লেখক মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান সিপিজের

লেখক মুশতাক আহমেদ
ফাইল ছবি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দী লেখক মুশতাক আহমেদের (৫৩) মৃত্যুর ঘটনায় দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। পাশাপাশি কারাবন্দী কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা ও সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠন সিপিজে গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এসব আহ্বান জানায়।

মুশতাক আহমেদ গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে ছিলেন। কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে কারাগারের ভেতর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় তাঁকে প্রথমে কারা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তাঁকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত ঘোষণা করেন।
গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোহাম্মদ শরীফ জানান, কাশিমপুর কারাগার থেকে মুশতাক আহমেদকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।

গত বছরের মে মাসে লেখক মুশতাক আহমেদ, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কথাবার্তা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তাঁরা দুজনসহ মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে র‌্যাব। সেই মামলায় দুজন জামিনে মুক্তি পান। তবে মুশতাক ও কিশোরের জামিন আবেদন নাকচ হয়।

সিপিজে বলেছে, মুশতাক আহমেদের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সংগঠনটিকে বলেছেন, এই লেখকের মৃত্যুকালীন পরিস্থিতি ও মৃত্যুর কারণ তাঁরা এখনো জানেন না। মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিষয়ে কর্তৃপক্ষ তাঁর (জ্যোতির্ময় বড়ুয়া) বা মুশতাক আহমেদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁরা ঘটনাটি জেনেছেন।

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সিপিজেকে বলেন, ২৩ ফেব্রুয়ারি মুশতাক আহমেদকে আদালতে হাজির করা হয়। তখন তাঁর স্বাস্থ্য ভালোই ছিল। সেই দিন তিনি আদালতে কার্টুনিস্ট কিশোরের স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান।

সিপিজের এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক আলিয়া ইফতেখার বলেন, কারাগারে মুশতাক আহমেদের মৃত্যু এক বিরাট ও অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁকে আটক করে কখনোই কারাগারে পাঠানো উচিত হয়নি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই ওই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের অনুমতি দিতে হবে। সেই সঙ্গে বারবার ও অযৌক্তিকভাবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।

সংবাদ মাধ্যমের খবর ও আইনজীবীর বরাত দিয়ে সিপিজে বলেছে, একই মামলার শুনানির সময় কার্টুনিস্ট কিশোর তাঁর ভাইয়ের কাছে একটি চিরকুট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, পুলিশি হেফাজতে তাঁকে ভীষণভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। এতে পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। আঘাতের কারণে ও যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে কানেও ক্ষত হয়েছে।

সিপিজে বলেছে, মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তারা বাংলাদেশের কারা সদর দপ্তর ও কারা মহাপরিদর্শকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কারও মন্তব্য জানতে পারেনি সিপিজে।