রূপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ড: ক্ষতিপূরণ আর ব্যাংকের দায় নির্ধারণ এখনই

ক্ষতিপূরণের তর্ক যত বেশি হয়, দায় নির্ধারণের আলোচনা ততই হারিয়ে যায়। হাসেম ফুডসের ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটছে। ছিটেফোঁটা যে আলোচনা হয়, তাতে ব্যাংকের দায়টা একেবারেই নজরের বাইরে থাকে।

হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় জ্বলছে আগুন। স্বজন ও উৎসুক মানুষ ভিড় জমান কারখানার সামনে। গত ৯ জুলাই সকাল আটটার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে
ফাইল ছবি

আগুনে পুড়ে খাক না হওয়া পর্যন্ত শিশু আর শ্রমিকদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি রাজধানীর পাশের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত হাসেম ফুডসের কারখানা থেকে। ফলে নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে ডিএনএ পরীক্ষার আশ্রয় নিতে হয়েছে। দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় পরিচয় শনাক্তের জন্য মৃতের রক্ত, লালা, চুলই যথেষ্ট। কিন্তু হাড়হাড্ডি ছাড়া পোড়া কারখানায় মানুষের অস্তিত্বের আর কোনো অংশ পাওয়া না যাওয়ায় সেটাই নেওয়া হয় নমুনা হিসেবে। এ বড় মর্মন্তুদ বিষয়!

শেষ পর্যন্ত পুড়ে কয়লা হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে যে ৪৮ জনের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছিল, তাঁদের ৪৫ জনের পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক শাখা। আগস্টের ৩ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ছিল ৩০ জনের অবশিষ্টাংশ আর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে ছিল ১৫ জনের। বাকি তিনজনের পরিচয় জানতে আরও কিছুদিন লাগবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার ৪ আগস্ট নিহত ২৪ জনের আত্মীয়স্বজনকে শনাক্ত লাশের অবশিষ্টাংশ মর্গ থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়। ৭ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে বাকি ২১ জনের অবশিষ্টাংশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হস্তান্তরের সময় ‘মৃতদেহের’ দাফন-কাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

দিনাজপুরের ফয়জুল ইসলামের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের লাল্টু মিয়ার মেয়ে লাবণ্য আক্তার, ভোলার চরফ্যাশনের রাকিব দেওয়ানকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি। ভোলার মহিউদ্দিন নামের একজনও নিখোঁজ রয়েছেন বলে স্বজনেরা দাবি করছেন। মহিউদ্দিন আর তাঁর খালাতো ভাই শামিম একসঙ্গে ওই ‘নরকে’ কাজ করতেন। শামিমের অবশিষ্টাংশের হদিস মিললেও মহিউদ্দিনের হদিস নেই। ফলে এখন তিনটা ঝোলায় চারটা নামের খোঁজ চলছে বলা যায়। একের সঙ্গে অন্যের দেহের অবশিষ্টাংশ মিশে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না! সাভারের তাজরীন অগ্নিকাণ্ডে যেমন সবাইকে শনাক্ত করা যায়নি।

আগে বলা হয়েছিল, ডিএনএ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল হাতে এলে জেলা প্রশাসন সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের টাকাসহ মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবে। এখন বোঝা গেল, ক্ষতিপূরণের টাকা বলতে সরকারি কোষাগার থেকে দেওয়া দাফনের টাকা।

ক্ষতিপূরণ আসলে কী?

