ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে মারা যাওয়া ১০৪ শিশুর প্রত্যেক পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই শিশুদের মধ্যে ১৯৯১ সালে মারা যায় ৭৬টি এবং ২০০৯ সালে ২৮টি।
এক যুগ আগে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক–আল–জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
শিশুদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই অর্থ দিতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছ থেকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর আদায় করবে বলে রায়ে এসেছে। রায়ে ভেজাল ওষুধসংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(সি) ধারা অনুসারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনে ১৯৯১ সালে ৭৬ শিশুর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে ওষুধে ভেজাল রোধে ও দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে ২০১০ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইআরপিবি) পক্ষে একটি রিট করা হয়। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৩ নভেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।
এরপর ২০০৯ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত রিড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনে সারা দেশে ২৮টি শিশু মারা যায়। এই শিশু মৃত্যুর ঘটনায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক মো. শফিকুল ইসলাম ঢাকার ড্রাগ আদালতে ওষুধ কোম্পানিটির মালিকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলায় ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর আদালত রিড ফার্মাসিউটিক্যালসের মালিকসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে বেকসুর খালাস দেন। পাশাপাশি রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর মামলাটি করার ক্ষেত্রে ১৯৮০ সালের ড্রাগ আইন যথাযথভাবে অনুসরণ করেনি।
মামলায় যথাযথভাবে আলামত জব্দ করা, তা রাসায়নিক পরীক্ষাগারে প্রেরণ এবং রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন আসামিদের দেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে ড্রাগ আইনের ২৩, ২৫ ধারা প্রতিপালন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে তৎকালীন ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক শফিকুল ইসলাম ও আলতাফ হোসেন চরম অবহেলা, অযোগ্যতা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
এ অভিমতের পর ওই দুই কর্মকর্তার দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার বৈধতা নিয়ে ২০১৬ সালে সম্পূরক আবেদন করে এইচআরপিবি। এর শুনানি নিয়ে সম্পূরক রুলসহ দুই কর্মকর্তার বিষয়ে আদেশ দেওয়া হয়। রুল ও সম্পূরক রুলের ওপর শুনানি শেষে আজ রায় দেওয়া হলো।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রিপন বাড়ৈ। শফিকুল ইসলাম ও আলতাফ হোসেনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী সাইফুদ্দিন খোকন।
ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিষ্ক্রিয়তা অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন বলে জানান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভেজাল ওষুধের কারণে শিশুমৃত্যুর দায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এড়াতে পারে না বলে পর্যবেক্ষণে এসেছে। ভেজাল ওষুধ রোধ ও নিয়ন্ত্রণে আদালতে এইচআরপিবির দাখিল করা ৩১টি সুপারিশ সরকারকে বিবেচনা করতে বলেছেন আদালত। ড্রাগ আদালতের রায়ে খালাস পাওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল বিচারাধীন থাকায় ওই দুই কর্মকর্তার বিষয়ে হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত না দিয়ে সম্পূরক রুল খারিজ করে দিয়েছেন।
দুই কর্মকর্তার আইনজীবী সাইফুদ্দিন খোকন প্রথম আলোকে বলেন, দুই কর্মকর্তার বিষয়ে দেওয়া রুল খারিজ হয়েছে। ফলে তাঁদের স্বপদে চাকরি চালিয়ে যেতে বাধা নেই।