মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মহাপরিকল্পনা জরুরি

বড় শহরগুলোর জন্য মেডিকেল বর্জ্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। ভবিষ্যতের চিন্তা করে প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা গ্রহণের এখনই সময়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন কাজে জনগণকে সচেতন করতে হবে।

‘মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক সিলেট সিটি করপোরেশন আয়োজিত সেমিনারে নগর পরিকল্পনাবিদেরা এই মতামত দিয়েছেন। গতকাল শনিবার নগরের একটি রেস্তোরাঁর সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষজ্ঞ প্যানেল সদস্য হিসেবে বক্তব্য দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ আলমগীর, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে মোমেন, রিকারসন টেকনোলজির উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) মো. আসাব উদ্দিন,কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মাহফুজুর রহমান, ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ মনোয়ার হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ইহতেশামুল হক চৌধুরীসহ নগর বিশেষজ্ঞরা।

সেমিনারে চারটি বিষয়ে বিশেষ উপস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উপস্থাপনা তুলে ধরেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) নুর আজিজুর রহমান, মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রিজম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আনিছুর রহমান, পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক উপস্থাপনা তুলে ধরেন আইডব্লিউএমের পরিচালক এস এম মাহবুবুর রহমান এবং ডিজিটাল সিলেটবিষয়ক উপস্থাপনা তুলে ধরেন রিকারসন টেকনোলজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুর রহমান চৌধুরী।

সেমিনারের মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সিলেট পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আ ফ ম কামাল, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ লালা, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জহির বিন আলম, অধ্যাপক মুশতাক আহমদ, পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক ছালাহ উদ্দীন চৌধুরী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী, ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সভাপতি নাসিম আহমেদ প্রমুখ।

এ ধরনের সেমিনার আয়োজনকে অভিনন্দিত করে অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, বর্জ্য নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হবে একটি মহৎ উদ্দেশ্য। বিষয়টি সিলেটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সিলেটে বিশেষত্ব দুটি—পর্যটন ও হেলথ সার্ভিস। এত ক্লিনিক বোধ হয় দেশের অন্য কোথাও নেই। হাসপাতাল অনেকগুলো। হোটেল আছে প্রায় চার হাজার। মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

উদ্যোগী হলে সমাধান যে আছে, তার দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী সিলেটের বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মদনমোহন কলেজ প্রসঙ্গে বলেন, এই কলেজে ভর্তি থেকে আগে মাত্র ৮ লাখ টাকা আয় হতো। ভর্তির টাকা বড় ভাই ও মামারা নিয়ে যান। অনলাইন ব্যবস্থা চালুর পর ৮০ লাখ টাকা আয় হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা দুর্নীতি কমাচ্ছে।

জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশন নগরের নিত্যনতুন সমস্যা সমাধানে আগ্রহী। সিলেট ঢাকা থেকে ম্যানেজবল সিটি। সঠিক নেতৃত্ব থাকলে এবং সরকারি সহায়তা পাওয়া গেলে সমাধান সম্ভব। এখনো সিলেটে তেমন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। ভবিষ্যতের জন্য এখনই সময় উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মহাপরিকল্পনা করা। বর্তমান সরকারের সিলেট ও চট্টগ্রাম শহরকেন্দ্রিক কিছু প্রকল্প রয়েছে, যার মধ্যে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমান যে প্রযুক্তিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হচ্ছে, সেটি কিছুটা ব্যয়বহুল। উন্নত প্রযুক্তি বের না হওয়া পর্যন্ত এরও নেতিবাচক প্রভাব থাকতে পারে। উন্নত প্রযুক্তিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য গবেষণা করা হচ্ছে।

বড় বড় শহরে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অবদানকারীদের পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে জানিয়ে জামিলুর রহমান চৌধুরী আরও বলেন, সিলেটকেন্দ্রিক উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ফ্লাইওভার নির্মাণ করেই যে যানজট সমস্যার সমাধান হবে তেমন নয়। দেখা গেছে, বিভিন্ন উন্নত দেশ ফ্লাইওভার নির্মাণের ১৫-২০ বছর পর আবার এর কয়েক জায়গায় ভেঙে ফেলছে। ব্যক্তিগত যানবাহন বাড়ানো চিরস্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নয়। ব্যক্তিগত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে গণপরিবহন বাড়ানো প্রয়োজন।