চট্টগ্রামের চন্দনাইশে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতে গোলাগুলির পর এক যুবলীগ নেতার প্রকাশ্যে গুলি ছোড়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন মাধ্যমে ভিডিওটি দেখা যায়। পিস্তল হাতে গুলি ছোড়া ওই নেতা কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য মো. গিয়াস উদ্দিন ওরফে সুজন বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর গিয়াস গা ঢাকা দেন। তাঁর ব্যবহৃত অস্ত্রটি অবৈধ বলে নিশ্চিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গিয়াসকে গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছেন তাঁরা।
গত ৩০ আগস্ট চন্দনাইশের হাশিমপুরে একটি কমিউনিটি সেন্টারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ব্যানারে শোক দিবসের আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। এ আয়োজনের দায়িত্ব ছিল গিয়াস উদ্দিনের ওপর। ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের বিরোধের জের ধরে অপর একটি পক্ষ ওই কর্মসূচিতে হামলা করে। তারা চলে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে আগুন ধরিয়ে গিয়াস প্রকাশ্যে গুলি ছোড়েন। গিয়াস উদ্দিনের বাড়ি চন্দনাইশের হাশিমপুর ইউনিয়নে।
১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা পায়জামা ও কালো পাঞ্জাবি পরা এক যুবক প্রকাশ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করছেন। রাস্তার ওপর তখন আগুন জ্বলছে। তাতে কিছুক্ষণ পরপর কেরোসিন ঢেলে দিচ্ছেন কয়েকজন যুবক। এ সময় দলীয় স্লোগান দেওয়া হয়। এই ভিডিও দলের অনেক নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষ ফেসবুকে শেয়ার করেছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন সরকারকে একাধিকবার ফোন করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি সার্কেল) মো. হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ভিডিও ভাইরাল হওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। গিয়াস উদ্দিনের বিষয়েও তিনি কিছু শোনেননি।
পুলিশ সূত্র জানায়, গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় একটি অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। গত মার্চে চট্টগ্রাম নগরের রহমতগঞ্জে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যতীন্দ্রমোহন সেনের বাড়ি দখলের সময় দখলদারদের পক্ষ নিয়েছিলেন গিয়াস উদ্দিন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গিয়াস উদ্দিন এখন যুবলীগে নেই, আওয়ামী লীগ করেন। আগে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ছিলেন।’ ভিডিওটি তিনি দেখেননি।
টিপু সুলতান এ কথা বললেও এলাকায় নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেন গিয়াস উদ্দিন।
এদিনের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ প্রধান বক্তা ছিলেন। গিয়াস উদ্দিন মঞ্চে অতিথিদের পাশে ছিলেন। প্রধান অতিথি বের হয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৈয়ব আলীর নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চন্দনাইশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান অতিথি চলে যাওয়ার পর খাবার দেওয়া শুরু হলে একদল সন্ত্রাসী এসে হামলা করে। তারা গুলি ছোড়ে।
হামলার ওই ঘটনা নিয়ে গত বুধবার দুই পক্ষ থেকে চন্দনাইশ থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। এ মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে চন্দনাইশ পৌরসভা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহসভাপতি ও পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু তৈয়বকে। অন্যদিকে একই দিন আবু তৈয়বের পক্ষে একটি মামলা হয়। মামলায় বাদী হন উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য মো. আবুল ফয়সাল। এতে ২১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে গিয়াস উদ্দিনকে।