শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের ভীতি দূর করা জরুরি

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে নির্ভয়ে যেতে পারে, সে ব্যবস্থা দরকার। অভিভাবকদেরও আশ্বস্ত করতে হবে।

করোনা মহামারির প্রকোপে দীর্ঘদিন স্কুল–কলেজ বন্ধ ছিল। কিছুদিন পর তা আবার খুলে দেওয়া হবে এমন খবরে রাজধানীর স্কুলগুলোতে চলছে ক্লাস রুম পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ। গত বুধবার রাজধানীর মিরপুর ১০ এলাকায় শহীদ আবু তালেব উচ্চবিদ্যালয়ে
ছবি: আশরাফুল আলম

বহুদিন পর ছাত্রছাত্রীরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরবে। খুলবে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা। শিক্ষার্থীদের এই আগমন সুন্দর হোক, শুভ হোক, স্বাস্থ্যসম্মত হোক, নিরাপদ হোক। প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী ও তাদের বাবা-মা-অভিভাবকদের অপেক্ষার অবসান ঘটবে।

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত বছরের ১৭ মার্চ বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। সেই থেকে এ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যায়নি। খুব কম দেশই এত দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। করোনার কারণে কলকারখানা বন্ধ রাখার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষাগত, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আর্থিক কী ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণের কোনো উদ্যোগের কথা জানা যায়নি।

অনেকে বলছেন, শরীরের তাপমাত্রা মেপে প্রতিষ্ঠানে ঢুকলে শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এখানে নানা সমস্যাজনক দিকও আছে। প্রথমত, তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র সব প্রতিষ্ঠান কিনতে পারবে না। তাপমাত্রা পরীক্ষা করে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ঢোকাতে গেলে অনেক সময় ব্যয় হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ব্যবস্থা করা আরও কঠিন। তবে অনুমান করা যায়, উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়ে এমন প্রতিষ্ঠানে এই ব্যবস্থা থাকবে।

জাতিসংঘ শিশু তহবিল বা ইউনিসেফ গত ১২ জুলাই বলেছিল, স্কুল খুলতে হবে। করোনা সংক্রমণ শূন্যে নামা পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে ঝুঁকির দিক দিয়ে প্রথম কাতারে নেই, এমন স্পষ্ট প্রমাণ আছে। ওই তারিখ (১২ জুলাই) পর্যন্ত ১৯টি দেশের স্কুল বন্ধ ছিল। সেই তালিকায় বাংলাদেশ ছিল। এখনো আছে। থাকবে আরও কিছুদিন।

যদিও স্কুল খোলার বিষয়ে কয়েক মাস ধরেই আলোচনা চলছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ১৩ সেপ্টেম্বর বা তার কাছাকাছি সময়ে মেডিকেল কলেজগুলো খুলে দেওয়া হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীরা যাতে নিরুদ্বিগ্ন চিত্তে আসে, সে ব্যবস্থা দরকার; অন্যদিকে মহামারির মধ্যে সন্তানকে স্কুলে রেখে অভিভাবকদের
উৎকণ্ঠা বেড়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভারসাম্য দরকার। এই ভারসাম্য আনার দায়িত্ব একা সরকারের নয়, একা শিক্ষা বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়, দায়িত্বটি গোটা জাতির।

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, আগে স্বাস্থ্য, পরে শিক্ষা। এত কাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল সংক্রমণের কারণে। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা–বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে সংক্রমণ প্রতিরোধেই জোর দিতে হবে। প্রাক্-স্কুল, প্রাথমিক স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বয়স ও আচরণে পার্থক্য আছে। সর্বজনীন ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রত্যেকের জন্য পৃথক পৃথক বিধিবিধান করতে হবে। যা–ই করা হোক না কেন, তা শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। গ্রহণযোগ্য না হলে তারা তা মানবে না। বিধি লঙ্ঘন করলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে।

বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা

মহামারির শুরুর দিকে জাপান তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। তবে গত বছরের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহেই জাপান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতির নির্দেশিকা চূড়ান্ত করে রাখে। তাতে শ্রেণিকক্ষে খোলা হাওয়া (ক্রস ভেন্টিলেশন), প্রতিষ্ঠানে সমাবেশ বা জটলা কমানো, মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়া, শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করা—এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ ছাড়া কারও করোনা শনাক্ত হলে তাকে প্রতিষ্ঠানে আসা থেকে বিরত রাখা, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেও বলা হয়েছিল।

