শান্তি ও সম্প্রীতিতে শুরু থেকে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে প্রথম আলো। শিক্ষার্থী, তরুণসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ও দেশের কথা তুলে ধরে পত্রিকাটি। এটি শুধু সংবাদপত্র নয়, তার চেয়ে বেশি কিছু। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে প্রথম আলোর কাছে আরও অনেক প্রত্যাশা।
প্রথম আলোর ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে আয়োজিত প্রীতিসম্মেলনে পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীরা এসব কথা বলেন। রাঙামাটি জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আজ শুক্রবার বিকেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি দুই পর্বে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্বে ছিল প্রীতিসম্মেলন ও মতবিনিময়। দ্বিতীয় পর্বে ছিল লেখক মহিউদ্দিন আহমদের সদ্য প্রকাশিত বই পার্বত্য চট্টগ্রাম: শান্তিবাহিনী জিয়া হত্যা মনজুর খুন নিয়ে আলোচনা।
‘আমরা প্রথম আলোর সঙ্গে আছি। তবে পত্রিকাটির কাছে আমাদের প্রত্যাশা আরও বেশি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাহাড়ের যে চিত্র তুলে ধরা হয়, তা সব সময় সত্য নয়। আমরা সত্যিকার শান্তি চাই। পাহাড়ি–বাঙালিতে সম্প্রীতি রয়েছে। যারা সত্যিকার শান্তি বিনষ্ট করছে, তাদের চিহ্নিত করে পত্রিকায় তুলে ধরুন।’গৌতম দেওয়ান, সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি
প্রীতিসম্মেলনে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, লেখক, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, তরুণ উদ্যোক্তা, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ নানা শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
পাহাড়ের ব্যান্ড রদং-এর শিল্পীদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে প্রীতিসম্মেলন শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর আয়রনম্যান ও প্রথম আলোর ওপর দুটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, মানবাধিকারকর্মী নিরূপা দেওয়ান ও পত্রিকার এজেন্ট বাসনা দাশ। এ ছাড়া প্রথম আলোর কাছে নিজেদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি জানিয়ে নানা মত তুলে ধরেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাছরিন ইসলাম, বিএনপির রাঙামাটি জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রশিদ, সাংবাদিক সুনীল দে, উন্নয়নকর্মী মো. আলী, উদ্যোক্তা সুস্মিতা চাকমা ও অন্বি চাকমা।
মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, সব গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রথম আলোর ভূমিকা অনন্য।
গৌতম দেওয়ান বলেন, ‘আমরা প্রথম আলোর সঙ্গে আছি। তবে পত্রিকাটির কাছে আমাদের প্রত্যাশা আরও বেশি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাহাড়ের যে চিত্র তুলে ধরা হয়, তা সব সময় সত্য নয়। আমরা সত্যিকার শান্তি চাই। যারা সত্যিকার শান্তি বিনষ্ট করছে, তাদের চিহ্নিত করে পত্রিকায় তুলে ধরুন।’
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান পত্রিকাটির বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, ২০২১ সালের আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার জরিপে এসেছে, ৫০ লাখ পাঠক প্রতিদিন প্রথম আলোর ছাপা কাগজ পাঠ করেন। কোনো না কোনোভাবে সপ্তাহের অন্তত এক দিন পত্রিকাটি পড়েন, দেখেন ১ কোটি ৮ লাখ মানুষ। সারা বিশ্বে যত বাংলা ওয়েবসাইট আছে, তার মধ্যে প্রথম আলো এক নম্বর। ২১০টি দেশের ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে সংবাদ পড়েন। দক্ষিণ এশিয়ার সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে নিউজ ক্যাটাগরিতে প্রথম আলোর অবস্থান ষষ্ঠ।
বিভিন্ন ব্যক্তির প্রত্যাশার জবাবে সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের অবস্থান পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে। আজ হোক কাল হোক চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। পাহাড়ের ভূমি সমস্যার সমাধান করতে হবে।’ তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও একটি অঞ্চলে সমস্যা থাকবে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার পথ খোলা রাখতে হবে।
‘আমাদের অবস্থান পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে। আজ হোক কাল হোক চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। পাহাড়ের ভূমি সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
গতকালের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লেখক জ্ঞানেন্দ্র বিকাশ চাকমা, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রীতি প্রসূন বড়ুয়া, বিএনপির কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক দীপেন দেওয়ান, শিল্পকলা একাডেমির সাবেক পরিচালক মুজিবুল হক, নারীনেত্রী টুকু তালুকদার, প্রেসক্লাবের সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন, শিক্ষাবিদ-লেখক মং সানু চৌধুরী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক, প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের পরিচালক নুরুল আবছার, উন্নয়নকর্মী নুকু চাকমা, ওয়ার্ড কাউন্সিলর কালায়ন চাকমা, কলেজশিক্ষক বিপন চাকমা, আইনজীবী রাজীব চাকমা প্রমুখ।
বই নিয়ে আলোচনা
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে লেখক মহিউদ্দিন আহমদের সদ্য প্রকাশিত বই পার্বত্য চট্টগ্রাম: শান্তিবাহিনী জিয়া হত্যা মনজুর খুন নিয়ে আলোচনা করা হয়। লেখক জানান, গবেষণা, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বইটি তিনি লিখেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিপরীতে জন্ম নিয়েছে জুম্ম জাতীয়তাবাদ। ফলে বিরোধ তৈরি হয়ে একসময় গেছে তা সশস্ত্র ধারায়। ঝরেছে অনেক রক্ত। অনুসন্ধানী গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ এ বইয়ে তুলে ধরেছেন জুমপাহাড়ের রাজনীতির ভাঙাগড়ার পূর্বাপর।
প্রথমা প্রকাশন প্রকাশিত বইটি বাজারে এসেছে ফেব্রুয়ারিতে। এরই মধ্যে বইটির দুটি মুদ্রণ শেষ হয়েছে।
বইটির ওপর আরও আলোচনা করেন রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হিরোহিতো চাকমা ও স্থানীয় রাজনীতিক বিজয় কেতন চাকমা।