বিপন্ন মানবতার ডাকে হাত বাড়িয়েছি: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিএসসিএসসির কোর্স সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি। ঢাকা, ২৮ জানুয়ারি।
ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অভ্যন্তরীণ সম্পদসহ নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা বিপন্ন মানবতার ডাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছি। মিয়ানমার থেকে ১০ লাখের অধিক রোহিঙ্গা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি।’


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) কোর্স সমাপনী (২০২০-২১) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সের অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ডিএসসিএসসির কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. জুবায়ের সালেহীন স্বাগত বক্তৃতা করেন।


অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের কমান্ড্যান্ট প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সনদ প্রদান করেন। এ কোর্সে ১৬টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ৪৩ জন বিদেশি কর্মকর্তা এবং ১০ নারী কর্মকর্তাসহ ২২৫ জন সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ শেষ করে এদিন পিএসসি অর্জন করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৩টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ১ হাজার ২০৮ জন কর্মকর্তা এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের আশ্রয়দান এবং নিজ দেশে টেকসই প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টার সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। কেননা, এ জন্য আমরা কোনো দেশের সাথে কোনো দ্বন্দ্বে লিপ্ত হইনি।’


শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এ জন্য বন্ধুত্বসুলভ একটা মনোভাব নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘যারা অন্যায় করেছে, নিশ্চয়ই আমরা সেটা বলব এবং তাদের নাগরিকদের তারা ফেরত নেবে, সেটাই আমরা চাই।’


বঙ্গবন্ধুর করে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতির অনুশীলনে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থান, রোহিঙ্গা সমস্যা, দেশে নারীর ক্ষমতায়নসহ অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখায় তাঁর সরকারের ভূমিকাও ভাষণে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়”—এ নীতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা আন্তরাষ্ট্রীয় সুসম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিতে সর্বদা সচেষ্ট। আজ বাংলাদেশের সঙ্গে সকল দেশের একটা সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ঐক্য উন্নয়নে বাংলাদেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও গৌরবময় ভূমিকা রাখছে।’


মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ডিএসসিএসসির গ্র্যাজুয়েটরা সেই ২০৪১-এর উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক হবেন। তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, এই দেশ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন করেছি এবং এই দেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাই।’


প্রধানমন্ত্রী সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ আপনাদের জীবনের একটি বিশেষ দিন। এ দিনটির জন্য দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস আপনাদের কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় করতে হয়েছে। আপনারা সমরবিজ্ঞান এবং সাম্প্রতিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের ওপর উচ্চতর জ্ঞান লাভ করেছেন।’ তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, পৃথিবীটা এখন গ্লোবাল ভিলেজ। কোনো দেশ এককভাবে চলতে পারে না। সবাইকে নিয়েই চলতে হয়। এ জন্য জ্ঞানের পরিধিটাও অনেক বিস্তৃত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসের কারণে সাম্প্রতিক কালের বৈশ্বিক স্থবিরতার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘নানা প্রতিকূলতা ও ঝুঁকিসহ কোভিড-১৯ মহামারির মধ্য দিয়ে আমরা নতুন বছর ২০২১-এ পদার্পণ করেছি। করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব যখন স্তিমিত, তখন দেশের মানুষের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি আমরা দেশের অর্থনীতিসহ সকল উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সমর্থ হয়েছি।’
নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জনগণের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনসহ সব ক্ষেত্রে তাঁর সরকার ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় রেখে চলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের এ যুগে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছি।’ এ সময় তিনি বলেন, এ কারণেই করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে ঘরে আটকা থাকলেও তিনি এ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরেছেন।


তাঁর সরকারের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপনের পাশাপাশি আগামী বছরের ২৬ মার্চ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন শুরুর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুজিব বর্ষে আমাদের অঙ্গীকার বাংলাদেশের একটি মানুষও আর গৃহহারা, ভূমিহীন থাকবে না। প্রতিটি মানুষেরই একটা ঠিকানা হবে এবং প্রতিটি ঘরেই বিদ্যুতের আলো জ্বলবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিটি গ্রামই একেকটি শহরে রূপান্তরিত হবে। সেভাবেই বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, এটা কোনো কঠিন কাজ নয়। এটা করা সম্ভব। হয়তো চিরদিন থাকব না, কিন্তু পরিকল্পনাটা দিয়ে যাচ্ছি।’