‘ব্র্যাক মাস্ক দিয়েছে, এখন থেকে নিয়মিত পরব’

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার কোমারপুষ্কুরনী গ্রামের নারীদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করছেন ব্র্যাকের এক কর্মী। ১ আগস্ট দুপুরে।
এম সাদেক

করোনাকালে স্বাস্থ্যসচেতনতায় কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের কর্মীরা। তাঁরা গ্রামে গ্রামে বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণ, প্রসূতিদের সেবা ও টেলিমেডিসিন সেবা দিচ্ছেন। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ করোনাকালে বাড়িতে বসেই স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন।

ব্র্যাক সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটির স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির অধীনে করোনা প্রতিরোধে তিন মাসব্যাপী নেওয়া কর্মসূচির আওতায় এ কার্যক্রম চলছে। ‘করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দুর্গ’ নামে গত জুন থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলায় এ প্রকল্পের আওতায় কাজ করছেন ২০৬ স্বাস্থ্যকর্মী। তাঁদের সঙ্গে ১০ জন করে নার্সসহ ২ হাজার ৬০ কর্মী কর্মসূচিতে যুক্ত আছেন। এ ছাড়া ৩০ কর্মসূচি সহকারী ও ৩৭ কমিউনিটি মবিলাইজার, ৬০ হটস্পট মবিলাইজার ও ৪২ জন প্রমোটর রয়েছেন।

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচি এলাকা ব্যবস্থাপক মো. আসলাম হোসাইন বলেন, ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিটি ইউনিয়নে ৩০টি পরিবার পরিদর্শন করেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে কোনো সমস্যা থাকলে ব্র্যাকের চিকিৎসকদের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রতিটি পরিবারকে দুটি করে মাস্ক দেওয়া হয়। প্রতিটি মাস্ক ধুয়ে অন্তত ১৫ বার পরা যায়। জনসাধারণকে টিকা নেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করছেন ব্র্যাকের কর্মীরা। প্রয়োজনে তাঁদের টিকার নিবন্ধনও করে দেওয়া হচ্ছে।

গত ১৬ জুন দুপুরে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের শরীফপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে ব্র্যাকের উদ্যোগে ‘করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠান হয়। এতে জেলা সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন ও আদর্শ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শামসাদ রাব্বানী উপস্থিত ছিলেন। সিভিল সার্জন ব্র্যাকের জনসচেতনতা কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

পাঁচথুবী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন বাহালুল বলেন, ব্র্যাকের কর্মীরা ইউনিয়নে জনসচেতনতামূলক কাজ করেছেন। মাস্ক বিতরণ করেছেন। এতে মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে।

১ আগস্ট দুপুরে উপজেলার কোমারপুষ্করিণী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ব্র্যাকের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি মাস্ক দিচ্ছেন। মাস্ক পরার নিয়মও শিখিয়ে দিচ্ছেন। সেখানে কথা হয় রাবেয়া বেগম (১৯), জয়নব বেগম (৪৮), কুলসুম বেগম (৫০), রৌশন আরা (৫৫) ও জাহানারা বেগমের (৬০) সঙ্গে। তাঁরা বলেন, করোনাকালে গ্রামে কেউ এভাবে মাস্ক পরতে বলেননি। ব্র্যাকই প্রথম সেটি বলল। একই সঙ্গে মাস্কও দিল।

কালিরবাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে পরিবহনশ্রমিক, বাজারের ব্যবসায়ী, কর্মচারী যাঁদের মুখে মাস্ক নেই; তাঁদের মাস্ক দেওয়া হচ্ছে। সিএনজিচালক আবদুল হাই বলেন, ‘যাত্রীরা মাস্ক পরার জন্য বলত। আমি পরতাম না। আজ ব্র্যাক আমাকে মাস্ক দিয়েছে। আমি এখন থেকে নিয়মিত মাস্ক পরব।’

ব্র্যাকের এলাকা ব্যবস্থাপক মো. আসলাম হোসাইন বলেন, করোনাকালে কেবল আদর্শ সদর উপজেলায় এ পর্যন্ত ২ লাখ ২ হাজার ৮০০ জনকে মাস্ক দেওয়া হয়েছে। সচেতন করা হয়েছে অন্তত তিন লাখ লোককে। এ ছাড়া পুরো জেলার অন্তত ২৫ লাখ লোককে তাঁরা সচেতন করতে পেরেছেন। জেলায় ৮ লাখ ৯৭ হাজার ৭২০ জনকে মাস্ক দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির পরিচালক মোর্শেদা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ভারতে করোনার ডেলটা ধরনের সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকলে জনস্বাস্থ্যবিদেরা আশঙ্কা করলেন যে এই ধরন খুব দ্রুত দেশে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ও পূর্ব–অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সিএসও অ্যালায়েন্সের (এনজিও এবং নাগরিক সংগঠনের জোট) সঙ্গে ‘করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দুর্গ’ কর্মসূচিটি হাতে নেওয়া হয়। কর্মসূচিতে ৪১টি এনজিও অংশ নিচ্ছে। সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, এসকেএস ফাউন্ডেশন, দুঃস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ওয়াটার এইড বাংলাদেশ এবং ব্র্যাক।