রায়েরবাজারে দেশের বৃহত্তম কবরস্থান

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে দেশের রায়েরবাজারে সবচেয়ে বড় কবরস্থানের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম গতকাল থেকে শুরু হয়েছে l ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে দেশের রায়েরবাজারে সবচেয়ে বড় কবরস্থানের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম গতকাল থেকে শুরু হয়েছে l ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের পেছনে দেশের সবচেয়ে বড় কবরস্থানের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম গতকাল শুক্রবার শুরু হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্মিত এই কবরস্থানে প্রায় এক লাখ কবরের জায়গা আছে। কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে গতকাল কবরস্থানে এক দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
২০১১ সালের জুলাই মাসে ‘রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থান উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের প্রকল্প শুরু করে ডিএনসিসি। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ৫২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের ৫-আর ই ব্যাটালিয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।
গতকাল দোয়া মাহফিলে আশপাশের এলাকার কয়েক শ মানুষ অংশ নেন। প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ঢাকায় দেড় কোটির বেশি লোকের বাস। ২০৩০ সালের মধ্যে এই জনসংখ্যা হবে তিন কোটি। ঢাকায় কবরস্থান, সড়ক, পার্কসহ চতুর্মুখী উন্নয়ন করা জরুরি।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক বলেন, যে যা-ই করুক, মুসলমানদের শেষ গন্তব্য কবরস্থান। ঢাকায় কবরস্থানের প্রয়োজনীয়তার অনেকখানি মেটাবে রায়েরবাজারের এই কবরস্থান। কেউ যদি কবরস্থানের আশপাশের জায়গা দখল কিংবা দোকানপাট গড়ে তোলে, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আনিসুল হক হুঁশিয়ার করে দেন।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, রায়েরবাজার কবরস্থানে মোট জমির পরিমাণ ৯৬ দশমিক ২৩ একর। মূল কবরস্থান ৮১ দশমিক ৩০ একরের। প্রকল্পে মূল কবরস্থান ছাড়াও ভেতরে দুটি লেক, হাঁটার পথ, দুটি মসজিদ, জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৫ একর জায়গা, বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সাব-স্টেশন আছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কবরস্থানটির চারপাশে সুউচ্চ লাল ইটের সীমানাপ্রাচীর তোলা হয়েছে। প্রবেশের জন্য আছে তিনটি ফটক।
সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, এই কবরস্থানের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে অনেক সমস্যা হয়েছিল। কবরস্থান যাতে না হয় সে জন্য সভা, মিছিল, মামলা হয়েছিল। কোনো কিছুই উন্নয়নকাজ আটকে রাখতে পারেনি।
ডিএনসিসির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন সাবেক মন্ত্রী সাহারা খাতুন, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক, মোহাম্মদপুর-শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদেক খান প্রমুখ।
মোট ১৬ ব্লকে বিভক্ত কবরস্থানটি। এর ভেতর দিয়ে বয়ে চলা লেকের ওপর তিনটি সংযোগ সেতু, শিশুদের কবর দেওয়ার আলাদা জায়গা করা হয়েছে। খানিক পরপর লাগানো হয়েছে বাতি। পাঁচ জায়গায় বানানো হয়েছে পানি, শৌচাগারসহ সুবিধাকেন্দ্র। আছে নানা জাতের ফুলগাছের বাগান।
রায়েরবাজার কবরস্থানটি নিয়ে এলাকার লোকজনও উৎসুক। এত দিন বন্ধ থাকা ফটক সর্বসাধারণের জন্য খুলে দিলে উৎসুক লোকজন কবরস্থান ঘুরে দেখতে শুরু করেন। মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা খালেকুল ইসলাম বলেন, এই কবরস্থানটা মোহাম্মদপুরের লোকজনের দীর্ঘদিনের চাওয়া। এটি চালু হওয়ায় কবর দেওয়ার জায়গা পাওয়া সহজ হবে।
১ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষের শহর ঢাকায় কবর দেওয়ার জায়গা পেতেও কষ্ট। রায়েরবাজার কবরস্থানটি চালু হওয়ায় ঢাকায় কবর দেওয়ার জায়গার সংকট কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে করছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ।