শিশুদের ভবিষ্যৎ রচনায় নিরলস কাজ করছি: প্রধানমন্ত্রী

জাতির পিতার কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার গণভবনে
ছবি: পিআইডি

জাতির পিতার কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ ধরনের নৃশংস ঘটনা আর যাতে না ঘটে, সে জন্য তাঁর সরকার শিশুদের জন্য একটি ভবিষ্যৎ রচনায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘শেখ রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটুক, সেটাই আমরা চাই।’

রোববার সকালে শেখ রাসেলের ৫৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়ে গেছেন। এই স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি ঘরে পৌঁছাবে এবং প্রত্যেক শিশু লেখাপড়া শিখে আগামী দিনে এ দেশের কর্ণধার হবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আজকে রাসেলের জন্মদিন। ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর রাসেলের জন্ম। কিন্তু তাঁর জীবন শেষ হয়ে যায়, একটি ফুল কুঁড়িতেই শেষ হয়ে যায়, ৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে তাকে নির্মমভাবে চিরবিদায় নিতে হয়।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে তাঁর (শেখ রাসেলের) বিদ্যালয় ‘ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ প্রাঙ্গণে শহীদ শেখ রাসেলের ‘ম্যুরাল’ উন্মোচন ও ‘শহীদ শেখ রাসেল ভবন’ উদ্বোধন করেন। ভার্চ্যুয়াল এই অনুষ্ঠানে শেখ রাসেলের ওপর নির্মিত অ্যানিমেটেড ডকুমেন্টারি বুবুর দেশ-এর প্রদর্শনী এবং শেখ রাসেলের জীবনীর ওপর প্রকাশিত বই শেখ রাসেল আমাদের আবেগ ও স্মৃতির পাতায় শেখ রাসেল শীর্ষক দুটি বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন তিনি।

শেখ রাসেল শিশু-কিশোর সংসদের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে প্রচারিত ‘শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের কার্যক্রমসংক্রান্ত ভিডিও চিত্র অবলোকন, এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণ, শিক্ষাবৃত্তি প্রদান এবং দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ল্যাপটপ বিতরণসহ অন্যান্য কার্যক্রমে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এই ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানের সঙ্গে একাধারে প্রধানমন্ত্রীর গণভবন, শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্স, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণ ও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্র সংযুক্ত ছিল। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্র প্রান্তে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার ও বৃত্তি প্রদান করেন। শেখ রাসেল অনলাইন দাবা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার ও সংগঠনটির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ল্যাপটপও বিতরণ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে তার (শেখ রাসেল) স্কুলের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সেখানে রাসেল আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু এই স্কুলের ছাত্রছাত্রী যুগ যুগ ধরে যারা পড়াশোনা করবে, তারা এটুকু শিখবে, এটুকু জানবে যে একটি ছোট্ট শিশু ছিল এই স্কুলে, যে শিশুটিকে বাঁচতে দেওয়া হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শিশুদের জন্য বলব, আমাদের শিশুরা দেশপ্রেমিক হবে, মানুষের মতো মানুষ হবে, মানুষের সেবা করবে ও নিজেদের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। আধুনিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত হবে।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় করোনাভাইরাসকালীন সতর্কতা হিসেবে বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরা ও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন; যাতে স্কুল খুললেই সবাই আবার শ্রেণি কার্যক্রমে যথাযথভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। একই সঙ্গে অভিভাবকদেরকে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি লক্ষ রাখার পাশাপাশি তাদের মধ্যকার সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ ও খেলাধুলার সুযোগ করে দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।