছর বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি। তবে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। তাই সংক্ষিপ্ত পরিসরে আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মোশতাক আহমেদ।
প্রশ্ন :
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ধারণা করা হচ্ছিল, এ বছর চলমান অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমেই মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে, কিন্তু আকস্মিকভাবে বার্ষিক ও নির্বাচনী পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলো, কেন?
সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক: প্রথমত, একটি বিষয় সংশোধন হবে, সেটি হলো বার্ষিক পরীক্ষা ও প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষা হবে, নির্বাচনী পরীক্ষা নয়। এই বার্ষিক ও প্রাক্–নির্বাচনী পরীক্ষা হবে ৫০ নম্বরের ভিত্তিতে। আর বাকি ৫০ শতাংশের মূল্যায়ন হবে চলমান ‘অ্যাসাইনমেন্ট’, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানা, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি কাজের ওপর। তার মানে এখানে প্রথাগত বার্ষিক পরীক্ষার মতো নয়, পরীক্ষা থেকে নেওয়া হচ্ছে ৫০ শতাংশ নম্বর। বাকি ৫০ শতাংশ নেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের অন্যান্য কাজের ওপর। সেভাবেই শিক্ষার্থীরা নম্বর পাবে। নতুন যে শিক্ষাক্রম আসছে, সেখানেও কিন্তু প্রায় এ ধরনের ব্যবস্থা। অর্থাৎ বড় অংশজুড়ে থাকবে শিখনকালীন মূল্যায়ন (ধারাবাহিক মূল্যায়ন) এবং বাকি মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে (পরীক্ষার মাধ্যমে)। তার একটি চর্চা আমরা এই বার্ষিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে করব। এর মাধ্যমে মোটামুটি বুঝতে পারব, নতুন শিক্ষাক্রম কেমন হয়।
প্রশ্ন :
যেহেতু সারা বছর পড়াশোনা খুব একটা হয়নি, কারণ শ্রেণিকক্ষে সশরীর ক্লাস করা সম্ভব হয়নি, সেখানে অল্প সময় দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের ওপর কি বাড়তি চাপ পড়বে না?
সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক: শিক্ষার্থীদের ওপর যাতে চাপ না পড়ে, সে জন্যই এ রকম ব্যবস্থা (নম্বর বিন্যাস) করা হয়েছে। পরীক্ষার পাঠ্যসূচিও ‘অ্যাসাইনমেন্টের’ বিষয় (যেসব অধ্যায়) এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শ্রেণিকক্ষে যেগুলো পড়ানো হয়েছে, সেগুলোই রাখা হয়েছে, তার বাইরে নয়।
প্রশ্ন :
তাহলে শুধু তিন বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার পেছনে যুক্তি কী?
সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক: তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার একটি যুক্তি হলো সময় কম লাগবে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি কমবে। এ ছাড়া নভেম্বরে এসএসসি ও ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষার কারণে সব বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার সময় পাওয়া যাবে না। তবে তিন বিষয়ে পরীক্ষা হলেও অ্যাসাইনমেন্ট কিন্তু হচ্ছে সব বিষয়ের। এর মানে তিন বিষয়ে পরীক্ষা হলেও বাকি সব বিষয়েই কিন্তু অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
প্রশ্ন :
এই বার্ষিক ও প্রাক্–নির্বাচনী পরীক্ষাই কি শিক্ষার্থীদের ওপরের শ্রেণিতে ওঠার (প্রমোশন) একমাত্র মানদণ্ড হবে, অর্থাৎ এই পরীক্ষায় পাস ছাড়া কি কাউকে ওপরের শ্রেণিতে উঠতে দেওয়া হবে না?
সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক: প্রমোশনের জন্য অবশ্যই এটি বিবেচনা করা হবে। পরীক্ষার ক্ষেত্রে সব সময় যেটা হয়, এখানেও তা–ই হবে।
প্রশ্ন :
জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা হচ্ছে না, তাহলে কি এ বছরও শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হবে না?
সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক: বৃত্তির বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যেহেতু জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা হচ্ছে না, অর্থাৎ বৃত্তির জন্য পরীক্ষাই হচ্ছে না, তাই হুট করে এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।