সন্দেহভাজন আরেক ব্যক্তি শনাক্ত
ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা হত্যায় জড়িত সন্দেহে আরও এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছেন তদন্তকারীরা। তাঁর নাম সোহেল ওরফে ভাঙারি সোহেল (৩৫)। এর আগে তদন্তকারীরা বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি তামজিদ আহম্মদ ওরফে রুবেল (২৯), মো. রাসেল চৌধুরী (৩৫) ও মো. রাসেল (৪০) নামের তিন ব্যক্তিকে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শনাক্ত করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মো. আছাদুজ্জামান মিয়া গত রোববার বলেছিলেন, সিজার তাবেলা হত্যায় ‘মূল পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র’ এবং হত্যাকারীরা শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, হত্যাকারীরা শনাক্ত হয়েছেন। তবে তিনি কোনো সংখ্যা উল্লেখ করেননি।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশান ২ নম্বরের ৯০ নম্বর সড়কের গভর্নর হাউসের সীমানাপ্রাচীরের বাইরের ফুটপাতে সিজারকে (৫১) গুলি করে হত্যা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা দুই তরুণকে গুলি চালিয়ে অপেক্ষমাণ এক ব্যক্তির মোটরসাইকেলে করে পালাতে দেখেছেন। সিজার নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিসিও কো-অপারেশন প্রুফসের (প্রফিটেবল অপরচুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি) প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সন্দেহভাজন হিসেবে শনাক্ত করা সোহেল মধ্য বাড্ডার বিভিন্ন ভাঙারি দোকানে পুরোনো লোহালক্কড় কেনাবেচা করেন। গতকাল দুপুরে মধ্য বাড্ডার আদর্শনগরের এ রকম একজন ভাঙারি দোকানি প্রথম আলোকে বলেন, সোহেল ভ্যান বোঝাই করে পুরোনো লোহালক্কড় তাঁর দোকানে বিক্রি করতে আসতেন।
এদিকে সিজার হত্যায় জড়িত সন্দেহে তদন্তকারীরা যে চারজনকে শনাক্ত করেছেন, তাঁদের আরেকজনের পরিচয় জানা গেছে। রাসেল চৌধুরী নামে ওই ব্যক্তি বিএনপির সমর্থক বলে জানা গেছে। তিনি থাকেন নগরীর দক্ষিণ বাড্ডায়। তাঁর বাবা শাহজাহান চৌধুরী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী।
গতকাল রাসেলদের দক্ষিণ বাড্ডার বাসায় গেলে তাঁর মা আফরোজা বলেন, ১০ অক্টোবর সকালে ডিবি পুলিশ তাঁর বাসায় তল্লাশি চালায় এবং রাসেলকে আটক করে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা এডিসি মাহফুজুল ইসলাম বলেন, আটকের বিষয়টি তিনি জানেন না।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রাসেলের মা আফরোজা বলেন, ১০ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে একজন লোক এসে সাদা পোশাকে তাঁদের বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়ান। পাশের ফটক দিয়ে আরও তিন-চারজন তাঁর বাসায় ঢোকেন। তাঁরা রাসেলকে ভেতরের কক্ষ থেকে ধরে সামনের কক্ষে নিয়ে আসেন। এ সময় তাঁরা রাসেলের কাছে জানতে চান, ‘তোর পরনের জিন্সের প্যান্ট স্ট্রাইপ গেঞ্জি ও কালো শার্ট কই।’
আফরোজা বলেন, ওই ব্যক্তিরা রাসেল কী করে জানতে চাইলে তিনি তাঁদের বলেন, ও আগে বিদ্যুৎ বিভাগে ঠিকাদারি করত। বর্তমানে বেকার। তাঁরা জানতে চান, বাড্ডার যুবলীগ নেতা শাখাওয়াত হোসেন ওরফে চঞ্চলের (নিহত যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক মিল্কী হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত পলাতক আসামি) সঙ্গে কাজ করে কি না। পরে তাঁরা আলমারি খুলে তল্লাশি চালান, কিন্তু কিছু পাননি। একপর্যায়ে তাঁরা রাসেলের দুই হাতে হাতকড়া লাগিয়ে দেন। ডিবির একজন জিজ্ঞেস করেন, ‘তুই কোন দল করিস, ছাত্রদল না যুবদল?’ রাসেলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। পরে সাদা কাগজে কিছু একটা লিখলেও তা কাউকে পড়তে দেওয়া হয়নি। ওই কাগজে রাসেলের বাবার স্বাক্ষর ও তাঁর মোবাইল ফোন নম্বর নেন।
আফরোজা আরও বলেন, রাসেলকে নেওয়ার কারণ ওর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে কি না জানতে চাইলে বলা হয়, পরে জানবেন। এরপর রাসেলকে ঝিলপাড় দিয়ে হাতিরঝিলের দিকে নিয়ে যান তাঁরা। এর আগে জিহাদ হোসেন ডিবির পরিদর্শক পরিচয় দিয়ে তাঁর নাম ও মোবাইল নম্বর একটি কাগজে লিখে দেন। তাঁরা রাসেলের নীল রঙের দুটি গেঞ্জি, দুটি জিন্সের প্যান্ট, এক জোড়া জুতাও নিয়ে যান। রাসেলকে নেওয়ার সময় তাঁরা বলেন, ‘আপনার ছেলে নিরপরাধ হলে আমরা বাসায় দিয়ে যাব। আর যদি অপরাধী হয় তাহলে আদালতে চালান দেব।’ গত রোববার পর্যন্ত ডিবির কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বারবারই বলা হয়, ‘ও ভালো আছে, কিছু বিষয়ে যাচাই-বাছাই করছি।’
আফরোজা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তাঁর ছেলে যুবলীগ নেতা চঞ্চলকে চিনলেও তাঁর সঙ্গে চলাফেরা করতেন না। মাঝেমধ্যে বিএনপির মিছিল-সমাবেশে যেতেন। কিন্তু দলটির কোনো পদে নেই।
এদিকে সিজার হত্যায় জড়িত সন্দেহে শনাক্ত হওয়া তামজিদ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গত সোমবার বিকেলে বাড্ডা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে তা নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন তামজিদের মামা তৌহিদ মিয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাড্ডা থানার পুলিশ জিডি না নিয়ে তাঁকে ডিবি কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু সেখানে গেলে ডিবি পুলিশ তাঁদের বলেছে, তারা এ বিষয়ে কিছু জানে না।
রাতে যোগাযোগ করা হলে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল প্রথম আলোকে বলেন, জিডি না নেওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না। কিংবা কাউকে ডিবি কার্যালয়েও যোগাযোগ করতে বলেননি। তিনি জিডি করতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।