মূল সেতুর কাজ বন্ধ, বিকল্প সেতু জরাজীর্ণ

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার সোনাবাজুতে তুলসীগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ শুরু হয় পাঁচ বছর আগে। বরাদ্দ না থাকায় সেটির কাজ এখন বন্ধ। এখানে নির্মিত বিকল্প কাঠের সেতুটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে দুই উপজেলার ১০ গ্রামের মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
এলাকার অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেতুর বিভিন্ন অংশে কাঠের পাটাতন ভেঙে পড়ে গেছে। এগুলো সংস্কার ও পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নেই। ফলে গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওই গ্রামগুলোর প্রায় ৫০ হাজার মানুষ দুই বছর ধরে সরাসরি যোগাযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এসব গ্রামের মানুষ ১০-১৫ কিলোমিটার ঘুরে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক হয়ে চলাচল করছে। এতে তাদের সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে দুর্ভোগ।
নাটোর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গুরুদাসপুর-আহম্মেদপুর সড়কের সোনাবাজুতে ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে দুই কোটি নয় লাখ টাকা ব্যয় ধরে ২০ দশমিক ৪ মিটার দীর্ঘ পাকা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে এ সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এটির কয়েকটি স্তম্ভ হতে না হতে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ অর্থাভাব। বরাদ্দ না হওয়ায় কয়েক বছর ধরে এটির কাজ বন্ধ রয়েছে। মূল সেতু নির্মাণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে চলাচলের জন্য কাঠের সেতু তৈরি করা হয়। এরই মধ্যে কাঠের সেতু ভেঙে পড়ছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বিকল্প সেতুর চার থেকে পাঁচ জায়গায় পাটাতন ভেঙে ফাঁকা হয়ে নদীর পানি দেখা যাচ্ছে। কয়েকটি স্থানে কাঠ পচে নরম হয়ে খসে পড়ছে। বিকল্প পথ না থাকায় পথচারী, মোটরসাইকেল ও রিকশা-ভ্যানের চালকেরা ঝুঁকি নিয়ে সেতু পার হচ্ছেন।
এ সময় সেতুসংলগ্ন সোনাবাজু গ্রামের ইসাহক আলী জানান, পাঁচ বছর আগে সেতুটি নির্মিত হলেও সওজ কর্তৃপক্ষ তা সংস্কার করেনি। এখন সেতু দিয়ে হেঁটেও চলা কঠিন। এই সেতু দিয়ে গুরুদাসপুরের চাপিলা ইউনিয়নের রওশনপুর, রামকান্তপুর, তেলটুপি, নওপাড়া; বড়াইগ্রামের ইকোরী, রাজাপুর, জালশুকা, মাড়িয়া, মানিকপুর ও বড়বাঁক গ্রামের মানুষ চলাচল করেন।
বড়াইগ্রামের মৌখাড়া কলেজের প্রভাষক তসলিম জানান, তিনিসহ বহু মানুষ মোটরসাইকেলে এ সড়কে যাতায়াত করেন। কাঠের পাটাতন ভাঙা। খেয়া নৌকাও নেই। নিরুপায় হয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয়। তখন বুকের ভেতর ধড়ফড় করে। অনেকে কাঠের ফাঁকে আটকে পড়েন। জনস্বার্থে নতুন পাটাতন বসানো দরকার।
মানবাধিকারকর্মী সোনাবাজু গ্রামের আবদুল ওহাব জানান, হালকা গাড়ি ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হলেও বাস-ট্রাকের মতো ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এসব গ্রামের মানুষ তাঁদের উৎপাদিত ফসল মোকামে গিয়ে বিক্রি করতে পারেন না। তাঁরা ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক হয়ে চলাচল করেন। এতে তাঁদের সময় ও অর্থের অপচয় হয়।
এ ব্যাপারে নাটোর সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিকরুল ইসলাম জানান, প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তুলসীগঙ্গা নদীতে সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে। বিকল্প সেতুতে লোহার পাটাতন বসাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।