সবুজের সান্নিধ্যে বইয়ের সমারোহ

শেফস্ টেবিল কোর্ট ইয়ার্ডে যাত্রা শুরু হলো প্রথমা বুক ক্যাফে। বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন করেন (বাঁ থেকে) সাজ্জাদ শরিফ, মঈনুদ্দিন হাসান রশিদ, আনোয়ারা সৈয়দ হক, সিমিন রহমান ও মহিউদ্দিন আহমদ। এ সময় বক্তৃতামঞ্চে মতিউর রহমান। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর বেরাইদে।
ছবি: প্রথম আলো

মহানগরীর কোলাহল, যান ও জনতার দুঃসহ ভিড় থেকে খানিকটা দূরে গাছগাছালির ছায়াময় মনোরম পরিবেশে বইয়ের পসরা নিয়ে যাত্রা শুরু করল ‘প্রথমা বুক ক্যাফে’। হেমন্তের হেলে পড়া সূর্যের নরম রোদ গায়ে মেখে সবুজের সমারোহে লাল ইটের সুদৃশ্য বিপণিটির সামনে আয়োজিত হলো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার ইউনাইটেড সিটির শেফস টেবিল কোর্টসাইডে দেশের প্রবীণ–নবীন লেখক, চিন্তক, উদ্যোক্তা, পাঠকদের সঙ্গে নিয়ে এ আনন্দঘন আয়োজন করা হয়।

রাজধানীতে প্রথমা প্রকাশনের এটি তৃতীয় বিক্রয়কেন্দ্র। অন্য দুটি শাহবাগের আজিজ সুপারমার্কেট এবং কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ের নিচের তলায়। রঙিন বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট লেখক আনোয়ারা সৈয়দ হক ও মহিউদ্দিন আহমদ, ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডি মঈনুদ্দিন হাসান রশিদ এবং ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমান।

অনুবাদক ও আবৃত্তিশিল্পী জাভেদ হুসেন তাঁর অনূদিত প্রথমা থেকে প্রকাশিত মওলানা জালাল উদ্দিন রুমি ও মীর্জা গালিবের কবিতা আবৃত্তি করেন। তরুণ কবি রাসেল রায়হান, মিছিল খন্দকার ও আলতাফ শাহনাওয়াজ তাঁদের কবিতা পড়েন।

শুরুর কথায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, প্রথম আলোর ২৩ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান চলছে নানা আয়োজনে। কিশোর আলো, বিজ্ঞানচিন্তা, প্রতিচিন্তা ও চলতি ঘটনা চারটি সাময়িকী প্রকাশিত হচ্ছে। প্রথম আলোর বহুমুখী উদ্যোগের মধ্যে প্রথমা প্রকাশনও রয়েছে। প্রথমার ১৪ বছর হলো। বাংলাদেশে প্রকাশনাশিল্পের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। সেই দিক লক্ষ রেখেই প্রথমা প্রকাশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে। বইয়ের ছাপা, কাগজ, বাঁধাই এসবের উন্নত গুণমান ও বিষয়বৈচিত্র্যের কারণে দ্রুতই প্রথমা দেশের প্রধান প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। পাঠকদের কাছে সুসম্পাদিত, সৃজনশীল ও বস্তুনিষ্ঠ বই তুলে দিচ্ছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতি, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনীতি, শিল্পকলা, ধর্ম ও দর্শন, মানবাধিকার, আত্মস্মৃতি, মৌলিক সাহিত্য, অনুবাদসহ বিচিত্র বিষয়ে ৬৯০টি বই প্রকাশিত হয়েছে প্রথমা থেকে। প্রথমা বই প্রকাশের পাশাপাশি লেখকদের সঙ্গে চুক্তি করে তাদের যথাযথ সম্মানী দেওয়া ও সারা দেশের পাঠকদের হাতে বই তুলে দেওয়ার কাজও করে যাচ্ছে। বইপড়ার প্রতি দেশের পাঠকের আগ্রহ কমেছে বলে যে প্রচলিত ধারণা আছে, তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে করোনাকালেও বই বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায়। লিখিত বইয়ের পাঠক বাড়ছে। সে জন্য ইউনাইটেড সিটির এই শেফস্ টেবিলে প্রথমা বুক ক্যাফের যাত্রা শুরু হলো।

