বিদেশি কোম্পানির পরামর্শে সংশোধন হচ্ছে পিএসসি

গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরামর্শ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর। এ জন্য দরকার পিএসসি সংশোধন। শিগগিরই পরামর্শক নিয়োগ।

ফাইল ছবি

বিদেশিদের বিনিয়োগে আগ্রহ কমে যাওয়ায় বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দরপত্র ঝুলে আছে কয়েক বছর ধরে। অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে একাধিক বহুজাতিক কোম্পানি। তাদের পরামর্শে উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) সংশোধন করতে পরামর্শক নিয়োগ করা হচ্ছে। মূলত গ্যাসের দাম বাড়াতেই করা হচ্ছে এ সংশোধন।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন-পেট্রোবাংলার দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, বর্তমান পিএসসিতে গভীর সমুদ্রে প্রতি ইউনিট সোয়া সাত ডলার ও অগভীর সমুদ্রে গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে সাড়ে পাঁচ ডলার। বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) প্রতি ইউনিটের দাম ৩৫ ডলার ছাড়িয়েছে। তাই বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে।

পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাসের দাম দুই থেকে তিন ডলার বাড়ানো হতে পারে। গভীর সমুদ্রের মতো অগভীর সমুদ্রেও গ্যাস রপ্তানির সুযোগ রাখার বিষয়টি বিবেচনায় আসতে পারে। বর্তমান পিএসসিতে গভীর সমুদ্রে কোম্পানির জন্য করপোরেট কর না থাকলেও অগভীর সমুদ্রে আছে, এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হবে। সরকার ও বহুজাতিক কোম্পানির মধ্যে গ্যাস বিক্রির মুনাফা ভাগাভাগি নিয়েও সংশোধন আসার সম্ভাবনা আছে।

জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, পেট্রোবাংলার গাফিলতির কারণে পিএসসি সংশোধনে দেরি হয়ে গেছে। পিএসসি-২০১৯ করা হয়েছিল মহামারি শুরুর আগে। করোনা জ্বালানি খাতের বৈশ্বিক পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানি বিনিয়োগের বিষয়ে এখন অনেক সতর্ক। অগভীর সমুদ্রে কিছুটা আগ্রহ দেখালেও গভীর সমুদ্রে কেউ আসতে চায় না। অগভীর সমুদ্রে একটি অনুসন্ধান কূপ খনন করতে চার কোটি ডলার লাগলেও গভীর সমুদ্রে খরচ পড়ে ৯ কোটি ডলারের মতো।

পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, পিএসসি-২০১২–এর আওতায় একাধিকবার দরপত্র আহ্বান করেও উল্লেখযোগ্য সাড়া পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত তিনটি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হলেও দুটিই কাজ শেষ না করেই চলে গেছে। এরপর গ্যাসের দাম বাড়িয়ে পিএসসি-২০১৯ তৈরি করা হয়। গত বছরের শুরুতে দরপত্র আহ্বানের কথা থাকলেও মহামারি পরিস্থিতির কারণে পিছিয়ে যায়। এরপর অন্তত ১০টি বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে দফায় দফায় অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। তারা গ্যাসের দাম আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে পিএসসি সংশোধনের নির্দেশনা দেয় জ্বালানি বিভাগ। প্রায় ১০ মাসের মাথায় এখন এটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন এ বিষয়ে পরামর্শক নিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। পরামর্শক নিয়োগের দরপত্র পেট্রোবাংলার পরবর্তী বোর্ড সভায় অনুমোদন হতে পারে।

জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) শাহীনুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশি কোম্পানির আগ্রহ বাড়াতেই এটি করা হচ্ছে। বোর্ডের অনুমোদনের পর পরামর্শক নিয়োগের আগ্রহপত্র আহ্বান হবে। এরপর বৈশ্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের সুপারিশ জমা দেবে। এর আগে সংশোধনের বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।

পেট্রোবাংলার সর্বশেষ মানচিত্র বলছে, বঙ্গোপসাগরে সব মিলে ব্লক আছে ২৬টি। এর মধ্যে অগভীর সমুদ্রে ১১টি আর গভীর সমুদ্রে ১৫টি। গভীর সমুদ্রে এখন কোনো কাজ চলছে না। সব মিলে ২৪টি ব্লক খালি পড়ে আছে। সমুদ্রে দেশের একমাত্র গ্যাসক্ষেত্র সাঙ্গু থেকে ১৯৯৬ সালে উৎপাদন শুরু হয়েছিল। এরপর গ্যাস কমে যাওয়ায় ২০১৩ সালে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে অগভীর সমুদ্রে দুটি ব্লকে কাজ করা ভারতীয় কোম্পানি ‘ওনজিসি ভিদেশ’ সম্প্রতি একটি অনুসন্ধান কূপ খননের কাজ শুরু করেছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের ভিত্তিতে আগেই দাম বাড়ানোর বিষয়টি সাজানো নাটক মনে হচ্ছে। বর্তমান পিএসসি অনুসারে দরপত্র ডাকা হোক, না হলে তো আগ্রহের বিষয়টি জানা যাবে না। এভাবে তো প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র হবে না।