জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দীপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের একাংশের মতবিনিময় সভায় আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে দলীয় কোন্দল আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গতকাল সোমবার ‘জয়পুরহাট জেলার সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ বিরোধ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
সভায় উপস্থিত নেতা-কর্মীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক এস এম সোলায়মান আলীকে আর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান না বলে জানিয়েছেন। তাঁরা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জয়পুরহাট-২ (আক্কেলপুর-কালাই-ক্ষেতলাল) আসনের সাংসদ আবু সাঈদ আল মাহমুদের কাছে আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে সোলায়মান আলীর পরিবর্তে একজন সৎ, যোগ্য ও চরিত্রবান লোককে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী করার আহ্বান জানান।
সাংসদ আবু সাঈদ এ মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও গুম্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোল্লা সামশুল আলম। সাংসদ আবু সাঈদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রুকিন্দীপুর ইউপির চেয়ারম্যান আহসান কবীর এ সভার আয়োজন করেন। সভায় জেলার ৩২টি ইউপির চেয়ারম্যান ও মেম্বার, পাঁচটি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ছিলেন। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়পুরহাট-১ (জয়পুরহাট সদর-পাঁচবিবি) আসনের সাংসদ সামছুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা পরিষদ প্রশাসক সোলায়মান আলী ছিলেন না। পরে প্রায় আড়াই হাজার লোককে দুপুরের ভূরিভোজ করানো হয়।
মতবিনিময় সভায় যোগ দেওয়া জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জয়পুরহাট জেলা সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হলেও বক্তারা ঘুরেফিরে সোলায়মান আলীর বিরুদ্ধাচরণ করেন। সভায় সোলায়মান আলীর শাসনামলে জেলা পরিষদের অনিয়ম-দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্তেরও দাবি করা হয়। আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জেলা পরিষদ নির্বাচনে সোলায়মান আলীকে বাদ দিয়ে সৎ ও যোগ্য অপর কোনো ব্যক্তিকে দলীয় প্রার্থী করার দাবি জানানো হয়।
আলমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুজ্জামান নাদিম বলেন, ‘জেলা পরিষদ অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে সৎ, যোগ্য ও চরিত্রবান ব্যক্তিকে প্রার্থী করতে হবে। আমরা তাঁকে ভোট দেব।’
পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সোলায়মান আলী জেলা পরিষদের প্রশাসক হওয়ার পর পরিষদের আওতাধীন বিভিন্ন সড়কের গাছ লুট হয়ে গেছে। আমার কোনো গাছখেকোকে জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে চাই না।’
কালাই পৌর মেয়র খন্দকার হালিমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কোনো দুর্নীতিবাজকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাই না। আপনি (সাংসদ আবু সাঈদ) একজন সৎ যোগ্য ও চরিত্রবান প্রার্থী দেবেন। আপনার ইশারায় আমরা তাঁকে জয়লাভ করে আনব।’
সাংসদ আবু সাঈদ আল মাহমুদ বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোরদের বিপক্ষে অতীতেও ছিলাম, এখনো আছি। আমি উন্নয়ন ও সুশাসনের পক্ষে। আপনাদের দাবির কথা দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের জানাব।’