অনুষ্ঠানের মঞ্চে (বাঁ থেকে) মোহিত কামাল, আলতাফ পারভেজ, শাহনাজ মুন্নী, আফসানা বেগম, আসিফ নজরুল, আনিসুল হক ও শিকোয়া নাজনীন।
ছবি: প্রথম আলো

অনুষ্ঠানে ড. আকবর আলি খান বলেন, প্রকৃতপক্ষে তিনি লেখক নন, তিনি হলেন পাঠক। আসলে প্রথম আলোই তাঁকে লেখক হিসেবে তৈরি করেছে। তিনি এই নতুন বিক্রয়কেন্দ্রটির সাফল্য কামনা করেন। আনোয়ারা সৈয়দ হক বলে, এই এলাকায় ভালো বইয়ের দোকান নেই। প্রথমার এই বিক্রয়কেন্দ্রটি সেই অভাব পূরণ করল। মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, তিনি একসময় রাজনীতি করতেন। তবে রাজনীতি নিয়ে লিখতে প্রথম আলোই তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছে। এখন না লিখলে ভালো লাগে না।

ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও সিমিন রহমান প্রথম আলোর এ উদ্যোগর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য ইউনাইটেড গ্রুপকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, প্রথম আলো ছিল ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের একটি স্বপ্ন। পত্রিকার পাশাপাশি আরও অনেক কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে, প্রথমা প্রকাশন এর অন্যতম। প্রকাশনাশিল্পেও প্রথমা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডি মঈনুদ্দিন হাসান রশিদ বলেন, শেফস্ টেবিলে একটি পারিবারিক পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মানুষ এখানে এসে শান্তিতে স্বস্তিতে যেন কিছু সময় কাটাতে পারেন, তেমন সব আয়োজনই করা হচ্ছে। তাই বই খুব গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণেই প্রথমা প্রকাশনের সঙ্গে যুক্ত থেকে এখানে বই বিক্রির এই চমৎকার আয়োজনটি করা হয়েছে।

কথাশিল্পী ও প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হকের আমন্ত্রণে মঞ্চে এরপর এসে প্রতিক্রিয়া জানান প্রথম আলো ও প্রথমা প্রকাশনের নিয়মিত লেখক আলতাফ পারভেজ, আসিফ নজরুল, মোহিত কামাল, শিকোয়া নাজনীন, শাহনাজ মুন্নী ও আফসানা বেগম।

অভ্যাগত সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। গান ছাড়া কি আর পূর্ণতা পায় বাঙালির কোনো আনন্দানুষ্ঠান! প্রথম আলোতেই আছেন অনেক চমৎকার গাইয়ে। তাঁদেরই একজন রাশিদুজ্জামান দোতারা বাজিয়ে গান ধরলেন ‘সুজন মাঝি রে কোন ঘাটে ভিড়াবে তোমার নাও।’ পরে ওয়ার্দা আশরাফ গাইলেন ‘জয় সত্যের জয়’ আর বাংলাদেশের অভ্যুদয়কালের স্মৃতিমাখা জোয়ান বায়েজের সেই বিখ্যাত গান ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ যেখানে দিন শেষ, লক্ষ প্রাণের রক্তে রাঙা দেশ...।’

তখন আঁধার ঘনিয়ে এসেছে। শেফ্‌স টেবিলে খেতে আসা অনেকেই এসেছিলেন প্রথমার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাঁদের মধ্য থেকে গ্রন্থানুরাগীরা প্রবেশ করলেন তাকভরা বই সাজানো প্রথমা বুক ক্যাফেতে। ক্রেতাদের জন্য বিশেষ প্রাপ্তি ছিল প্রথমার বইয়ে নির্ধারিত শতকরা ২০ ভাগের সঙ্গে অতিরিক্ত ৫ মিলিয়ে ২৫ ভাগ কমিশন। এ বিশেষ কমিশন অবশ্য নভেম্বর মাসজুড়েই রাজধানীর তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র ও প্রথমা ডটকমে পাওয়া যাবে।