মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সিন্ডিকেট চান না ব্যবসায়ীরা
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে গত ডিসেম্বরে। এখন পর্যন্ত কর্মী পাঠানো শুরু হয়নি। কিছু রিক্রুটিং এজেন্সির চক্র (সিন্ডিকেট) তৈরির অপচেষ্টার জন্য এটি আটকে আছে। চক্র তৈরি হলে আগের মতোই বেশি খরচে বিদেশে যেতে হবে কর্মীদের। তাই কোনো সিন্ডিকেট চান না এ খাতের ব্যবসায়ীরা। যাঁরা চক্র তৈরিতে জড়িত, তাঁদের শাস্তি দাবি করেন তাঁরা।
রাজধানীর একটি হোটেলে আজ শনিবার বায়রা সিন্ডিকেটবিরোধী জোট আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে কোনো প্রকার সিন্ডিকেট অনুমোদন না দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা আইন অনুযায়ী এবং মালয়েশিয়ায় শ্রমিক প্রেরণকারী অন্য ১৩টি দেশের মতো বাংলাদেশের সব বৈধ এজেন্সির জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত রাখার দাবিতে এ আলোচনার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, জনশক্তি খাতে সিন্ডিকেট হোক, এটা প্রধানমন্ত্রী চান না। তাঁর ওপর নানাভাবে চাপ তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যদি সিন্ডিকেট চাইতেন, অনেক আগেই এটি হয়ে যেত, সেটা হয়নি। তাই এ নিয়ে সন্দেহের কিছু নেই।
অভিবাসন ও উন্নয়নবিষয়ক বেসরকারি সংসদীয় ককাসের সভাপতি শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বায়রা সংগঠিত নয়। বায়রার সদস্যরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো সিন্ডিকেট করা সম্ভব হবে না। আর দেশের শীর্ষ বণিক সমিতি এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, দেশে ২৪ বিলিয়ন ডলার আসে প্রবাসী আয় থেকে। তৈরি পোশাক খাতের পর এটি সর্বোচ্চ। এ খাতের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে, সিন্ডিকেট ভেঙে স্বচ্ছতার সঙ্গে বিদেশে কর্মী পাঠানো উচিত।
গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেন, মালয়েশিয়ায় বৃক্ষরোপণ, রাবার কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মীর চাহিদা আছে। তারা কাজ করতে পারছে না। এসব খাতে অন্য দেশ থেকে কর্মী পায় না তারা। তাই বাংলাদেশের ওপরই ভরসা করতে হবে। সিন্ডিকেটের বিষয়ে আপস করা যাবে না। মালয়েশিয়ার সবাই সিন্ডিকেটের পক্ষে নয়। সবার জন্য উন্মুক্ত রেখেই কর্মী পাঠানো শুরু করতে হবে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, অতীতে ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেটে কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার ২৫ এজেন্সির সিন্ডিকেট তৈরির অপচেষ্টা চলছে। দেশে এখন ডলারের সংকট। সিন্ডিকেট হলে অভিবাসন ব্যয় বেড়ে যাবে। বিদেশে ডলার পাচার হবে ভিসা কেনাবেচার নামে। মালয়েশিয়া বাকি ১৩ দেশ থেকে যেভাবে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কর্মী নিচ্ছে, বাংলাদেশ থেকেও তা–ই করতে হবে। সব বৈধ এজেন্সির জন্য কর্মী পাঠানোর সুযোগ খোলা রাখতে হবে।
প্রসঙ্গত, সিন্ডিকেটের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো বন্ধ রয়েছে।
বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরীর সভাপতিত্বে গোলটেবিলে আরও অংশ নেন ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বায়রার সাবেক সভাপতি মো. নূর আলী, আবুল বাশার, সাবেক মহাসচিব রিয়াজুল ইসলাম ও শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ। মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল ইসলাম হাসান।