শিক্ষাবিদ নাজমা চৌধুরী আর নেই
শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক নাজমা চৌধুরী রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ রোববার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাদ আসর রাজধানীর গুলশানে আজাদ মসজিদে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বনানী কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হবে।
নাজমা চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। দেশের নারীশিক্ষা ও নারী অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বিশেষ অবদান রয়েছে নাজমা চৌধুরীর। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর সম্পাদিত বই ‘উইমেন অ্যান্ড পলিটিকস ওয়ার্ল্ডওয়াইড’ ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত শ্রেষ্ঠ প্রকাশনা হিসেবে আমেরিকান পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক পুরস্কৃত হয়।
১৯৪২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সিলেট শহরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন নাজমা চৌধুরী। তাঁর বাবা চৌধুরী ইমামুজ্জামান পুরকৌশলী ছিলেন। তাঁর ছিল বদলির চাকরি, নানা জায়গায় বাবার সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বাবার কর্মসূত্রে ঢাকা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জয়গায় পড়াশোনা করেছেন। তাঁর মা আমিরুন্নেসা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। প্রচুর বই পড়তেন।
১৯৬৩ সালে নাজমা চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনায় যোগ দেন।কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে লন্ডন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ওরিয়েনটেল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৭২ সালে দেশে ফিরে আবার অধ্যাপনায় মন দেন। ১৯৮৪-৮৭ সালে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে নারী উন্নয়ন ও রাজনীতি-সম্পর্কিত কোর্স প্রবর্তন করেন। নারীর বৈষম্যমূলক অবস্থান বিশ্লেষণের উদ্দেশে তিনি এসব বিষয়ে এমফিল ও পিএইচডি গবেষণায় উৎসাহিত করেন। তিনি এ বিষয়ে কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী-সম্পর্কিত গবেষণায় উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সেন্টার ফর উইমেন স্টাডিজ প্রতিষ্ঠার প্রয়াস নেন। এর মধ্যে ১৯৮৮ সালে ফুল ব্রাইট ফেলোশিপের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন মাস ভিজিটিং স্কলার হিসেবে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন।তাঁদের নানা প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় ২০০০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়।২০০৩ সালে তিনি পুরোপুরি উইমেন স্টাডিজ বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে এই বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ সরকারের কর্মপরিকল্পনা তৈরির সার্বিক কাজে নেতৃত্ব দেওয়া, ফলাফল অর্জন করা ও তা বাস্তবায়নের জন্য ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ, শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেন। ১৯৮০ সালে ইউনেসকোর সম্মেলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এ ছাড়া ১৯৮৫ সালে নাইরোবি বিশ্ব নারী সম্মেলনে তিনি প্রতিনিধি হিসেবে ভূমিকা রাখেন। নাজমা চৌধুরী বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এবং আজীবন সদস্য ছিলেন। উইমেন ফর উইমেনের সাবেক সভাপতি, হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি।
২০০৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তাঁকে ‘রোকেয়া চেয়ার’ সম্মাননায় ভূষিত করে। এর আগে ১৯৯৬ সালে গবেষক হিসেবে অন্যান্য শীর্ষ ১০ পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর সম্পাদিত বই উইমেন অ্যান্ড পলিটিকস ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত শ্রেষ্ঠ প্রকাশনা হিসেবে আমেরিকান পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন কতৃর্ক পুরস্কৃত হয়। ২০০৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানজনক ‘প্রফেসর ইমেরিটাস’ পদে উন্নীত হন। একই বছর দেশের অন্যতম সম্মানজনক পুরস্কার ‘একুশে পদক’-এ ভূষিত হন নাজমা চৌধুরী।
তাঁর স্বামী সাবেক প্রধান বিচারপতি মাইনুর রেজা চৌধুরী। ২০০৪ সালে তিনি মারা যান।নাজমা চৌধুরীর বড় মেয়ে লামিয়া চৌধুরী প্রবাসে থাকেন। ছোট মেয়ে বুশরা হাসিনা চৌধুরী ও তাঁর স্বামী মো. ওবায়দুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক।
প্রধান বিচারপতির শোক
শিক্ষাবিদ ও সাবেক প্রধান বিচারপতি মাইনুর রেজা চৌধুরীর স্ত্রী নাজমা চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। প্রধান বিচারপতি নাজমা চৌধুরীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন। পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।