মানবতাবিরোধী অপরাধ: সুবহানের রায় যেকোনো দিন

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুহাম্মদ আবদুস সুবহানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় যেকোনো দিন ঘোষণা করা হতে পারে।

আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি তুরিন আফরোজ শেষ দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন করেন।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সুবহানের বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি মানবতাবিরোধী অপরাধের নয়টি অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।

অভিযোগ গঠনের আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, একাত্তরের ১৭ এপ্রিল সুবহানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানি সেনা ও স্থানীয় রাজাকারেরা পাবনার ঈশ্বরদী পৌরসভার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে তিন ব্যক্তিকে অপহরণ করে ঈশ্বরদী রেলওয়ের কয়লার ডিপোতে নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন করে। পরদিন ১৮ এপ্রিল তাঁদের হত্যা করা হয়। ১৩ এপ্রিল তাঁর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনারা ঈশ্বরদী থানার পাকশী ইউনিয়নের যুক্তিতলা গ্রাম ও সংলগ্ন কয়েকটি বাড়িঘরে লুটপাটের পর আগুন দেয় এবং হত্যাযজ্ঞ চালায়। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে এবং মে মাসের ১৬ থেকে ১৯ তারিখের মধ্যে ঈশ্বরদীর অরণখোলা গ্রামে লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এই অপরাধে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সুবহান জড়িত ছিলেন।

সুবহানের বিরুদ্ধে গঠন করা চতুর্থ ও পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২ মে ফজরের নামাজের পর ঈশ্বরদী থানার সাহাপুর গ্রামে পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক লুণ্ঠন ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। ১১ মে পাবনা সদর থানার দোগাছি গ্রামের হরিপদ সাহার বাড়ি, দোগাছি বাজার, চাঁদ আলী প্রামাণিকের বাড়ি ও কুলুনিয়া গ্রামে হত্যাযজ্ঞ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব অপরাধের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের পাশাপাশি সুবহানের সংশ্লিষ্টতা ছিল।

ষষ্ঠ অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের ১২ মে ভোর ছয়টা থেকে সুবহানের নেতৃত্বাধীন রাজাকারেরা ও পাকিস্তানি সেনারা পাবনার সুজানগর থানার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের মোমরাজপুর গ্রাম, কুড়িপাড়া প্রাথমিক স্কুলের সামনের রাস্তা, ফকিৎপুর গ্রাম, কন্দর্পপুর গ্রামের কাছে পদ্মা নদীর পাড় ও গুপিনপুর গ্রামের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর অভিযান চালায়। ওই অভিযানে প্রায় ৪০০ লোক গণহত্যার শিকার হন। অভিযানে এসব এলাকায় ব্যাপক লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চলে।
অভিযোগ গঠনের আদেশে আরও বলা হয়, একাত্তরের ২০ মে পাবনা সদর থানার ভাড়ারা গ্রামের হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সুবহান জড়িত ছিলেন। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের কোনো একদিন পাবনার আতাইকুলা থানার দুবলিয়া বাজারের গোবিন্দের চায়ের দোকান থেকে কলিমউদ্দিন খাঁসহ দুজনকে অপহরণের পর নির্যাতন ও হত্যা করা হয়। ৩০ অক্টোবর ঈশ্বরদী থানার বেতবাড়িয়া গ্রামের সফিউদ্দিন প্রামাণিকের বাড়ি, রামনাথপুর গ্রামের সাবেদ আলীর বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে পাকিস্তানি সেনরা। এসব অপরাধের সঙ্গে সুবহানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পাবনার একটি ফৌজদারি মামলায় সুবহানকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করলে ২৩ সেপ্টেম্বর তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক দেখানো হয়। ওই সময় থেকে তিনি কারাগারে আটক আছেন।