রাজধানীতে ভাসমান লোকজন পেলেন করোনার টিকা
যাঁদের জন্মনিবন্ধন কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, নেই কোনো স্থায়ী ঘর কিংবা ঠিকানা—এমন ভাসমান লোকজনকে করোনাভাইরাসের টিকা (ভ্যাকসিন) দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আয়োজনে এ টিকা দেওয়া হয়। এ সময় কিছু সাধারণ মানুষও টিকা পেয়েছেন।
বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আজ সকাল নয়টা থেকে বিকেল পর্যন্ত ১৫১ জনকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচিতে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা দেওয়া হচ্ছে। আর টিকাদান কর্মসূচি চলার কথা রাত ১০টা পর্যন্ত।
অন্যদিকে আজ সকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতাধীন হাজারীবাগ বালুর মাঠে এক হাজার ভাসমান মানুষকে টিকা দিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। আর সন্ধ্যা সাতটা থেকে কারওয়ান বাজার ও তেজগাঁও কলেজ এলাকায় টিকাদানের অন্য দুটি কর্মসূচি চলছে।
সরেজমিনে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় দেখা যায়, স্টেশনের সামনে যানবাহন পার্কিংয়ের জায়গায় টিকা দেওয়ার অস্থায়ী বুথ করা হয়েছে। ডিএনসিসির স্বাস্থ্যকর্মীরা সেখানে ভাসমান লোকজনকে টিকা দিচ্ছেন। এর পাশেই করপোরেশনের এক কর্মী হাতমাইক নিয়ে ভাসমান লোকজনকে এখানে টিকা দেওয়া হচ্ছে—এমন ঘোষণা দিচ্ছিলেন।
মাইকে ঘোষণা শোনে এবং খোলা আকাশের নিচে টিকা দিতে দেখে অনেকেই নিজেদের পরিচিতদের সেখানে ডেকে নিয়ে যান। তাঁদের বেশির ভাগই আশপাশের দোকান ও রেস্তোরাঁর কর্মী কিংবা ভ্রাম্যমাণ হকার। কেউ আবার যাত্রীসাধারণ। যাচ্ছিলেন কোনো গন্তব্যে। ডিএনসিসির স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা নেওয়া লোকদের নাম ও বয়স খাতায় লিখে রাখেন।
সূর্যবানু নামের এক নারী ওই জায়গায় টিকা নেন। তিনি পাশের একটি খাবার দোকানে রান্নার কাজ করেন বলে জানান। প্রথম আলোকে এই নারী বলেন, ‘টিকা কই দেয়, কেমনে নিমু, কিছুই জানতাম না। তাই টিকা দিতেও পারি নাই। আজকে মালিকে কইল টিকা দিতাছে। তাই এখানে এসে টিকা নিলাম।’
রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে যেখানে ভাসমান লোকজন থাকেন, সেসব জায়গায় এই টিকা দেওয়ার কাজটি পরিচালনা করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। সংস্থাটির টেকনিক্যাল ম্যানেজার মিরানা জামান প্রথম আলোকে বলেন, গত সোমবার ভাসমান লোকজনকে টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রথম দিন কমলাপুর রেলস্টেশন ও মানিকনগর উচ্চবিদ্যালয় এলাকায় টিকা দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, গুলিস্তান মাজার, হাইকোর্ট মাজার, নাট্যমঞ্চ, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প ও গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায়। আজ দেওয়া হয়েছে হাজারীবাগ বালুর মাঠ, কারওয়ান বাজার ও তেজগাঁও কলেজের সামনে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে মিরপুর শাহ আলী মাজার এলাকায় দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
ব্র্যাকের এই কর্মকর্তা বলেন, মূলত যেসব বেসরকারি সংস্থা ভাসমান লোকজনকে নিয়ে কাজ করে, তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজটি করা হচ্ছে। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেকের নাম, বাবার নাম ও বয়স লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। যাঁরা নাম স্বাক্ষর করতে পারেন, তাঁদের স্বাক্ষর এবং না পারলে টিপসই নিয়ে সবাইকে টিকা কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে তা ব্যবহার করা যায়।
তবে বিমানবন্দর রেলস্টেশনের টিকাদান কর্মসূচিতে প্রথম দিকে টিকা নেওয়া অর্ধশতাধিক মানুষকে কোনো কার্ড দিতে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ব্র্যাক হঠাৎ বিমানবন্দর রেলস্টেশনের দায়িত্ব তাঁদের দিয়েছে। এ জন্য তাঁরা কার্ড প্রস্তুত করতে পারেননি। তবে দুপুর ১২টার পর ফটোকপি করা কাগজের একটি স্লিপ টিকা গ্রহণকারীদের দিতে দেখা যায়। স্লিপটিতে ডিএনসিসি ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কার্যালয়ের সিল ব্যবহার করা হয়েছে। টিকা গ্রহণকারীদের কেউ কেউ পরবর্তী সময়ে এসে তা সংগ্রহ করেন।
রিপন দাস নামের একজন রেলস্টেশনে জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন। থাকেন টঙ্গী নতুন বাজার এলাকায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি টিকার জন্য আবেদন করেছি। আবেদনের কপি বাসায় আছে। কিন্তু কোনো মেসেজ (খুদে বার্তা) পাইনি। আজ এখানে টিকা দিচ্ছে বলে জানলাম। এসে টিকাও পেলাম। কিন্তু আমাকে কোনো কার্ড দেওয়া হয়নি। আমি যে টিকা দিয়েছি, এর প্রমাণ কীভাবে দেব?’
সিটি করপোরেশনকে দায়িত্ব হস্তান্তর বিষয়ে ব্র্যাকের টেকনিক্যাল ম্যানেজার মিনারা জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিমানবন্দর রেলস্টেশনে টিকা দেওয়ার কথা ছিল আমাদের। কিন্তু এর আগেই সিটি করপোরেশন নিজেদের মতো করে সেখানে টিকা দিয়েছে। তারা যেভাবে কাজটি করছে, এ নিয়ে আমাদের কিছুই বলার নেই।’ টিকা দেওয়ার কাজটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ সঠিক ব্যবস্থাপনায় করছে না বলেও মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে কথা বলতে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমানের মুঠোফোন নম্বরে ফোন করা হলে তিনি তা কেটে দেন। এর আগে সকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যদি আমরা পরবর্তী সময়ে সুযোগ পাই, অবশ্যই কার্ডের ব্যবস্থা করব। কিন্তু এখন এ রকম জায়গায় লেখালেখিতে বেশি সময় ব্যয় করলে টিকাদান কার্যক্রম ব্যাহত হবে।’