এর মধ্যে কারখানা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে ইংরেজি ও বাংলা দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। বিজ্ঞাপন তারা দিচ্ছিল, যাতে তাদের শ্রমিক-দরদ সবার নজরে পড়ে। অথচ এই কারখানার শ্রমিকেরা আগুনে পুড়ে কয়লা হওয়ার আগে ক্ষুধার আগুনে পুড়ছিলেন। ঘটনার আগের দুই মাস বেতন ও ওভারটাইম না পাওয়ায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছিলেন তাঁরা। পুলিশের কথায় বিশ্বাস করে বিক্ষোভ বন্ধ করে তাঁরা কাজে ফিরে যান। কিন্তু ওয়াদা রাখেননি কারখানামালিক। সিদ্ধান্তমতো ৫ জুলাই আংশিক পাওনা পরিশোধের কথা থাকলেও কথা রাখেননি বিজ্ঞাপনদাতা মালিকেরা। যাঁরা পুড়ে মরলেন, তাঁদের বেতন থেকে গেল মালিকের সিন্দুকে।

তবে তাঁদের এই বিজ্ঞাপনকৌশলেও কিছু কাজ হয়েছে বৈকি। ক্ষতিপূরণের দাবিতে কতিপয় আইনজ্ঞ আদালতে যান। আদালত বিজ্ঞাপনের রেফারেন্স দিয়ে বলেছিলেন, ‘কোম্পানি বিজ্ঞাপন দিয়ে বলেছে, তারা খরচ দেবে। না দিলে আসবেন, আমরা দেখব। একটু অপেক্ষা করেন।’

মৃত ব্যক্তিদের কথিত ‘ক্ষতিপূরণ’ দেওয়ার কথা বলে যে কারখানা কর্তৃপক্ষ এত বিজ্ঞাপন দিয়েছিল, সেই একই কর্তৃপক্ষ বেঁচে থাকা শ্রমিকদের সব পাওনা মেটাতে গড়িমসি করতেই থাকে। গত ১৮ জুলাই বকেয়া পাওনার দাবিতে কিশোরগঞ্জে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন এই কারখানার শ্রমিকেরা। আগুনে পুড়ে যাওয়া ৫২ জন শ্রমিকের মধ্যে ১৭ জনই ছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার। মানববন্ধন থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়, যাতে ঈদের আগে কিশোরগঞ্জের শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের বিষয়টি সুরাহা হয়।

ক্ষতিপূরণের নানা মকশ!

৯ জুলাই ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে (শ্রমিককল্যাণ তহবিল) নিহত ব্যক্তিদের প্রতিটি পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি জানান, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। পরের দিনই (১০ জুলাই) আহত শ্রমিকদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়ার কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। মন্ত্রী অবশ্য এ-ও বলেছিলেন, যেসব শ্রমিক নিহত হয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে মালিকপক্ষের কাছ থেকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেওয়া হবে।

বাম গণতান্ত্রিক জোট দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি ও নিহত ব্যক্তিপ্রতি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। রূপগঞ্জে পুড়ে যাওয়া কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে নেতারা এ দাবি জানান। কিন্তু কেউই বলছেন না ক্ষতিপূরণের সাবেকি ধ্যানধারণা ভেঙে মধ্যম আয়ের দেশের সঙ্গে তাল রেখে একটা মানবিক আইন করতে হবে। একটা জাতীয় মানদণ্ড বা স্ট্যান্ডার্ড প্রণয়নের পথে কেউ হাঁটছেন না।

জাতীয় মানদণ্ড থাকা দরকার

একটা ঘটনা ঘটলে কিছু বুদ্‌বুদ ওঠে। আদালত, মানববন্ধন, মিছিল, কান্না, প্রেসক্লাব, টক শো হয়। তারপর আরেকটা ঘটনা ঘটে। আবার একই তৎপরতা চলতে থাকে। তাই একটা নবায়নযোগ্য জাতীয় মানদণ্ড আইন এখন সময়ের দাবি। এই মানদণ্ড আইনে থাকবে কী ধরনের দুর্ঘটনায় শ্রমিকেরা কী কী ক্ষতিপূরণ পাবেন। আহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের মাপকাঠি কী হবে, নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ কিসের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে, ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রক্রিয়া কী হবে? ব্যবস্থাপনার গাফিলতি থাকলে কোন প্রক্রিয়ায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। যাঁরা কারখানা বা শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ পরিদর্শনের দায়িত্বে আছেন, তাঁদের কোনো অবহেলা থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে—সবকিছু তাঁর মধ্যে থাকা দরকার। এমন একটা মানদণ্ড থাকলে আর তার নিরপেক্ষ প্রয়োগ হলে মৃত্যুকূপ বানিয়ে মানুষ হত্যা বন্ধ হবে।

