মামলায় জর্জরিত বিদ্যালয়

নয়টি মামলা চলমান থাকায় যশোরের দানবীর হাজী মো. মহসীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ঠিকমতো চলছে না। মামলার কারণে শিক্ষক নিয়োগ করা যাচ্ছে না। আটকে আছে অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ। জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে যাবতীয় কার্যক্রম।
বিদ্যালয়টির জমির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় লোকজন সাতটি, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে আরেকজন আরেকটি ও বিদ্যালয়ের সম্পত্তি ফিরিয়ে দিতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারকে বিবাদী করে আরেকটি মামলা করে। ১৯৮৪ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে মামলাগুলো লিপিবদ্ধ হয়।
বিদ্যালয়ের পক্ষে মামলাগুলো পরিচালনার দায়িত্বে থাকা যশোর আদালতের আইনজীবী এস এম আবদুল ছাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, নয়টি মামলার মধ্যে আটটির বাদী স্থানীয় লোকজন। তাঁরা মামলা নিষ্পত্তির ব্যাপারে মোটেও আন্তরিক নন। মামলার ধার্য করা তারিখের বেশির ভাগ দিনে বাদীপক্ষের লোকজন আদালতে হাজির থাকেন না। তখন আদালত পরবর্তী দিন ধার্য করেন। বিদ্যালয়কে বিবাদী করে দায়ের করা ১৯৮৪ সালের প্রথম মামলায় এখনো সমনই জারি হয়নি।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক সূত্র জানায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে যশোর সদর উপজেলার মুড়লি মোড়ে ৫ একর ১১ শতাংশ জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। বিদ্যালয়ের বিশাল সীমানা অরক্ষিত। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিদ্যালয়ের জমি দখলের চেষ্টা করছেন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত জেলা প্রশাসক সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। এ কারণে এত দিন কেউ বিদ্যালয়ের জমি দখলের সাহস দেখাননি। কিন্তু এখন রাজনৈতিক বিবেচনায় সভাপতি হওয়ায় প্রভাবশালীরা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ২০১৩ সালের জুন মাসে স্থানীয় আবুল খায়ের ও তাঁর পরিবারের লোকজন বিদ্যালয়ের ১১০ শতাংশ জমি দখল করে রাতারাতি স্থাপনা নির্মাণ করেন। পরদিন সকালে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও স্থানীয় লোকজন ওই স্থাপনা উচ্ছেদ করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাজমুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার ভারে বিদ্যালয়টি নুয়ে পড়েছে। আমরা শিক্ষক ও কর্মচারীরা বিপাকে পড়েছি। শিক্ষক ও আর্থিক সংকটের কারণে বিদ্যালয়টি শেষ হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বেতন ও একটি পুকুর ইজারার টাকা ছাড়া আয়ের তেমন কোনো উৎস নেই। তার ওপর মামলা চালাতে বাড়তি খরচ হচ্ছে।’
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০০০ সালে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির ওপর আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। সেই থেকে শূন্য পদে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া যায়নি। এখন শিক্ষকের নয়টি পদ শূন্য রয়েছে। খণ্ডকালীন সাতজন শিক্ষক রয়েছেন। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। মামলাগুলো বিচারাধীন বলে কর্মকর্তাদের কেউ বিষয়টি আমলে নেননি।
১৯৭৪ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আখতার আলীর উদ্যোগে মহসীন ট্রাস্টের টাকায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, ছায়া সুনিবিড় বিদ্যালয়ের চারপাশের সীমানা অরক্ষিত। দুটি ভবনের সামনে একটি বিরাট পুকুর রয়েছে। খালি জায়গায় রয়েছে বিদ্যালয়ের গাছপালা। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য একটি বড় মাঠ আছে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাহমিনা সুলতানা বলেন, ‘ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত রুটিন অনুযায়ী সপ্তাহে ৪৫টি করে ক্লাস রয়েছে। নির্দিষ্ট শিক্ষকের মধ্যে নয়জন নেই। এ কারণে আমাদের ওপর খুব চাপ পড়ে। প্রতিদিনই অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হচ্ছে। খণ্ডকালীন শিক্ষকেরা খুব বেশি যোগ্য নন। ফলে বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক ও বিজ্ঞানের মতো জটিল বিষয়গুলোর পাঠদান করতে হয় হাতেগোনা দু-তিনজন শিক্ষককে। তারপরও শিক্ষার মান ধরে রাখা যাচ্ছে না।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল হাসান বলেন, সীমানা-সংক্রান্ত মামলার কারণে বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন আটকে গেছে। আর ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে মামলার কারণে নিয়োগ-প্রক্রিয়া থমকে গেছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন বলেন, ‘ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে মামলা থাকায় নিয়োগের বিষয়ে আমরা কিছু করতে পারি না। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে বিশেষ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।’