শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে সমাজের সামর্থ্যবান বিদ্যানুরাগী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৬ উদ্বোধন এবং প্রাথমিক শিক্ষা পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান। খবর বাসসের।
শেখ হাসিনা বলেন, নিজ দায়িত্বে নিজ নিজ এলাকার শিক্ষাকার্যক্রম উন্নত করার জন্য শিশুদের ‘মিড ডে মিল’ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। নিজেদের উদ্যোগেই বাচ্চাদের টিফিন তৈরি করে খাওয়ানো যায়। অতীতে এভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলত। তিনি শিশুদের স্কুলে মিড ডে টিফিনের মানোন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের সঙ্গে যেন কোনোভাবেই শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ না ঘটে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। মাদ্রাসা, মসজিদ এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, গত সাত বছরে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বিনা মূল্যে ১৯৩ কোটি বই বিতরণ করা হয়েছে। এবারও ১ জানুয়ারি দেশব্যাপী ‘বই উৎসব’ হয়েছে এবং মাধ্যমিক পর্যন্ত ৪ কোটি ৪৪ লাখ ১৬ হাজার ৭২৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনা মূল্যে নতুন পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ২০১০ সালে আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছি। এতে প্রাথমিক শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ, আচরণ ও ভাষা শেখানোর বিষয়টি মৌলিক স্তর হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব বর্ণমালায় পাঠ্যপুস্তক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
৪৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ স্বাক্ষরতা কর্মসূচি’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ ২০১৪ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। সহকারী শিক্ষকের বেতন এক ধাপ বাড়ানোর প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের প্রাথমিক শিক্ষা, ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১০৬ জনকে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০১৫’তে ভূষিত করেন। পুরস্কার বিজয়ী ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, বিদ্যোৎসাহী ও বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিদের হাতে প্রধানমন্ত্রী ক্রেস্ট, সনদ ও উপহারের চেক তুলে দেন।
পুরস্কার বিজয়ীরা হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন (কুষ্টিয়া), শ্রেষ্ঠ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান খান (বিয়ানীবাজার, সিলেট), শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রহিমা খাতুন (সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী), শ্রেষ্ঠ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সালাম (পাবনা, রাজশাহী), শ্রেষ্ঠ পিটিআই সুপারিনটেন্ডেন্ট মো. জয়নাল আবেদীন (কুমিল্লা পিটিআই), শ্রেষ্ঠ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. অহিদুল ইসলাম (ডুমুরিয়া, খুলনা), শ্রেষ্ঠ পিটিআই ইনস্ট্রাক্টর যুথিকা রানী দাস (দিনাজপুর, পিটিআই), শ্রেষ্ঠ ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টর আবদুর রহিম (কালিয়াকৈর, গাজীপুর), শ্রেষ্ঠ ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টর মোস্তাফিজুর রহমান (চারঘাট ইউআরসি, রাজশাহী), শ্রেষ্ঠ সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শিরীন আক্তার (পটুয়াখালী সদর, পটুয়াখালী), শ্রেষ্ঠ বিদ্যোৎসাহী সমাজকর্মী অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবদুল হক (মিঠামইন, কিশোরগঞ্জ), শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমান (পূর্ব চড়কগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরগুনা সদর), শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষিকা তাসলিম চৌধুরী (মৌলভীবাজার সদর) প্রমুখ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন খালেদ।