প্রথম আলোর জার্মানি প্রতিনিধি সরাফ আহমেদ জানান, দেশটিতে সংক্রমণ বেশি থাকার সময়ে ক্লাস হতো অনলাইনে। সংক্রমণ কমলে শিক্ষার্থীদের স্কুলে নেওয়া শুরু হয়। তবে সব শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে আসতে দেওয়া হয়নি। কোনো ক্লাসে ৩০ জন শিক্ষার্থী থাকলে এক দিন ১৫ জন, পরের দিন ১৫ জন করে ক্লাসে আসবে, এমন নিয়ম করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের সময় সব শিক্ষার্থীর মুখে মাস্ক থাকতে হবে। ক্লাসে মাস্ক পরার দরকার নেই। টিফিনে বা ছুটিতে ক্লাসের বাইরে থাকলে মাস্ক পরতে হবে। এ ছাড়া প্রতি মঙ্গলবার ও শুক্রবার দ্রুত শনাক্তকরণ কিট দিয়ে শিক্ষার্থীদের করোনা পরীক্ষা করতে হয় বাবা-মাকে। রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষার ফলাফল ক্লাস
শিক্ষককে জানাতে হয়। ক্লাস শিক্ষক তা অধ্যক্ষকে জানান, অধ্যক্ষ তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠান। জার্মানির ১৭টি রাজ্যে এসব নিয়মকানুনের কিছু তারতম্য আছে। সরাফ আহমেদ নিজে একজন স্কুলশিক্ষক।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের করণীয় বিষয়ে বেশ বড় নির্দেশিকা তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। তাতে স্বাস্থ্য খাতে সমতা, টিকাকরণ, মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, স্কুলের সহযোগী কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বায়ু চলাচল (ভেন্টিলেশন), হাত ধোয়া—এসব বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া আছে। খেলাধুলা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমের সময় করণীয়ও উল্লেখ করা হয়েছে সিডিসির নির্দেশনায়।

জাপান, জার্মানি বা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের তফাত অনেক। আর্থসামাজিক অবস্থা, শিক্ষার আয়োজন ও পদ্ধতিতে মিলের চেয়ে অমিলই বেশি। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও পার্থক্য চোখে পড়ার মতো। মহামারি মোকাবিলায় ওই দেশগুলো ভালো করেছে, বাংলাদেশ খারাপ করেছে এটি বলার সময় এখনো আসেনি। ওই দেশগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য যেসব কৌশল অবলম্বন করেছে, তার সবকিছু বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত নয়, কিছু ক্ষেত্রে জুতসইও নয়। যেমন প্রতি সপ্তাহে দ্রুত শনাক্তকরণ কিটের ব্যবহার বাংলাদেশে সম্ভব নয়। বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো করে খুলতে হবে। ওই সব দেশের কিছু পদক্ষেপ অনুসরণ করাই যায়, যেমন মহামারি মোকাবিলার ক্ষেত্রে করা হয়েছে।

সর্বজনীনতার সমস্যা

অভিযোগ আছে, বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য রয়েছে। এই বৈষম্য গ্রামে ও শহরে, বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। বৈষম্য আছে প্রাক্-স্কুল, প্রাথমিক স্তরে, মাধ্যমিক স্তরে, কলেজে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে। করোনার কারণে তিস্তা চরের জানালা-দরজাহীন প্রাথমিক স্কুলটি বন্ধ আছে, বন্ধ আছে রাজধানীর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। আর্থসামাজিক অবস্থার দুই প্রান্তে থাকা এই দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানের মাঝে আরও নানা ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে।

এখন দেড় লাখের বেশি প্রতিষ্ঠানই খুলে দিতে হবে। এই বৈচিত্র্যের কারণে সবার জন্য একধরনের বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা গত সপ্তাহে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সবাইকে মাস্ক পরার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু শিশুদের (৫ থেকে ১২ বছর) মাস্ক পরার বিষয়টিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দিচ্ছে না। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়ার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

সর্বজনীন ব্যবস্থা

সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রত্যেককে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। শিশু নয় এমন অনেক শিক্ষার্থী দীর্ঘ সময় মাস্ক পরলে শ্বাসকষ্টে ভোগে। এদের ক্ষেত্রে কী হবে, তা এখনো পরিষ্কার করে কেউ কিছু বলছেন না।

অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানে আসার পর কিছু শিক্ষার্থীর মাস্ক নষ্ট বা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে। এ কারণে শ্রেণিকক্ষে বা প্রতিষ্ঠানের সুবিধামতো স্থানে কিছু মাস্ক সব সময়ের জন্য মজুত রাখার কথা ভাবতে হবে। ফটক বন্ধ থাকার কারণে শহরের অনেক প্রতিষ্ঠানের সামনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় জমে। ভিড় এড়ানোর পথ খুঁজতে হবে। ক্লাস শুরুর আগে প্রতিটি বেঞ্চে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন অনেকে। অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে জীবাণুনাশক সংগ্রহ বা কেনা সম্ভব, তবে তা বেঞ্চে ছিটিয়ে দেওয়ার মতো লোকবল নেই।

সাবান-পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুলে সংক্রমণ কমে। কিন্তু এই ব্যবস্থা কি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করতে পারবে? রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরের কিছু প্রতিষ্ঠান শ্রেণিকক্ষে হাতে মাখা জীবাণুনাশক সরবরাহ করতে পারবে। তবে এই ব্যবস্থার বাইরে থাকবে দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী।

অনেকে বলছেন, শরীরের তাপমাত্রা মেপে প্রতিষ্ঠানে ঢুকলে শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এখানে নানা সমস্যাজনক দিকও আছে। প্রথমত, তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র সব প্রতিষ্ঠান কিনতে পারবে না। তাপমাত্রা পরীক্ষা করে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ঢোকাতে গেলে অনেক সময় ব্যয় হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ব্যবস্থা করা আরও কঠিন। তবে অনুমান করা যায়, উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়ে এমন প্রতিষ্ঠানে এই ব্যবস্থা থাকবে।

বদ্ধ ঘরে সংক্রমণ বেশি ঘটে। তাই শ্রেণিকক্ষের দরজা, জানালা—সব খোলা রেখে শিক্ষাদানের কথা বলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে গ্রামের শিক্ষার্থীরা সুবিধাজনক অবস্থায় আছে।

সরকারি উদ্যোগ

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালুকরণ নির্দেশনা’ প্রকাশ করে এ বছরের জানুয়ারি মাসে। ৩৯ পৃষ্ঠার ওই নির্দেশনায় নিরাপদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিকল্পনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করে তোলা, প্রতিষ্ঠান চালু করা এবং প্রতিষ্ঠান চলাকালে করোনার বিস্তার রোধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে। এ ছাড়া এই কাজে কীভাবে অংশীজনদের যুক্ত করা হবে, বাড়তি অর্থ কীভাবে সংগ্রহ করা যাবে, সে বিষয়েও নির্দেশনা আছে।

ওই নির্দেশনায় মৌলিক কিছু মানদণ্ডও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে শ্রেণিকক্ষে, চত্বরে বা খোলা জায়গায় ১ মিটার বা ৩ ফুট দূরত্বে শিক্ষার্থীদের বসার বা চলাফেরার ব্যবস্থা করতে হবে। মাস্ক পরার বিষয়ে নির্দেশনায় বিস্তারিত আছে। বলা হয়েছে, ৬ থেকে ১১ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে মাস্ক পরা নির্ভর করবে রোগবিস্তারের ঝুঁকির ওপর। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, রোগবিস্তারের ঝুঁকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়; শিক্ষার্থীদের পক্ষে তো নয়ই।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একই ধরনের একটি নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য। তবে এই দুটি নির্দেশনার বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা কমই জানে। গতকাল সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, খোলার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে করোনার টিকার আওতায় আনতে হবে।

দরকার জোর প্রচার

সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে ও ক্লাস চলাকালে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা স্পষ্ট করে দেশবাসীকে জানানো দরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের করণীয় বিষয়গুলো ওই দুটি নির্দেশনায় আছে। কী আছে, তা অভিভাবকদেরও জানতে হবে। জানলে তাঁরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্তানদের পাঠাতে স্বস্তি বোধ করবেন।

অন্যদিকে অভিভাবকদেরও অনেক দায়িত্ব আছে। প্রতিদিনই শিক্ষার্থীকে প্রস্তুত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরজা খোলার আগে এই দুই পক্ষের করণীয় বিষয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা ও প্রচার-প্রচারণা হওয়া দরকার। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকেরা সচেতন আচরণ করলেই দেশের সব বয়সের শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপদে থাকবে। শুরুর দিনে প্রিয় প্রাঙ্গণে যেন থাকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অভ্যর্থনার আয়োজন। এসব নিয়ে জাতীয়ভাবে এবং প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে জোর প্রচার-প্রচারণা দরকার।

পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারপারসন তৌফিক জোয়ারদার বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। শিক্ষার্থীদের হাঁচি-কাশি শিষ্টাচার, স্বাস্থ্যবিধি মানা, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকা—এসব শেখানোর সুযোগ এসেছে। এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগানোর সময় এখনই।’