শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে বিআরটিসি বাসের ভাড়া ৫০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ১ ডিসেম্বর থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। শিগগিরই এ বিষয়ে বিআরটিসি প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
বেসরকারি মালিকানাধীন বাস-মিনিবাসের বিষয়ে মন্ত্রী বলেছেন, আজ শনিবার বিআরটিএতে এ বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হবে।
যদিও গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস চালুর বিষয়ে বাসমালিকদের রাজি করাতে পারেনি সরকার। শিক্ষার্থীদের জন্য শুধু বিআরটিসির বাসের ভাড়া কমালে খুব একটা লাভ হবে কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, বেসরকারি বাসের সংখ্যার তুলনায় বিআরটিসির বাসের সংখ্যা নগণ্য। তাই বেসরকারি বাস-মিনিবাসের ভাড়াই কমাতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষার্থীদের জন্য দেশে দেশে ভাড়ায় বিশেষ ছাড় রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন শহর এবং শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে শিক্ষার্থীদের গণপরিবহনের ভাড়ায় বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার ‘শিক্ষার্থীদের জন্য দেশে দেশে ভাড়ায় ছাড়’ শিরোনামে প্রথম আলো ৫ নম্বর পাতায় বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
বাসসের খবরে বলা হয়, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল শুক্রবার তাঁর সরকারি বাসভবনে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার জনগণের সরকার। জনঘনিষ্ঠ ও যৌক্তিক কোনো দাবিতে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে বিআরটিসি বাসের ভাড়া ৫০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ সিদ্ধান্ত আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে বলে জানান তিনি।
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, বিআরটিসি বাসে ভ্রমণকালে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছবিযুক্ত বৈধ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। প্রয়োজনে তা প্রদর্শন করতে হবে। সকাল সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত বিআরটিসি বাসে চলাচলের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা এ সুবিধা পাবেন। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দিনে এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বেসরকারি মালিকানাধীন বাস-মিনিবাসে চলাচলে শিক্ষার্থীদের ভাড়া কমানোর বিষয়টি আলোচনার জন্য আজ শনিবার বিআরটিএতে পরিবহনমালিক, শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হবে। সামাজিক দায়বদ্ধতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংবেদনশীল থেকে পরিবহনমালিকেরা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শুধু বিআরটিসির ভাড়া কমিয়ে খুব একটা লাভ হবে না। কারণ, বিআরটিসির তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট পর্যন্ত দেশজুড়ে তাদের মোট বাসের সংখ্যা ১ হাজার ৬৫০টি। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ২৫১টি, অচল ৩৯৯টি। এর মধ্যে অনেক বাস আবার ব্যাংক, হাসপাতাল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাড়ায় চালানো হয়। সেখানে বাস মালিকপক্ষের তথ্যমতে, সারা দেশে বেসরকারি যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস চলে প্রায় এক লাখ। বিআরটিএর তথ্য বলছে, দেশে নিবন্ধিত বাসা-মিনিবাসের সংখ্যা ৭৬ হাজার ৫৮৫। শুধু ঢাকা ও আশপাশে বিআরটিসির বাস চলে প্রায় ৭০০। সেখানে বেসরকারি বাস-মিনিবাস চলে প্রায় ৭ হাজার।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বেসরকারি বাস-মিনিবাসের তুলনায় বিআরটিসির বাস এতই কম যে শুধু বিআরটিসি বাসের ভাড়া কমালে শিক্ষার্থীরা এর সুফল পাবেন না। দেশে দেশে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ছাড় রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সব গণপরিবহনেই শিক্ষার্থীদের জন্য এ বিশেষ ছাড় নিশ্চিত করতে হবে।