মতলবে বিধি না মানায় ১৯ সমিতির নিবন্ধন বাতিল
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের অধীন বেশির ভাগ সমিতি সমবায়বিধি মানছে না। জমা দিচ্ছে না বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব। অনেকগুলো সমিতির বৈধ কমিটিও নেই। এসব অভিযোগে গত এক বছরে ১৯টি সমিতির নিবন্ধন বাতিল করেছে সমবায় কার্যালয়।
উপজেলা সমবায় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মতলব দক্ষিণে নিবন্ধন করা সমবায় সমিতির সংখ্যা ৮৭টি। সমবায়বিধি অমান্য করায় উপজেলা সমবায় কার্যালয় গত বছরের নভেম্বরে ১৪টি সমিতির এবং চলতি মাসে আরও পাঁচটি সমিতির নিবন্ধন বাতিল করেছে। নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে আরও ১৭টি সমিতিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, অধিকাংশ সমিতির যাচ্ছেতাই অবস্থা। সমিতির লোকেরা বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব দেন না। নিরীক্ষার সময় সমিতির কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান। এখন যে ৫০টি সমিতির নিবন্ধন রয়েছে সেগুলোরও তেমন কার্যক্রম নেই।
নিবন্ধন বাতিল করা সমিতিগুলো হলো সূর্যমুখী মহিলা , ঘিলাতলী রুই মহিলা, নারায়ণপুর গোমতী মহিলা, বাড়ৈগাঁও মহিলা, সচেতন মহিলা, বোয়ালিয়া বহুমুখী, নাগদা ফ্রেন্ডশিপ বহুমুখী, পল্লিমঙ্গল বহুমুখী, ওয়াল সিটি বহুমুখী, পূর্ব বাড়ৈগাঁও যুব, মতলব ইহসান সঞ্চয় ও ঋণদান, উত্তরণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, গরিব-দুঃখী সঞ্চয় ও ঋণদান, জনতা বহুমুখী, নারায়ণপুর ইউনিয়ন যুব, স্কাই সোলার কনজ্যুমারস, মতলব ইকরা সঞ্চয় ও ঋণদান, স্বিপ্নল সঞ্চয় ও ঋণদান, মতলব শতরূপা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড।
নিবন্ধন বাতিল হওয়া বাড়ৈগাঁও গ্রামের গরিব-দুঃখী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের পরিচালক মাহবুব আলী বলেন, তাঁর সমিতির অধিকাংশ সদস্য আমানতের টাকা নিয়ে গেছেন। এ জন্য গত তিন-চার বছর নিরীক্ষা করানো হয়নি। আয়-ব্যয়ের হিসাবও সমবায় কার্যালয়ে দেওয়া হয়নি। বৈধ কমিটিও নেই। এ কারণে কর্তৃপক্ষ নিবন্ধন বাতিল করেছে।
উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক সঞ্জয় চন্দ্র মজুমদার বলেন, প্রতিটি সমিতির বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব ও বৈধ কমিটির তালিকা জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। প্রতিবছর সমিতিকে নিরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। নিরীক্ষা ফি হিসাবে সরকারকে লাভের ১০ শতাংশ দিতে হয়। পরপর দুই বছর নিরীক্ষার মুখোমুখি না হলে ওই সমিতির নিবন্ধন বাতিল হয়। নিবন্ধন বাতিল হওয়া ১৯ সমিতি এসব শর্ত মানেনি।
সহকারী পরিদর্শক আরও বলেন, সমিতির সংখ্যা কমায় এবং লভ্যাংশের টাকা ঠিকমতো জমা না দেওয়ায় রাজস্ব খাতে জমা টাকার পরিমাণও কমে গেছে। এসব সমিতি থেকে ২০১২ সালে রাজস্ব খাতে জমা হয় ৫৭ হাজার ৩৪০ টাকা। ২০১৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৩১ হাজার ৩৬৭ টাকায়। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে জমার পরিমাণ আরও কমবে। দু-একটি সমিতির কর্মকর্তারা সদস্যদের আমানতের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গত বছর নারায়ণপুর রূপালী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানতের ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
উপজেলার বাড়ৈগাঁও পেয়ারা মহিলা সমবায় সমিতির সদস্য রেহানা আক্তার বলেন, ‘সমিতিতে যেই টেয়া দিছিলাম হেইডা নিয়া আইছি। এহন সমিতি আর নাই।’