বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার ৪৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতির পাঠদানের অন্তর্ভুক্ত। এসব প্রতিষ্ঠানে এ পদ্ধতিতে প্রতিদিন অন্তত ছয়টি বিষয়ে পড়ানো (ক্লাস) বাধ্যতামূলক। তবে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ পদ্ধতিতে ক্লাস হচ্ছে না।
মূলত দক্ষ শিক্ষক না থাকায় মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে ক্লাস নেওয়াসম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া কারিগরি ত্রুটি ও লোডশেডিংও এই কার্যক্রমে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকেরা।
এ পদ্ধতিতে কয়েকটি মাধ্যম যেমন ল্যাপটপ, ইন্টারনেট মডেম, প্রজেক্টর, প্রজেক্টর স্ক্রিন ও সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট বিষয় শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা হয়। ছবি, গ্রাফিকস প্রভৃতি ব্যবহারের মাধ্যমে বিষয়টি সুন্দর করে উপস্থাপন করা হয় বলে শিক্ষার্থীরা সহজ বুঝতে পারে।
আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই উপজেলায় কলেজ, মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় আর মাদ্রাসা রয়েছে ৯০টি। ‘এটুআই’ প্রকল্পের অধীন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ৪৬টি প্রতিষ্ঠানকে মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতির পাঠদানের আওতায় আনা হয়। এর ৫টি কলেজ, ২৪টি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১৬টি মাদ্রাসা। ২০১৩ সালে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ, ইন্টারনেট মডেম, প্রজেক্টর, প্রজেক্টর স্ক্রিন, সাউন্ড সিস্টেমসহ বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতির পাঠদান সক্রিয় রাখার জন্য জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় আবার পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট মনিটরিং কমিটি রয়েছে। এ কমিটির আহ্বায়ক সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সদস্যসচিব উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ পদ্ধতিতে ছয়টি ক্লাস নেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে তা মানা হচ্ছে না। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দু-একটি ক্লাস নেওয়া হয়। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে তো মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে কোনো ক্লাসই নেওয়া হয় না। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তিতে (আইসিটি) দক্ষ শিক্ষক নেই। মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে পাঠদানের জন্য শিক্ষকদের ১৪ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্বল্পমেয়াদি এ প্রশিক্ষণে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে কনটেন্ট ও স্লাইড তৈরি করে শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপনের জন্য যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করা যায় না। ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে মাল্টিমিডিয়া পাঠদান পদ্ধতি।
মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে পাঠদান শেষে প্রতিদিন অনলাইনে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন শিক্ষক বলেন, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এই পদ্ধতিতে পাঠদান না করেই অনলাইনে প্রতিদিন ভুয়া (এমএমসি) প্রতিবেদন দাখিল করেন। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বরগুনা জেলায় ২৪১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গড়ে এই পদ্ধতিতে ৪৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ ক্লাস হয়েছে।
আমতলী উপজেলার মোহাম্মদপুর দাখিল মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম ব্যবহার করে মাঝেমধ্যে তাদের একটি-দুটি ক্লাস হয়। এ মাদ্রাসার সুপার মো. আবু তাহের বলেন, চার মাস ধরে প্রজেক্টর নষ্ট। এ জন্য মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে ক্লাস হচ্ছে না।
একই পরিস্থিতি আমতলীর চুনাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘দক্ষ শিক্ষকের অভাবে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে পাঠদান করাতে পারছি না।’
তালতলী উপজেলার লাউপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম হায়দার বলেন, ‘প্রতিদিন দুটির বেশি বিষয়ে ক্লাস নিতে পারছি না। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্লাস নিতে দক্ষ শিক্ষক এবং বিদ্যুতের প্রয়োজন। যেদিন বিদ্যুৎ থাকে না, সেদিন এই পদ্ধতি ব্যবহার করে পাঠদান করাতে পারি না।’
আমতলীর মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়ায় কারিগরি ত্রুটি থাকায় ক্লাস নিতে সমস্যা হচ্ছে।
আমতলী উপজেলা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক ইউএনও মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’