অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, চলতি বছরের এপ্রিলে তফসিলি ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১১ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। তিনি সংসদে শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করেন।
আজ সোমবার জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ তথ্য জানান। অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তাঁর পক্ষে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সংসদে প্রশ্নের জবাব দেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
শীর্ষ ১০০ খেলাপি
অর্থমন্ত্রী শীর্ষ ঋণখেলাপি ১০০টি ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের তালিকা সংসদে তুলে ধরেন। এর মধ্যে দুজন রয়েছেন ব্যক্তি, বাকিগুলো হচ্ছে প্রতিষ্ঠান। মন্ত্রীর তালিকায় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দুটির নাম দুইবার উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে বিসমিল্লাহ টাওয়েলস লি. ও যমুনা অ্যাগ্রো কেমিক্যাল।
অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শীর্ষ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স (প্রা.) লি., জেসমিন ভেজিটেবল লি., ম্যাক্স স্পিনিং মিলস লি., বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লি., ঢাকা ট্রেডিং হাউস, আনোয়ারা স্পিনিং মিলস, ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ, কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস লি., এমএম ভেজিটেবল অয়েল প্রোডাক্ট লি., আলফা কম্পোজিট টাওয়েলস লি., ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লি., ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল, হল-মার্ক ফ্যাশন লি., মুন্নু ফেব্রিকস লি,. ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিকস লি., সাহারিশ কম্পোজিট টাওয়েল লি., নুরজাহান সুপার অয়েল লি., সালেহ কার্পেট মিলস লি., এসকে স্টিল, চৌধুরী নিটওয়্যারস লি., রনকা শোয়েল কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লি., টি অ্যান্ড ব্রাদার নিট কম্পোজিট লি., তানিয়া এন্টারপ্রাইজ ইউনিট, রহমান স্পিনিং মিলস লি., এস স্পিনিং লাইন, হাজী ইসলাম উদ্দিন স্পিনিং মিলস লি., গ্রামবাংলা এমপিকে ফার্টিলাইজার অ্যান্ড অ্যাগ্রো ইন্ডা., টেলি বার্তা লি., কটন করপোরেশন, ভারগো মিডিয়া, সোনালী জুট মিলস লি., এক্সপার টেক লি., এমবিএ গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল লি., ওয়ালমার্ট ফ্যাশন লি., ওয়ান ডেনিম মিলস লি., অ্যাগ্রো ইন্ডা, প্রা. লি., হিমালয় পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লি., এমদাদুল হক ভুইয়া, এম কে শিপ বিল্ডার্স অ্যান্ড স্টিলস লি., রনকা ডেনিম টেক্সটাইল মিলস লি., ম্যাক শিপ বিল্ডার্স লি., বিশ্বাস গার্মেন্টস লি., মাস্টার্ড ট্রেডিং, হিন্দুল ওয়ালি টেক্সটাইল লি., ইসলাম ট্রেডিং কনসোর্টিয়াম লি., কেপিট্যাল বনানী ওয়ান লি., মেরিন ভেজিটেবল অয়েল লি., অর্জন কার্পেট অ্যান্ড জুট ওয়েভিং লি., এ জামান অ্যান্ড ব্রাদার্স, অরনেট সার্ভিসেস লি., দোয়েল অ্যাপারেল লি., আশিক কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লি., মুন বাংলাদেশ লি., মোস্তফা পেপার কমপ্লেক্স লি., এইচআর স্পিনিং মিলস প্রা. লি., বিসমিল্লাহ টাওয়েলস লি., কেয়া ইয়ার্ন মিলস লি., তাবাসসুম এন্টারপ্রাইজ, অ্যাপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস লি., দ্যা ওয়েল টেক্স লি., ডেল্টা সিস্টেমস লি., জাহিদ এন্টারপ্রাইজ লি., হিলফুল ফুজুল সমাজকল্যাণ সংস্থা, মুজিবুর রহমান খান, নিউ রাখী টেক্সটাইলস মিলস লি., আলী পেপার মিলস লি., অল টেক্স ইন্ডা. লি., নর্দার্ন ডিস্টিলারিজ লি., লাকি শিপ বিল্ডার্স লি., যমুনা অ্যাগ্রো কেমিক্যাল, মাকসুদা স্পিনিং মিলস লি., শাপলা ফ্লাওয়ার