মানদণ্ড আর ক্ষতিপূরণের মাপকাঠি ঠিক করার সময় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও কনভেনশন ১২১, তার প্রাসঙ্গিক সুপারিশমালা, ১৯৫৮ সালের মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন এবং সাভারের রানা প্লাজার দৃষ্টান্ত আমলে নিতে হবে। সাধারণভাবে যেকোনো ক্ষতিপূরণের প্রধান ভিত্তি হওয়া উচিত নিহত ও আহত ব্যক্তির হারানো আয়ের (লস অব আর্নিং) হিসাব। ঘটনার সময় তাঁর কত টাকা বেতন ছিল, সেটার চেয়ে বড় বিবেচনার বিষয় দুর্ঘটনায় নিহত বা আহত না হলে স্বাভাবিকভাবে কর্মক্ষম জীবনে তাঁর আয় কত হতো।

রানা প্লাজার দৃষ্টান্ত

২০১৩ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চের স্বতঃপ্রণোদিত রুলের পরিপ্রেক্ষিতে সাভার সেনানিবাসের জিওসিকে প্রধান করে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠিত হয়। কমিটির নাম হয় ‘রানা প্লাজার ভবনধসের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গের ক্ষতিপূরণের হার নির্ধারণের নিমিত্তে মহামান্য হাইকোর্ট নির্দেশিত কমিটি’। কমিটির তার প্রথম সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশকে প্রধান করে ‘ক্ষতিপূরণের হার ও ক্ষতিগ্রস্তের প্রকার নির্ধারণ সাব-কমিটি’ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালককে (হাসপাতাল) প্রধান করে ‘অসামর্থ্যতার প্রকৃতি নির্ধারণ সাব-কমিটি’ গঠন করা হয়।

২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি ক্ষতিপূরণের হার নির্ধারণ করে সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয় এবং তা হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়। কমিটির সুপারিশ ছিল প্রত্যেক নিহত, নিখোঁজ (যাচাই সাপেক্ষে) শ্রমিকের পরিবার এবং স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যাওয়া শ্রমিক ১৪ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন। আর আহত হওয়ার ধরন অনুযায়ী শ্রমিকেরা পাবেন দেড় লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সাড়ে সাত লাখ টাকা। এই অর্থ কে কে দেবে, তা ঠিক করে দেবেন আদালত। এ পর্যায়েই এটা অমীমাংসিত থাকে।

তবে রানা প্লাজার নিহত, আহত শ্রমিকেরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন রানা প্লাজা ডোনার্স ট্রাস্ট ফান্ড থেকে। পোশাকশিল্পের আন্তর্জাতিক ক্রেতা গোষ্ঠীর অনুদানে তিন কোটি মার্কিন ডলারের ওই তহবিল গঠিত হয়। আর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ভুক্তভোগীদের অর্থসহায়তা বাবদ দেওয়া ২৫ লাখ ডলার এই তহবিলের সঙ্গে যুক্ত হয়। বিষয়টি সমন্বয় করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর নেতৃত্বাধীন রানা প্লাজা সমন্বয় কমিটি। নিহত শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যসংখ্যা, আহত শ্রমিকদের আহতের ধরন অনুসারে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী, একজন নিহত শ্রমিকের পরিবার সর্বোচ্চ ৭৮ লাখ টাকা পেয়েছেন। ২৫ লাখ টাকা করে পেয়েছেন ৬১ জন নিহত শ্রমিকের পরিবার। আর নিহতের জন্য সর্বনিম্ন ক্ষতিপূরণ ছিল ১০ লাখ টাকা।

