নীলফামারীতে জেলা সম্মেলনের প্রস্তুতিকে কেন্দ্র করে জেলা জাতীয় পার্টির (এ) দুটি পক্ষের কোন্দল চরমে উঠেছে। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা জাতীয় পার্টির সদস্যসচিব সাজ্জাদ পারভেজ আর অন্য পক্ষে জেলা জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব আলী।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাজ্জাদ পারভেজের পক্ষে আছেন জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক নীলফামারী-৪ আসনের সাংসদ ও বিরোধীদলীয় হুইপ শওকত চৌধুরী। অন্যদিকে মাহবুব আলীর পক্ষে আছেন জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক সাংসদ জাফর ইকবাল সিদ্দিকী। একই স্থানে দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকায় গত সোম ও মঙ্গলবার শহরে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গত মঙ্গলবার জেলা জাপা কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে দুই পক্ষ গত মঙ্গলবারের সভা স্থগিত করে পরবর্তী সময়ে পৃথক দিনে করতে সম্মত হয়।
জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক প্রচার সম্পাদক ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, এত দিন জেলা জাতীয় পার্টি সাজ্জাদ, বজলার ও মাহবুব আলীনির্ভর ছিল। ত্যাগী নেতা-কর্মীরা তাঁদের কারণে দলে ভিড়তে পারতেন না। বিষয়টি টের পেয়ে মাহবুব আলী সাবেক সাংসদ জাফর ইকবাল সিদ্দিকীকে সঙ্গে নিয়ে দল গোছানোর কাজ শুরু করেন। এতে বাধা হয়ে দাঁড়ান সাজ্জাদ পারভেজ। তিনি চান না দলের নেতৃত্ব আর কারও হাতে যাক।
এ বিষয়ে সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, তাঁদের কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরে জেলা সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সে জন্য গত মঙ্গলবার বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে কর্মিসভা ডাকা হয়। সেখানে বিরোধীদলীয় হুইপ নীলফামারী-৪ আসনের সাংসদ শওকত চৌধুরীর উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে মাহবুব আলীর পক্ষ জাতীয় ছাত্রসমাজের নামে সভা ডেকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে সভা বাতিল করতে হয়।
মাহবুব আলী বলেন, আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা সম্মেলন করার জন্য নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে তাঁদের সবাইকে নিয়ে বিভিন্ন উপজেলা ও জেলায় সভা করছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘দেশের বাইরে যাওয়ার কারণে প্রায় ছয় মাস আগে বর্তমান বিরোধীদলীয় হুইপ শওকত চৌধুরীকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দিয়ে যাই। কিন্তু তিনি দীর্ঘ সময়েও কোনো সভা-সমাবেশ করেননি। এখন নেতা-কর্মীদের সক্রিয় করতে সভা-সমাবেশ করছি। কিন্তু সাজ্জাদ পারভেজের পক্ষ এর বিরোধিতা করছে।’
দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা সদরের পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘নেতৃত্বের কোন্দলের কারণে আমি এতদিন নিষ্ক্রিয় ছিলাম। দলের স্বার্থে আবারও কাজ করছি। আমি চাই দুই পক্ষ এক হয়ে দল আরও শক্তিশালী হোক।’
নীলফামারী-১ আসনের সাবেক সাংসদ জাফর ইকবাল সিদ্দিকী অভিযোগ করেন, নীলফামারীতে জাপা তিনজন ব্যক্তির কাছে কুক্ষিগত হয়ে পড়েছে। তাঁরা হলেন জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক বিরোধীদলীয় হুইপ শওকত চৌধুরী, সদস্যসচিব সাজ্জাদ পারভেজ ও যুগ্ম আহ্বায়ক বজলার রহমান। তাঁরা চান না জাতীয় পার্টিতে আর কেউ নেতৃত্ব দিক।
এদিকে বিরোধীদলীয় হুইপ শওকত চৌধুরী বলেন, কারও সঙ্গে তাঁর কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আগামী ডিসেম্বরে জেলা কমিটি করতে হবে। সম্মেলন করার পর তিনি বাদ পড়লে সেটা নিয়ে তাঁর কোনো আপত্তি থাকবে না।