যুক্তরাজ্যে বন্ধ ‘গোল্ডেন’ ভিসা, সুবিধা নিয়েছেন ৩২ বাংলাদেশি

বাংলাদেশ থেকে যাঁরা এই ভিসা নিয়েছেন, তাঁরা ৭৫০ কোটি টাকার বেশি যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ করেছেন।

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ থেকে গত এক দশকে ৩২ জন ২০ লাখ পাউন্ড (বর্তমান বিনিময় হারে প্রায় ২৪ কোটি টাকা) করে বিনিয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে অভিবাসী ভিসা নিয়েছেন। যুক্তরাজ্যে সরকারিভাবে এই ভিসা টিয়ার ওয়ান নামে পরিচিত হলেও তা শুধু অতিধনীদের জন্য সংরক্ষিত বিশেষ সুবিধা হওয়ায় সংবাদমাধ্যম ও দুর্নীতিবিরোধী গোষ্ঠীগুলো একে গোল্ডেন ভিসা অভিহিত করে থাকে। ব্যাপক সমালোচনার মুখে ব্রিটিশ সরকার গত বৃহস্পতিবার এই গোল্ডেন ভিসার ব্যবস্থা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।

২০০৮ সালে যুক্তরাজ্য টিয়ার ওয়ান ভিসা চালু করে। বাংলাদেশ থেকে যে ৩২ জন এই গোল্ডেন ভিসা নিয়েছেন, তাঁরা ওই ভিসার শর্ত পূরণের জন্য অন্তত ৬ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড (৭৫০ কোটি টাকার বেশি) ব্রিটেনে বিনিয়োগ করেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগে অনুমতি দেওয়ার পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা জারি করা হলেও গত এক দশকে অর্থাৎ ২০২০ সালের আগে বৈধ পথে ওই বিপুল পরিমাণ টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না।

গোল্ডেন ভিসার সুবিধাভোগীদের তালিকায় সবার ওপরে আছেন রুশ শতকোটিপতিরা। এরপর আছে চীন। কয়েক বছর ধরে অভিযোগ উঠছে যে রুশ অতিধনীরা ব্রিটেনে অভিবাসনের সুযোগ নিয়ে দেশটির রাজনীতি ও সমাজজীবনে নানাভাবে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। রাশিয়া ও চীন ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কর্তৃত্ববাদী শাসকদের পরিবার ও ঘনিষ্ঠ লোকজন তাঁদের অবৈধ আয় ও দুর্নীতির অর্জনকে বৈধ করার লক্ষ্যে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে বিনিয়োগকারীর কোটায় এ ধরনের অভিবাসনসুবিধা নিয়ে থাকেন। এই বিশেষ ভিসা বন্ধের ঘোষণায় ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বলেন, ‘আমাদের শহরগুলোতে অবৈধ অর্থ ছড়িয়ে দুর্নীতিবাজ ধনী ও ক্ষমতাধরেরা জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি যে হুমকি সৃষ্টি করছেন, তা বন্ধে এই ভিসা সুবিধার অবসান সহায়ক হবে।’ যাঁরা ইতিমধ্যে এই ভিসা পেয়েছেন, তাঁদের ওপর এ সিদ্ধান্তের কোনো প্রভাব পড়বে না।

ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক ইউক্রেন সংকট ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে ব্রিটেন এই পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করল। অবশ্য এই সুবিধা নেওয়া বিদেশি নাগরিকদের সম্পর্কে সরকারিভাবে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে দুর্নীতিবিরোধী যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা স্পটলাইটের হিসাবে, মোট ৬ হাজার ৩১২ জন এই গোল্ডেন ভিসা পেয়েছেন। গত বছরের জুলাইয়ে সংস্থাটির প্রকাশিত ‘রেড কার্পেট ফর ডার্টি মানি’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৮ থেকে ২০২০ সাল সময়ে ৩২ জন বাংলাদেশি এই ভিসা পেয়েছেন। একই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত থেকে ২৫৪ জন, পাকিস্তান থেকে ২৮৩ জন, নেপাল থেকে ৫ জন ও আফগানিস্তান থেকে ১২১ জন এই ভিসা পেয়েছেন। ওই প্রতিবেদন আরও বলছে, যে গোল্ডেন ভিসার অর্ধেকই সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় চার বছর আগে স্বরাষ্ট্র দপ্তর পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তার ফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা শহীদ উদ্দিন খান অবশ্য কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছেন, যা সরকার অপপ্রচার বলে নাকচ করে দিয়েছে। শহীদ উদ্দিন ব্রিটেনে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিকে ২০ হাজার পাউন্ড চাঁদা দেন বলেও খবরে বলা হয়।

গোল্ডেন ভিসার বিধি অনুযায়ী, ব্রিটেনে সপরিবার বসবাসের জন্য অন্তত ২০ লাখ পাউন্ড বিনিয়োগ করতে হবে এবং একটি ব্রিটিশ ব্যাংকে হিসাব খুলতে হয়। এরপর অনির্দিষ্টকালের জন্য বসবাসের অনুমতি বা আইএলআর পাওয়া নির্ভর করে বিনিয়োগের আকারের ওপর। ২০ লাখ পাউন্ড বিনিয়োগ করলে আইএলআরের জন্য অপেক্ষা করতে হয় পাঁচ বছর, ৫০ লাখ হলে তিন বছর এবং ১ কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ করলে তা আরও কমে হয় দুই বছরে। সুতরাং বাংলাদেশিদের মধ্যে কেউ সংক্ষিপ্ততম সময়ে স্থায়ী হওয়ার জন্য ৫০ লাখ বা ১ কোটি পাউন্ডও বিনিয়োগ করে থাকতে পারেন।

ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে এ বিষয়ে ব্রিটেনে সরকারিভাবে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। একজন বাংলাদেশির নাম অবশ্য গত বছর লন্ডনের সানডে টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, যিনি বাংলাদেশে একটি মামলায় তাঁর অনুপস্থিতিতে সম্পন্ন হওয়া বিচারে দণ্ডিত হয়েছেন। সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা শহীদ উদ্দিন খান অবশ্য কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছেন, যা সরকার অপপ্রচার বলে নাকচ করে দিয়েছে। শহীদ উদ্দিন ব্রিটেনে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিকে ২০ হাজার পাউন্ড চাঁদা দেন বলেও খবরে বলা হয়।

বাংলাদেশে সরকার চাইলে অবশ্য ইমিগ্রেশন বিভাগে সংরক্ষিত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আসা-যাওয়ার রেকর্ড থেকে টিয়ার ওয়ান ভিসাধারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যেক যাত্রীর আসা-যাওয়ার সময় তাঁর গন্তব্য বা যাত্রা শুরুর দেশের ভিসা পরীক্ষা করা হয় এবং সেই রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়।