শামীমের ঘনিষ্ঠদের ২৩ কোটি টাকা চাঁদা আদায়!
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী আনন্দ পরিবহনের বাসমালিকেরা এবার প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। এতে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মুক্তার হোসেন ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়াল গতকাল মঙ্গলবার স্মারকলিপি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী এটি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হবে।
স্মারকলিপিতে আনন্দ পরিবহনের ৩৮ জন মালিক স্বাক্ষর করেন। এতে বলা হয়, গত সাড়ে চার বছরে নারায়ণগঞ্জের চিহ্নিত গডফাদারদের ছত্রচ্ছায়ায় মুক্তার-দিদার চক্র আনন্দ পরিবহন থেকে ২৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছে।
এতে অভিযোগ করা হয়, আনন্দ পরিবহন ২০০১ সাল থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে সুনামের সঙ্গে যাত্রী পরিবহন করে আসছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তার হোসেন, সাইফুল উদ্দিন, জয়নাল আবেদীন, মোস্তফা কামাল, সুলতান ড্রাইভার ও আহাম্মদ আলী অস্ত্রের মুখে আনন্দ পরিবহনের কার্যালয় দখল করেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, পরিবহনের কার্যালয় দখলের পর থেকে মুক্তার ও তাঁর সহযোগীরা আনন্দ পরিবহন থেকে প্রতিদিন এক লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা নেন। এই হিসাবে গত সাড়ে চার বছরে তাঁরা আনন্দ পরিবহন থেকে মোট ২১ কোটি ১৮ লাখ টাকা চাঁদা নেন। এ ছাড়া পরিবহনে প্রতিটি নতুন বাস অন্তর্ভুক্ত করার জন্য গড়ে দুই লাখ টাকা করে আরও এক কোটি টাকা নেন। চাঁদাবাজির কারণে অনেক মালিক তাঁদের বাস বিক্রি করতে বাধ্য হন।
এতে বলা হয়, মুক্তারের সহযোগী দিদারের ভাই কাজল কোনো বাসের মালিক না হয়েও প্রতিদিন গাড়িপ্রতি ৩০০ টাকা আদায় করে জাওলি বাবদ ৩৬ লাখ টাকা চাঁদা নেন। চালক ও সহকারীর বেতন থেকে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। এই হিসাবে মুক্তার, দিদার ও কাজল চালক ও সহকারীদের কাছ থেকে কমপক্ষে এক কোটি ২০ লাখ ২০ হাজার টাকা লুটপাট করেন। চাঁদার টাকা দিয়ে মুক্তার গংরা ঢাকার মিরপুরে ফ্ল্যাট, প্লট কিনেছে।
তবে মুক্তার হোসেন দাবি করেন, ‘আমি কোনো চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নই। এটা ঢাহা মিথ্যা অভিযোগ। আমার কোনো জমি নেই। একটা চক্র আমাদের সুনাম নষ্ট করতে নেমেছে।’
জানা গেছে, মুক্তার আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত। নারায়ণগঞ্জের পরিবহন খাতের মূল নিয়ন্ত্রক মুক্তার। শামীমের ভাই সাংসদ নাসিম ওসমানের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও মুক্তারকে দেখা যায়। নাসিম-সেলিম ও শামীম ওসমানের যেকোনো কর্মসূচিতে লোক পরিবহনের জন্য তিনি বাস সরবরাহ করেন।
এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর বন্ধন পরিবহনের মালিকেরা প্রধানমন্ত্রীর বরাবর একই ধরনের অভিযোগ তুলে স্মারকলিপি দেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, শামীমের ছত্রচ্ছায়ায় চেঙ্গিস ও তাঁর সহযোগীরা বন্ধন পরিবহন থেকে সাড়ে চার বছরে কমপক্ষে সাত কোটি নয় লাখ ৫২ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছেন। ৪ সেপ্টেম্বর তাঁরা চাঁদা দেওয়া বন্ধ করে বাসের ভাড়া দুই টাকা কমিয়ে দেন। এর আগে ২৩ আগস্ট নসিব পরিবহনের মালিকেরা সংবাদ সমেঞ্চলন করে অভিযোগ করেন, শামীমের ছত্রচ্ছায়ায় তাঁর শ্যালক এহসানুল হাসান নসিব পরিবহন থেকে একই সময়ে কমপক্ষে ছয় কোটি টাকা চাঁদা আদায় করেন। গত ২২ আগস্ট তাঁরা বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেন।
নারায়ণগঞ্জের যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, নাসিম-সেলিম-শামীম ওসমান ও তাঁদের সহযোগীরা গত সাড়ে চার বছরে নারায়ণগঞ্জের পরিবহন খাত থেকে ২০০ কোটি টাকা চাঁদা নিয়েছেন। দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করে ওই অর্থ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জবাসীর কল্যাণে ব্যবহার করা উচিত।