প্রথম আলো: ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলাকে কীভাবে দেখেন?
চার্লস হোয়াটলি: রাশিয়া বিপুল অস্ত্র এবং বিপুল সৈন্য নিয়ে তাদের প্রতিবেশী একটি শান্তিপূর্ণ সার্বভৌম দেশ দখল করতে গেছে। রাশিয়ার নির্বিচার হামলার কারণে ইউক্রেনের নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ প্রাণ দিচ্ছেন। কাজেই এই সংকটকালে আমরা ইউক্রেনের জনগণের পাশে আছি। ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জাতিসংঘের মাধ্যমে বৈশ্বিক মনোযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
প্রথম আলো: বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার সামরিক অভিযান বন্ধের ক্ষেত্রে কতটা সহায়ক হবে?
চার্লস হোয়াটলি: ইউক্রেনের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা নিষেধাজ্ঞার পরিধি বিস্তৃত করছি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে সর্বশেষ যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তা এখন পর্যন্ত কোনো দেশের বিরুদ্ধে ইইউর সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। পরিস্থিতির জন্য দায়ী রাশিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্বের পাশাপাশি দেশটির জ্বালানি, পরিবহন এবং অন্যান্য পণ্যের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। রাশিয়ার নেতৃত্বকে এটা বুঝতে হবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ সমমনা দেশ এবং অংশীদারদের নিয়ে ইইউ জোরালো এই পদক্ষেপ নিয়েছে। ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধের জন্য ইউরোপের ঐক্যবদ্ধ এই পদক্ষেপ জরুরি ছিল।
প্রথম আলো: আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে কি জাতিসংঘের ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে?
চার্লস হোয়াটলি: অবশ্যই জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। জাতিসংঘের প্রক্রিয়া অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য দেশের ভেটো দেওয়ার সুযোগ আছে। আর রাশিয়া সেটার সুযোগ নিয়েছে। রাশিয়া গত শুক্রবার ভেটো দিলেও যে প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত হয়েছিল, সেখানে অবিলম্বে দেশটির আগ্রাসন বন্ধের বিষয়ে জোরালো মতামতের প্রতিফলন ছিল।
এখন জাতিসংঘের পরবর্তী পদক্ষেপ হতে পারে সাধারণ পরিষদে ইউক্রেন নিয়ে একটি প্রস্তাব। জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলো যাতে ওই প্রস্তাবে সমর্থন দেয়, এ জন্য আমরা কাজ করছি। ওই প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে জ্বালানি, পরিবহনসহ সামগ্রিকভাবে রাশিয়ার অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মধ্য দিয়ে এই বার্তা দেওয়া হবে যে একটি সদস্যদেশ চাইলেই জাতিসংঘের সনদের মূল নীতিকে বুড়ো আঙুল দেখাতে পারে না। গায়ের জোরে অন্য দেশে আগ্রাসন চালাতে পারে না।
প্রথম আলো: পশ্চিমের দেশগুলো ইউক্রেনকে প্রয়োজনীয় সমরাস্ত্র সরবরাহ দেওয়ার বিষয়টি কতটা বিবেচনায় নিচ্ছে?
চার্লস হোয়াটলি: সম্ভাব্য নানা উপায়ে ইউক্রেনের সরকার ও জনগণকে সহায়তার চেষ্টা করে যাচ্ছে ইইউ। কয়েক দিন আগে আমরা ইউক্রেনের জন্য ১০০ কোটি ইউরোর বেশি আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছি। বিপুল পরাক্রমশালী রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইতে ইউক্রেনকে সমরাস্ত্র দিয়ে সহায়তা করা হবে কি হবে না, এ সিদ্ধান্ত ইইউর সদস্যদেশগুলোর নিজস্ব বিষয়।
প্রথম আলো: চলমান সংকট নিরসনে আলোচনার পথ কি এখনো খোলা আছে?
চার্লস হোয়াটলি: আলোচনার পথ এখনো খোলা আছে। এই আগ্রাসন বন্ধের জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টাই চালাতে হবে। এই পথগুলোর অন্যতম হচ্ছে আলোচনার টেবিলে ফেরা। যে দেশটিতে রুশ সেনারা অবস্থান করছে, এটি যে তাদের ভূখণ্ড নয়, এটি আলোচনায় এসে জোর দিয়ে বলতে হবে। এ ক্ষেত্রে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। তবে আলোচনায় ফেরার আগে ইউক্রেনের জনগণের ওপর রাশিয়ার আগ্রাসন থামানোটা জরুরি।
প্রথম আলো: চলমান সংকট ইউরোপসহ সারা বিশ্বে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে?
চার্লস হোয়াটলি: এই সংকট জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিসহ বিশ্বজুড়ে নানাভাবে প্রভাব ফেলবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার নানা মাত্রায় সম্পর্ক রয়েছে। ফলে সম্পর্কের মাত্রা যা–ই থাকুক না কেন, চলমান সংকট থেকে কোনো দেশের বাইরে থাকার সুযোগ নেই। এমনিতেই গত দুই বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অর্থনীতিকে পর্যুদস্ত করেছে। এই সংকট উত্তরণে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ সামগ্রিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য ছিল। এমন এক ক্রান্তিকালে চলমান সংকট পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলবে।
প্রথম আলো: চলমান সংকটকে কেউ কেউ দ্বিতীয় স্নায়ুযুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করছেন। আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
চার্লস হোয়াটলি: আমি তো আশা করি, শেষ পর্যন্ত শুভবোধের জয় হবে। আমার মনে হয় না দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিভক্ত যে ইউরোপ ছিল, সে অবস্থায় কেউ ফিরে যেতে চাইবে। ২৭ দেশের ইউরোপীয় জোট এখন অনেক বেশি অবাধ। এমন পরিস্থিতি তিন দশক আগে ছিল না। ইউরোপে আজ যে গণতন্ত্র বিকশিত হয়েছে, সেটি আকাশ থেকে নেমে আসেনি। এই গণতন্ত্র অর্জন করতে হয়েছে। যেকোনো মূল্যে এটিকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।
প্রথম আলো: চলমান সংকটে বাংলাদেশের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা কী?
চার্লস হোয়াটলি: ইউক্রেন নিয়ে বাংলাদেশের বিবৃতিকে আমরা প্রশংসা করি। পাশাপাশি জাতিসংঘের সনদ সুরক্ষার ব্যাপারে বাংলাদেশের অব্যাহত অঙ্গীকার প্রশংসনীয়। চলমান এই সংকটে জাতিসংঘে বাংলাদেশের বক্তব্য শোনাটা আমাদের জন্য জরুরি। আমি নিশ্চিত, ভবিষ্যতে জাতিসংঘে এ নিয়ে বাংলাদেশ বিবৃতি দেবে।