মেজর সিনহা হত্যায় ওসি প্রদীপ জড়িত নন: আইনজীবী রানা দাশ

আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত
ফাইল ছবি

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যায় টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জড়িত নন বলে দাবি করেছেন তাঁর আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত।


আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজার জেলা জজ আদালতে ওসি প্রদীপের জামিন শুনানিতে অংশ নিতে আসেন রানা দাশ। পরে সাংবাদিকদের কাছে তিনি দাবি করেন, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের যে জিরো টলারেন্স নীতি, ওসি প্রদীপ সেই দায়িত্বই পালন করেছেন। ওসি প্রদীপ মাদক নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছিলেন। এখন তাঁর অনুপস্থিতিতে মাদকসংশ্লিষ্ট অপরাধ আবার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
রানা দাশ গুপ্ত বলেন, অভিযোগপত্রে মেজর সিনহার গলায় বুট জুতা দিয়ে (ওসি প্রদীপ) চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তা পাওয়া যায়নি।

সিনহা হত্যার প্রধান আসামি ওসি প্রদীপ
ফাইল ছবি

রানা দাশ গুপ্ত বলেন, ‘করোনা অতিমারির মধ্যে সারা দেশে এজলাস ঠিকমতো হচ্ছে না, এর মধ্যেও আমরা একটি জামিন আবেদন দিয়েছি আদালতে, সংগত কারণে শুনানি হয়নি। খাসকামরা থেকে একটি অর্ডার দিয়েছেন, এই আবেদনের শুনানি হবে ২৭ জুন।’


আইনজীবীরা জানান, ৯ জুন জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাবেক ওসি প্রদীপ ও এএসআই নন্দলাল রক্ষিতের জামিন আবেদন করা হয়েছিল। আদালত আজ রোববার ১৩ জুন জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন। জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ঢাকা থেকে রানা দাশ গুপ্তের নেতৃত্ব পাঁচজন আইনজীবী কক্সবাজার আসেন।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল জামিন আবেদনের শুনানির দিন নির্ধারণ করেন ২৭ জুন।

সিনহা মো. রাশেদ
ফাইল ছবি

উল্লেখ্য, দীর্ঘ সাত মাস পর ১০ জুন চট্টগ্রাম কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে কক্সবাজার কারাগারে আনা হয় ওসি প্রদীপকে।


গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর এপিবিএনের তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনায় টেকনাফ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করে।

ঘটনার পাঁচ দিন পর, অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে ওসি প্রদীপসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। হত্যা মামলা ও পুলিশের করা মামলার তদন্ত দায়িত্ব পায় র‌্যাব।
একই বছরের (২০২০ সালের) ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম।

তদন্ত প্রতিবেদনে সিনহা হত্যার ঘটনা পরিকল্পিত এবং ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।


এ মামলায় ১৪ জন আসামি কারাগারে আছেন। তাঁদের মধ্যে ৯ জন পুলিশ সদস্য (টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া), তিনজন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এপিবিএন সদস্য (এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আবদুল্লাহ) এবং তিনজন টেকনাফের বাহারছড়া গ্রামের বাসিন্দা (নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন)। সাগর দেব নাথ নামের পুলিশের একজন কনস্টেবল পলাতক।

আদালত সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১২ জন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে আসামিদের ৩ দফায় ১২–১৫ দিন রিমান্ডে আনা হয়েছিল।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল বিচারিক আদালতে এই মামলার শুনানির দিন নির্ধারিত ছিল। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবং সরকারের বিধিনিষেধের কারণে কার্যক্রম স্থগিত আছে।