সাতক্ষীরায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না
সাতক্ষীরার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। খুন, ডাকাতি, ছিনতাই ও সংঘর্ষের মতো ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। রাজনৈতিক সংঘাতের পাশাপাশি অন্যান্য অপরাধও বেড়েছে। সম্প্রতি রাজনৈতিক সংঘাতে চারজনসহ খুন হয়েছেন ছয়জন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক লোক। এ সময় একাধিক সংষর্ঘের ঘটনা ঘটেছে।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেবহাটা উপজেলার গরানবাড়িয়া এলাকায় ১৩ আগস্ট উপজেলা শ্রমিক লীগের সহসভাপতি আলমগীর হোসেনকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা কুপিয়ে জখম করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। গত ১৫ জুলাই একই উপজেলার সখীপুর ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আজিজকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ধোপাডাঙ্গায় পিটিয়ে হত্যা করেন।
গত ২৬ আগস্ট সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলামকে উপজেলার বারোপোতা এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সদর থানা থেকে ১০০ গজ দূরে জেলা বিএনপির কর্মী সমেঞ্চলন চলাকালে গত ৬ সেপ্টেম্বর বিএনপির এক পক্ষের হামলায় মৎস্যজীবী দলের নেতা আমানউল্লা নিহত হন। এ ছাড়া ২৬ সেপ্টেম্বর আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় আওয়ামী লীগের কর্মী আবদুল হাকিম নিহত হন। ৩০ আগস্ট সদর উপজেলার বকচরা গ্রামের কৃষক আবদুল খালেককে ঘরে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
জামায়াত নেতার মুক্তির দাবিতে মিছিলে যোগ দিতে অস্বীকার করায় কলারোয়া উপজেলার বাটরা গ্রামের গৃহবধূ নার্গিস খাতুনকে তাঁর স্বামী সেলিম শেখ ১৮ আগস্ট মারধর করেন। সদর হাসপাতালে ২৩ আগস্ট তিনি মারা যান।
সাতক্ষীরার পৌর মেয়র আবদুল জলিল জানান, গত ২ সেপ্টেম্বর পৌরসভার নৈশ্যপ্রহরীর মুখ বেঁধে ডাকাতেরা পৌর ভবনের সাতটি ঘরের তালা ভেঙে এক লাখ ৪৬ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকার রাকিবুল হাসান জানান, ২০ সেপ্টেম্বর দুপুরে ডাকাতেরা বাড়ি থেকে ৩০ ভরি সোনা ও দেড় লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে।
সাতক্ষীরা সদরের কুশখালী গ্রামের গরু ব্যবসায়ী ইমাদ আলী দালাল জানান, গত ২২ সেপ্টেম্বর ১৮ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে যাওয়ার সময় শহরের সিটি কলেজের সামনে ছিনতাইকরীরা অস্ত্রের মুখে টাকাগুলো ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার আঁগড়দাড়ি, বৈকারি, বাঁশদাহ, কুশখালী, ও শিবপুর এলাকার একাংশের মানুষ গত ২৮ ফেব্রুয়ারির পর এক প্রকার জিমিঞ্চ জীবনযাপন করছেন। সংঘর্ষ-অবরোধের সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা এসব এলাকায় স্বাভাবিকভাবে যেতে পারেন না। পথে পথে গাছ কেটে অবরোধ সৃষ্টি করা হয়। একই অবস্থা কলারোয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের গাজনা, মানিকনগর ও ওফাপুরে। গত ১৮ আগস্ট জয়নগর ইউপি জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেনকে সরসকাঠি বাজার থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে জামায়াতের কর্মীরা সরসকাঠি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে আলতাফকে ছিনিয়ে নিয়ে যান।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সার্বিক অর্থে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। কয়েকটি এলাকায় সমস্যা রয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।