প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার্ত মানুষের জন্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণের কাজ করছেন বন্ধুসভার সদস্যরা। গতকাল জামালপুর, নীলফামারী, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, পঞ্চগড় ও দিনাজপুরের দুর্গম এলাকার প্রায় ১ হাজার বন্যাপীড়িত পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হয়। প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
জামালপুর
‘বানের পানি সব নিয়ে যাবে, ঠাওর পাইনি। ডালাও পানি ঘরবাড়ি ভাসি নিল। ৭ দিন ধইরা উজানের মধ্যে পইড়া রইছি। শহর থাইকা এঠাই অনেক দূর। কেউ কোন্ডাও নিতে আহে নাই। এই খাউনটাই পাইলুম। পোলাপানগরেও খাউন দিয়া ভালা করছ। খাউন পাইয়া খুশি হয়ছি।’ জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার বালীজুড়ী ইউনিয়নের ভেঙে যাওয়া বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি অংশে আশ্রয় নেওয়া আমেনা বেগম এসব কথা বলেন।
প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা ত্রাণসামগ্রী নিয়ে বহু কষ্টে দুর্গম এলাকায় পৌঁছান। বন্যার্ত ৩৭০টি পরিবারের হাতে ত্রাণ তুলে দেন তাঁরা। প্রতি পরিবারকে দেওয়া হয়েছে চিড়া, গুড়, খাওয়ার স্যালাইন এবং শিশুদের জন্য পাউরুটি, কলা ও বিস্কুট।
নীলফামারী
গতকাল সোমবার নীলফামারী জেলা সদরের খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে বন্যার্ত ৬০টি পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
গোবিন্দপুর গ্রামের লাকি বেগম (৪০) বলেন, ‘বন্যায় বাড়িঘর সব নষ্ট হয়া গেইছে। স্বামী দিনমজুরি করে সংসার চালায়, কয় দিন কামকাজ না থাকায় খাওয়াদাওয়ার খুব কষ্ট হইছে। এখন যেনা পাই সেনাতে হামরা খুশি।’
ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে ছিল পরিবারপ্রতি চার কেজি চাল, আধা কেজি ডাল, আধা কেজি লবণ, এক কেজি চিড়া, দেড় পোয়া গুড়, এক কেজি আলু এবং একটি করে খাওয়ার স্যালাইন। ত্রাণ বিতরণের কাজে সহযোগিতা করেন প্রথম আলো নীলফামারী বন্ধুসভার সুধীর রায়, মো. নুরুজ্জামান সরকার, বিপ্লব কুমার রায়সহ অন্য সদস্যরা।

ফরিদপুর
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় বন্যাকবলিত ও নদীভাঙনের শিকার ১০০ পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ফাজেল খাঁর ডাঙ্গি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন বেড়িবাঁধ এলাকায় এই ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে ছিল প্রতিটি পরিবারের জন্য তিন কেজি চাল, এক কেজি মসুর ডাল, এক কেজি লবণ, এক লিটার সয়ারিন তেল, আধা কেজি মুড়ি, আধা কেজি চিড়া ও আধা কেজি গুড়।
ত্রাণ পেয়ে ফাজিল খাঁর ডাঙ্গি গ্রামের রাজিয়া খাতুন (৫৩) বলেন, ‘নদী ঘরবাড়ি সব নিয়া গেছে। এক জায়গায় আশ্রয় নিয়াছিলাম, তা-ও পানিতে তলায় গেছে। এই কয় দিন খাইয়া না-খাইয়া ছিলাম। আজ দুই ছোয়াল নিয়া খাইতে পারব।’
এ সময় ফরিদপুর প্রথম আলো বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক মাফিকুল ইসলাম, সংস্কৃতিকর্মী মাহাবুব হোসেন পিয়াল, উপজেলা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি আবদুস সবুর, সাংবাদিক আফজাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাজবাড়ী
