প্রায় প্রতিদিনই লন্ডন প্রবাসী ছেলে আসগর আলীর সঙ্গে ভিডিওকলের মাধ্যমে কথা বলেন মা। শরিয়তপুর জেলার নড়িয়ার বাসিন্দা বিলকিস বেগমের তাতেও মন ভরে না। ছেলে যত বড়ই হোক না কেন, প্রত্যেক মা-ই চান, সঙ্গে রাখতে, সঙ্গে থাকতে। তাই বিলকিস বেগমেরও ঈদের সময় ছেলেকে তার কাছে চান। কিন্তু জীবন এবং জীবিকার কারণে সবার পক্ষে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
‘মা সব সময় চান আমি যেন তাঁর সঙ্গে ঈদ করি। প্রতিদিন ভিডিওকলে কথা বললেও মা আমাকে ঈদের সময় নিজের হাতের রান্না করা খাবার না খাওয়ালে তৃপ্তি পান না। আর সন্তান হিসেবে সবার মতো আমিও তো চাই ঈদের দিনটায় মায়ের পাশে থাকতে।’ প্রতিবছর ঈদে বাড়ি আসার কথা বলতে গিয়ে এমনটাই জানান প্রবাসী রেস্তোরাঁ-ব্যবসায়ী আসগর আলী।
ঈদের সময় বাড়ি আসতে অন্যরকম ভালো লাগে আসগর আলীর। সাধারণত দুই ঈদের সময়ই প্রবাসী বাংলাদেশিরা ছুটি ম্যানেজ করে গ্রামের বাড়িতে আসে। সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উদ্যাপনের অন্যতম সুযোগ তো বলতে গেলে দুই ঈদই।
আসগর আলী বলেন, ‘আগে লন্ডন থেকে ঢাকা আসতে যত সময় লাগতো প্রায় একই সময় লেগে যেত ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি যেতে। মাঝেমধ্যে ঈদের আগের দিন বিকাল বা সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছতাম। তারপর শরিয়তপুরের যাত্রাপথটা ছিল ভীষণরকম ভোগান্তির। অনিশ্চিয়তার। এবার ঈদে আমাদের সেই দুঃখ, সেই কষ্ট দূর হয়েছে। যে স্বপ্ন নিয়ে প্রবাস থেকে দেশে আসি মা ও পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটানোর জন্য, সেটা এখন সহজেই পূরণ হবে।’
দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রবাসীদের এখন বাড়িতে ঈদযাত্রার পথ নিয়ে বাড়তি কোনো চিন্তা করতে হবে না। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে মাত্র দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে তাঁরা পৌঁছে যেতে পারবেন নিজ নিজ স্বপ্নের গন্তব্যে।
আসগর আলীর মতো লাখ লাখ প্রবাসীদের এখন স্বপ্ন যাবে বাড়ি, আপনজনের টানে। শেকড়ের টানে ঈদ উদ্যাপনের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে এসে ফেরিঘাটে বসে থাকতে হবে না। অল্প সময়ে পৌঁছে যেতে পারবেন গ্রামের বাড়িতে, মায়ের কাছে; স্বজনের পাশে। আপনজনের টানে বাড়ি যাওয়ার এ স্বপ্ন পূরণ সহজ ও নিরাপদ করে দিয়েছে আমাদের পদ্মা সেতু।