সীতাকুণ্ডে বেড়েই চলছে করোনা রোগী

করোনাভাইরাস।
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় বেড়েই চলছে করোনা রোগী। গত এক সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন ৩১ রোগীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। শুধু আজ শুক্রবারই আক্রান্ত হয়েছেন ৪২ জন। মারা গেছেন আরও দুজন।

সীতাকুণ্ডে করোনা চিকিৎসা দেওয়া হয় দুটি হাসপাতালে। যার একটি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রফিক্যাল অ্যাণ্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আজ ভর্তি ছিল ৩৭ রোগী। আর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন চার রোগী।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ শয্যার করোনা আইসোলেশন সেন্টারে সেন্ট্রাল অক্সিজেনসহ করোনা চিকিৎসাব্যবস্থা থাকলেও রোগী ভর্তি আছেন মাত্র চারজন। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের বেশির ভাগ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এলাকার কয়েক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের যেসব রোগী মারা গেছেন, তাঁদের বেশির ভাগ চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। অনেকে আইসিইউ–সংকটে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছেন।

গত সোমবার কুমিরা ইউনিয়নের আনোয়ার হোসেন (৫৫) নামের এক ব্যক্তি চট্টগ্রাম নগরের জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ খালি না পেয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আজ ৪২ জন, আগের দিন বৃহস্পতিবার ৩৩, বুধবার ৩২, মঙ্গলবার ৪১ ও সোমবার ১৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। গত এক সপ্তাহে মারা গেছেন ছয়জন। এ পর্যন্ত সীতাকুণ্ডে মোট আক্রান্ত ১ হাজার ৫৫৮ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৩ থেকে ৪ শতাংশ রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়। তাঁরাই কেবল হাসপাতালে ভর্তি হন। গত এক সপ্তাহে তাঁদের হাসপাতালে আটজন ভর্তি ছিলেন। গত বুধবার চারজনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

রোগীরা চট্টগ্রামমুখী কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ার আগেই বেশির ভাগ রোগী আইসিইউ পাওয়ার আশায় আইসিইউ আছে, এমন হাসপাতাল বা কাছাকাছি কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চায়। এ প্রবণতা থেকে চট্টগ্রামমুখী হচ্ছেন। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অভিজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। রয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থাও।

বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক বখতেয়ার আলম বলেন, করোনা রোগী ক্রমশ বাড়ছে। আজও বিআইটিআইডিতে ৩৭ করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন।

যাঁদের মধ্যে তিন রোগীকে আইসিইউ শয্যায় রেখে হাই ফ্লো অক্সিজেন দিতে হয়েছে। কিন্তু জেনারেটর না আসায় পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ কার্যক্রম শুরু করতে পারেননি। ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে আইসিইউ ইউনিট চালুর চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১ জুলাই থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্নস্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

ইউএনও শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মানুষ সচেতন না হলে অভিযান পরিচালনা করে করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তারা একদিকে অভিযান চালালে অন্য দিকে বিধিনিষেধ ভেঙে মেতে উঠেন স্থানীয় লোকজন। আবার প্রশাসন দেখলে ঠিক হয়ে যান। এ যেন প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে লুকোচুরি খেলা চলে। তিনি অভিযানে যাওয়ার পথে সতর্ক করেন। ফেরার পথে জরিমানা করেন বলে জানান তিনি।