মিলস লি., সিদ্দিক অ্যান্ড কোম্পানি লি., যমুনা অ্যাগ্রো কেমিক্যাল লি., মনোয়ারা ট্রেডিং, একে জুট ট্রেডিং কোং, মাহাবুব স্পিনিং লি., আলামিন ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট লি., প্রফিউশন টেক্সটাইল লি., মা টেক্স, সুপার সিক্স স্টার শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড, টেকনো ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, বিসমিল্লাহ টাওয়েল লি., ন্যাম করপোরেশন, জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পিএ, সর্দার অ্যাপারেলস লি., জেড অ্যান্ড জে ইন্টারন্যাশনাল, বিশ্বাস টেক্সটাইলস লি., মডার্ন স্টিল মিল লি., নিউ অটো ডিফাইন, অনিকা এন্টারপ্রাইজ, ডি আফরোজ সোয়েটার ইন্ডা. লি., মোবারক আলী স্পিনিং মিলস লি., আফিল জুট মিলস লি., রেজা জুট ট্রেডিং, আর কে ফুডস লি., আলফা টোব্যাকো ম্যানুফ্যাকচারিং কোং লি., ফেয়ার এক্সপো ওয়েভিং মিলস লি., কেয়ার স্পেশালাইজ হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার লি. এবং ফিয়াস এন্টারপ্রাইজ।
মোবাইলে দৈনিক লেনদেন ৪৯ লাখ
সরকারি দলের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে মুহিত জানান, বর্তমানে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে দৈনিক গড়ে ৪৯ লাখ ৫ হাজার লেনদেন হয়। এতে গড়ে দৈনিক ৮৪৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা লেনদেন হচ্ছে। বর্তমানে এমএফএসের এজেন্ট সংখ্যা ৭ লাখ ৪৬ হাজার ও গ্রাহক ৫ কোটি ২৬ লাখ। সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৭টি।
৩৭ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স গেছে বাংলাদেশ থেকে
জাতীয় পার্টির এ কে এম মাঈদুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিদেশ থেকে ১৪ হাজার ৯৩১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। একই অর্থবছরে বাংলাদেশ হতে বিদেশে ৩৭ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠানো হয়। বাংলাদেশে বসবাস করে চাকরি ও ব্যবসা করেন, এমন বিদেশি এবং বিদেশে অবস্থানকারী শিক্ষার্থী, চিকিৎসা ও বিদেশে ব্যবসাসহ অন্যান্য কাজের জন্য টাকা পাঠানো হয়ে থাকে।
অনুদান কমছে
আবদুল মতিনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বৈদেশিক সাহায্যের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা ক্রমান্বয়ে কমছে। ১৯৮০ থেকে ৯০ সাল পর্যন্ত এডিপির প্রায় গড়ে ৫১ শতাংশ বৈদেশিক সাহায্য হতে অর্থায়ন হতো। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা হ্রাস পেয়ে ৩৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
সরকার দলের মামুনুর রশীদ কিরনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০০৯-১০ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা হতে ২ হাজার ৪৫৫ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।
৮৮ শতাংশ রাষ্ট্রীয় ব্যাংক অনলাইনে
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নে জবাবে মুহিত জানান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ৩৭২৫টি শাখার মধ্যে ৩২৮১টি শাখা (৮৮%) গ্রাহকদের পরিপূর্ণ অনলাইন সেবা দিচ্ছে।
ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) অংশ হিসেবে মুনাফার একটি অংশ সিএসআর খাতে ব্যয় করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে সিএসআর খাতের ৩০ শতাংশ শিক্ষা, ২০ শতাংশ স্বাস্থ্য এবং বাকি অংশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশবান্ধব পণ্য ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে গৃহীত খাতে ব্যয় করতে হয়।
অবৈধ সোনা সাড়ে চার হাজার কেজি
সরকার দলের তানভীর ইমামের প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে (২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত) অবৈধভাবে আসা ৪ হাজার ৪৯০ কেজি ৪৯৩ গ্রাম সোনা আটক করা হয়েছে।