সাংসদ আমানুরের মামলা দ্রুত বিচারের জন্য যাচ্ছে

টাঙ্গাইল থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাংসদ আমানুর রহমান খান (রানা) ও তাঁর ভাইদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা পুলিশ। এখন তাঁদের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা।
সাংসদ আমানুর গত তিন অধিবেশনে ৩৩ কার্যদিবস সংসদে অনুপস্থিত। খুনের মামলা মাথায় নিয়ে দীর্ঘদিন তিনি সংসদের অধিবেশনে আসেন না। পদ টিকিয়ে রাখতে গত ৫ জানুয়ারি তিনি অনেকটা চুপি চুপি সংসদের হাজিরা খাতায় সই করে আবারও লাপাত্তা হয়ে যান।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, আমানুর রহমান খান সংসদের হাজিরা খাতায় সর্বশেষ সই করেন গত ৫ জুলাই, বাজেট অধিবেশনে। এরপর আরও দুটি অধিবেশন পার হলেও তিনি আসেননি। চলতি অধিবেশন শুরু হয়েছে ২০ জানুয়ারি। ২৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আমানুর রহমান খান ৩৩ কার্যদিবস সংসদে অনুপস্থিত আছেন।
জানা গেছে, সংবিধানের ৬৭ (১)-এর খ অনুচ্ছেদ অনুসারে সংসদের অনুমতি ছাড়া একাধারে ৯০ কার্যদিবস পর্যন্ত সংসদের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলে সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। সংবিধানের ৬৬ (২)-এর ঘ ধারায় বলা হয়েছে, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছর দণ্ডিত হলে তাঁর সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। মুক্তিলাভের পাঁচ বছরের মধ্যে তিনি সাংসদ হতে পারবেন না।
এ বিষয়ে জানতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আইন অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত সংসদ সদস্যপদ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। চাইলে যেকোনো সময় সংসদে আসতে পারেন। আর মামলার বিষয়টি সংসদের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তাই মামলা আইন অনুযায়ী চলবে। পুলিশ সংসদ এলাকায় গ্রেপ্তার করার আগে তাঁকে জানানোর নিয়ম আছে। আর বাইরে থেকে গ্রেপ্তার করলে স্পিকারকে অবহিত করতে হয়।
আমাদের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, সাংসদ আমানুর রহমান ও তাঁর ভাইদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ায় নিহতের পরিবার ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নামকরণে গতকাল সকালে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পূর্বনির্ধারিত আনন্দ মিছিলের কর্মসূচি ছিল। আনন্দ মিছিল থেকে খান পরিবারবিরোধী স্লোগান এবং ফারুক আহমেদের খুনিদের বিচারের দাবিতে স্লোগান ওঠে। শেষ পর্যন্ত মিছিলটি ফারুক হত্যাকারীদের বিচারের দাবির মিছিলে পরিণত হয়।
নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী ও মামলার বাদী নাহার আহমেদ মামলটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ এবং সাংসদ আমানুরসহ অন্য অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘সাংসদ আমানুর ও তাঁর ভাই সাবেক মেয়র সহিদুর ঢাকাতেই আছেন বলে জানতে পেরেছি। তাঁদের ঘোরাফেরা করতেও দেখেছে অনেকে। তারপরও পুলিশ কেন তাঁদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না, তা বুঝতে পারি না।’
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোলাম মাহফীজুর রহমান বলেন, তাঁদের কাছে তথ্য রয়েছে যে সাংসদ আমানুরের ভাই ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান (কাকন) মালয়েশিয়ায় এবং অপর ভাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান (বাপ্পা) থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন। আমানুর ও তাঁর ভাই সাবেক মেয়র সহিদুর ঢাকায় অবস্থান করছেন। অন্য আসামিরা দেশে আছেন বলে তাঁদের ধারণা।
আওয়ামী লীগের টাঙ্গাইল জেলার সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগপত্র দাখিল হওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মী খুশি। তিনি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ফারুক হত্যা মামলাটি পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর প্রথম আলোকে জানান, এটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। এটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের পক্ষ থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে চিঠি দেওয়া হবে।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়া এলাকার নিজ বাসার সামনে থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর নিহতের স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশ এ মামলায় আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামক দুজনকে গ্রেপ্তার করে। এরা দুজনই আওয়ামী লীগের সাংসদ আমানুর রহমান খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। রাজা ও মোহাম্মদ আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আমানুর ও তাঁর ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান (মুক্তি), অপর ভাই ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান (কাকন) ও ছোট ভাই ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সানিয়াত খান (বাপ্পা) এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে আমানুর ও তাঁর ভাই সহিদুর আত্মগোপন করেন। এর আগে আত্মগোপনে যান জাহিদুর ও সানিয়াত। দীর্ঘ তিন বছরেরও বেশি সময় তদন্ত শেষে টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মাহফীজুর রহমান গত বুধবার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে সাংসদ আমানুররা চার ভাইসহ মোট ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।