নানা ধরনের ক্ষতিপূরণের প্যাকেজ

ক্ষতিপূরণের কোনো জাতীয় মানদণ্ড না থাকায় গণমাধ্যমের প্রচার, জনরোষ, নানা মহলের চাপ ইত্যাদি দুর্ঘটনায় আহত, নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে ভূমিকা রাখে বলে শ্রমিকনেতারা মনে করেন। এ ক্ষেত্রে ধনী-গরিবের বিষয়টিও মনের কোণে যে উঁকি দেয় না, তা হলফ করে বলা যাবে না।

এই প্রসঙ্গে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে আগুনে পুড়ে নিহত চারজনের ক্ষতিপূরণের কথা উল্লেখ করা যায়। অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ হিসেবে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারপিছু ২৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখনো হয়নি। অন্যদিকে তাজরীন পোশাক কারখানায় নিহত ব্যক্তিদের জন্য শেষ পর্যন্ত সাত লাখ টাকা করে রফা হয়। ফিনিক্স ভবনের দুর্ঘটনার পর নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা উচ্চ আদালত থেকে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

দুর্ঘটনার দায়দায়িত্ব

ক্ষতিপূরণের তর্ক যতই জটিল হতে থাকে, শ্রমিক নিরাপত্তার দায় নির্ধারণের আলোচনা ততই হারিয়ে যেতে থাকে। হাসেম ফুডসের ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটছে। এই আলোচনায় ব্যাংকের দায়টা বরাবরের মতো নজরের বাইরে থেকে যাচ্ছে। যাঁরা কারখানায় টাকা লগ্নি করেন, তাঁরা কি দেখেন না তাঁরা কোথায় টাকা ঢালছেন? সেটা মৃত্যুকূপ না কারখানা?

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাসে সজীব গ্রুপের ১১টি কোম্পানির নামে ব্যাংকঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এককভাবে সবচেয়ে বেশি ঋণ হাসেম ফুডস লিমিটেডের নামে, ৯৯৩ কোটি টাকা। এই কারখানায় পুড়ে কয়লা হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ।

দেশের অন্তত এক ডজন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গিয়েছে এই গ্রুপটিতে। একটা ব্যাংকও কি কারখানার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করেনি? কেন করেনি? তার উত্তরও খুঁজতে হবে। তারা চাইলে কারখানাটির চেহারা ভিন্ন হতে পারত। জগৎ শেঠের শর্ত ইংরেজদেরও মানতে হয়েছিল! হাসেম সাহেবরা মানবেন না, তা কি হয়? সংবাদকর্মীরা এই প্রসঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংকের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে শুধু হাহুতাশ শুনেছেন।

রূপগঞ্জ মৃত্যুকূপ ব্যাংকগুলোকে ঘুম থেকে ডেকে তোলার একটা ডাক বলে মনে করছি। শ্রমিকের নিরাপত্তা ব্যাংকেরও দেখার বিষয়। ব্যাংকগুলোকে দেখতে হবে, যে উদ্যোক্তার হাতে তারা মানুষের আমানতের টাকা তুলে দিচ্ছে, তাদের কাছে ১১ বছর ৪ মাস বয়সের হাসনাইন, ১২ বছরের শান্তা, ১৪ বছরের মুন্না, ১২ বছরের রুমা ও ১৫ বছরের নদিয়া, শাহানা ও নাজমুল, ১৬ বছরের ফয়সাল, ১৭ বছরের ইউসুফ ও আল আমীনের মতো শিশু-কিশোরেরা কতটা নিরাপদ। কারখানার ভেতরে কতটা নিশ্বাস নিতে পারেন খেটে খেতে আসা নারী-পুরুষেরা?

  • লেখক গবেষক

    nayeem 5508 @gmail.com