প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম চেয়েছে অনুসন্ধান কমিটি। এ ছাড়া সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করবেন কমিটির সদস্যরা। তবে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কমিটি বৈঠক করবে না।
আজ রোববার বিকেলে অনুসন্ধান কমিটির প্রথম বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান অনুসন্ধান কমিটিকে সাচিবিক সহায়তার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ে জন্য গত শনিবার অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের পরদিনই আজ বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে অনুসন্ধান কমিটির প্রথম বৈঠক হয়। বিকেল সাড়ে চারটায় শুরু হয়ে সন্ধ্যা সোয়া সাতটা পর্যন্ত এ বৈঠক চলে।
অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য হাইকোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেসব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে, তাদের কাছ থেকেও আমরা চাইব (নির্বাচন কমিশনারের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের নাম), তাদের কোনো চয়েজ (পছন্দ) আছে কি না, প্রপোজাল (প্রস্তাব) আছে কি না। সে বিষয়ে আজকেই (রোববার) নোটিফিকেশন দেওয়া হবে। ক্যাবিনেট ডিভিশনের ই-মেইল ঠিকানা বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ড্রপ (জমা) করতে পারবে। ব্যক্তিগতভাবেও দু-একজন কেউ আগ্রহী হলে তাঁরাও সেখানে তাঁদের সিভি বা আবেদন সাবমিট করতে পারবেন।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রথম বৈঠকে কর্মপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মঙ্গলবার কমিটি আবার বৈঠকে বসবে। সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আগামী শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুটি এবং রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) একটি বৈঠকে হবে। ২৪ তারিখ (ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ১৫টি কার্যদিবস আছে, এর আগেই নামের প্রস্তাব দেওয়া হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কমিটির বৈঠক হচ্ছে না। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো নির্ধারিত ই-মেইলের মাধ্যমে তাদের নাম বা প্রস্তাব দিতে পারবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সিভিল সোসাইটি, মিডিয়ার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং নির্বাচনসংক্রান্ত যাঁরা বিশেষজ্ঞ আছেন, তাঁদের কাছ থেকেও সাজেশন (পরামর্শ) বা প্রপোজাল (প্রস্তাব) যদি থাকে, সেগুলো নেওয়া হবে। সবার বক্তব্য, অন্যান্য বিষয়সহ যেভাবে আইনে যোগ্যতা বা অযোগ্যতার কথা বলা আছে, সেসব বিবেচনায় নিয়েই আইন অনুযায়ী ১০ জনের নাম নির্বাচন করবে অনুসন্ধান কমিটি।
ইসি গঠনে নতুন আইন অনুযায়ী, অনুসন্ধান কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করতে হবে অনুসন্ধান কমিটিকে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা কয়েক দিন আগে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, অনুসন্ধান কমিটি চাইলে ১৫ কার্যদিবসের আগেও ইসি গঠনের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করতে পারবে।
অনুসন্ধান কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনারদের প্রতি পদের জন্য ২ জন করে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে। এ ১০ জনের মধ্য থেকে সিইসিসহ ৫ জনকে নিয়ে ইসি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি।
স্বাধীনতার পর এবারই প্রথমবারের মতো আইনানুযায়ী ইসি গঠিত হচ্ছে। এ জন্য কিছুদিন আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ জাতীয় সংসদে পাস হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সম্মতির পর গত রোববার বিলটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ এটি আইনে পরিণত হয়।
অনুসন্ধান কমিটির কাজ সম্পর্কে আইনে বলা হয়েছে, এই কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বেঁধে দেওয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করা হবে।