সিআইডিপ্রধান মুক্তিযোদ্ধা কি না প্রশ্ন মন্ত্রণালয়েরই

>

*শেখ হিমায়েত নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেছেন
*মুক্তিযুদ্ধকালে হিমায়েতের বয়স ১১ বছর ৬ মাস ২৬ দিন
*চাকরির আবেদনে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করেননি
*মুক্তিযোদ্ধা সাময়িক গেজেটে হিমায়েতের নামে মিল নেই
*৪ মে শেখ হিমায়েত হোসেনের অবসরে যাওয়ার কথা

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান শেখ হিমায়েত হোসেন মিয়া মুক্তিযোদ্ধা কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চাকরির শেষ সময়ে এসে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

মন্ত্রণালয় বলছে, শেখ হিমায়েত নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করলেও মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ছিল ১১ বছর ৬ মাস ২৬ দিন। চাকরির আবেদনপত্রে তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করেননি। অন্যদিকে সরকারি কর্মকমিশনের গেজেট ও মুক্তিযোদ্ধা সাময়িক গেজেটে তাঁর নামে মিল নেই।

এ অবস্থায় শেখ হিমায়েত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন কি না এবং তাঁর দাখিল করা মুক্তিযোদ্ধা সাময়িক সনদে নাম বিভ্রাটের বিষয়ে মতামত পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ৩ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ অধি শাখার উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এ চিঠি পাঠান। ৪ মে শেখ হিমায়েত হোসেনের অবসরে যাওয়ার কথা।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিপত্র (২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি) অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর বা তার আগে যেসব মুক্তিযোদ্ধার বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস ছিল, তাঁদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। আর সাড়ে ১২ বছরের গেজেটভুক্ত সবাই মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবেন। এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো প্রমাণ গ্রহণযোগ্য নয়।

হিমায়েত হোসেন মিয়ার জন্মতারিখ ১৯৬০ সালের ৪ মে। বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে শিক্ষানবিশ সহকারী হিসেবে ১৯৮৪ সালের ১ জুলাইয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তিনি যোগ দেন। জন্মতারিখ অনুযায়ী চাকরির ৫৯ বছরপূর্তিতে ৪ মে পর্যন্ত তাঁর চাকরি রয়েছে।

জন্মতারিখ হিসাব করলে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর তাঁর বয়স দাঁড়ায় ১১ বছর ৬ মাস ২৬ দিন। এ ছাড়া তাঁর শিক্ষা সনদ, পূরণকৃত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদনপত্র, সরকারি কর্মকমিশনের গেজেটে তাঁর নাম শেখ হিমায়েত হোসেন মিয়া। আর মুক্তিযোদ্ধা সাময়িক সনদে তাঁর নামের শেষে মিয়া উল্লেখ নেই। মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, তিনি আবেদনপত্রে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করেননি।

নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, শেখ হিমায়েত ২০০৯ সালের ১০ জুন সাময়িক সনদ পেয়েছেন। ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার কাশিয়ানি গ্রাম। সনদে সই করেছেন সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ হিমায়েত হোসেন প্রথম আলোর কাছে এ-সংক্রান্ত সব তথ্য ই-মেইলে পাঠান। টেলিফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি একজন ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। লাল মুক্তিবার্তায় আমার নাম রয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২০১০ সালে ও ২০১৩ সালে যে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে সে অনুযায়ী আমি মুক্তিযোদ্ধা। ওই সময় আমার বয়স ছিল সাড়ে ১৩ বছর। তখন সবারই বয়স কমিয়ে দেওয়া হতো বেশি দিন চাকরি করার জন্য। আমার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, সাড়ে ১২ বছর না হলে সিআইডিপ্রধান শেখ হিমায়েত হোসেন মিয়ার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। লাল মুক্তিবার্তা বা ভারতীয় তালিকা, যেখানেই নাম থাকুক না কেন মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স অবশ্যই সাড়ে ১২ বছর হতে হবে। কোনোভাবেই এই নিয়মের বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। মন্ত্রী বলেন, আইন অনুযায়ী জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিলের (জামুকা) বৈঠকের পরই এ বিষয়ে লিখিতভাবে জানানো হবে।