গতকাল রাজবাড়ীতে বন্যার্ত অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। সদর উপজেলার উড়াকান্দা, পূর্ব উড়াকান্দা, নয়নসুখ, গোপালবাড়ী আশ্রয়কেন্দ্র, ভবদিয়া, কাচরন্দ, অন্তার মোড় গ্রামের বন্যাদুর্গত ১০০ পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়। ত্রাণের মধ্যে ছিল পরিবারপ্রতি তিন কেজি চাল, এক কেজি চিড়া, আধা লিটার তেল, আধা কেজি লবণ, আধা কেজি গুড়, এক কেজি ডাল, একটি দেশলাই, পাঁচটি স্যালাইন ও প্যারাসিটামল বড়ি।
এ সময় বন্ধুসভার সহসভাপতি শামীমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক শুভ চন্দ্র সিংহসহ বন্ধুসভার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বামী-সন্তানহীন আছিরুন বেগম (৮২) ঘর থেকে বের হতে পারেন না। বন্ধুরা তাঁর বাড়িতে গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দেন।
পঞ্চগড়
গতকাল পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের ফুলবরপাড়া, পাঞ্জিয়ারপাড়া, সিপাইপাড়া, বড়বাড়ী, রতনীবাড়ী ও ডোলোপাড়া গ্রামের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৪০ জন নারী-পুরুষকে ত্রাণ-সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
সহায়তা হিসেবে প্রত্যেককে পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি আলু, আধা কেজি ডাল, আধা লিটার সয়াবিন তেল ও আধা কেজি লবণ দেওয়া হয়।
ত্রাণ পেয়ে বড়বাড়ি গ্রামের দিনমজুর ময়নুল হক বলেন, ‘কাজকাম নাই, কোনো সাহায্যও পাইনি। আইজ তুমরা চাল, ডাল, তেল, লবণ দিলেন।’
দিনাজপুর
বন্যাদুর্গত দিনাজপুরে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচির তৃতীয় দিনে গতকাল বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের রাঙ্গালীপাড়া ও কাশিমনগর এলাকায় আরও ১১০ পরিবারের হাতে ত্রাণ তুলে দেওয়া হয়।
প্রতিটি পরিবারকে দুই কেজি চাল, আধা কেজি চিড়া, আধা কেজি ডাল, আধা কেজি লবণ, আধা লিটার সয়াবিন তেল, এক কেজি আলু, আধা কেজি পেঁয়াজ, দুটি মোম, একটি গ্যাসলাইট, এক পাতা প্যারাসিটামল বড়ি ও দুটি করে খাওয়ার স্যালাইন দেওয়া হয়।
ত্রাণ পেয়ে রাঙ্গালীপাড়ার জয়গুন বলেন, ‘হামার মাটির বাড়ি গোটালে ভাঙ্গি গেচে। স্বামী প্যারালায়সেস হয়া পড়ি আচে। মাটি কাটি দিন চলি যায়। আটার উটি খায়া কুনমতে দিন যাওচে। অ্যালা মনের সুখে ভাত খাইম।’
বন্যা ত্রাণ তহবিল
আজ যাঁরা সহায়তা দিলেন
ফকরুদ্দীন টেক্সটাইল মিলস ৩,০০,০০০ টাকা, শাহনাজ বেগম ১০,০০০ টাকা ও ৭৫টি শাড়ি, সেতারা বেগম ১০,০০০, মিজানুর রহমান ৫,০০০, সরাসরি ব্যাংকে জমা ৫,০০০ টাকা।
মোট ৩,৩০,০০০ টাকা
*আজ পর্যন্ত মোট জমা ২০,২৯,০০০ টাকা
*২২ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণে মোট খরচ ১৮,৫৯,৬৭১ টাকা
তহবিলে অর্থ সাহায্যের জন্য
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট: ঢাকা ব্যাংক ২০৭-২০০-১১১৯৪
অথবা প্রথম আলো কার্যালয়, সিএ ভবন, কারওয়ান বাজার।