সুনামগঞ্জে দুই দফা বন্যায় লক্ষাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। মানুষের ঘরবাড়ি, দোকানপাট, গবাদিপশু, আসবাব ইত্যাদি নানাভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছে। এখনো বন্যার পানি পুরোপুরি নামেনি। আজ শনিবার পর্যন্ত বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত পর পরিবারের সংখ্যা ১ লাখ ৮ হাজার ১২৯ বলে জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে ভারী বর্ষণ না হওয়া ও উজান থেকে পাহাড়ি ঢল না নামায় সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। জেলার সব নদ-নদীর পানি কমছে। তবে হাওরে পানি কমছে ধীরে। এ কারণে এখনো অনেক বাড়িঘর, গ্রামীণ রাস্তাঘাটে বন্যার পানি রয়েছে। তবে পানি কমতে শুরু করায় মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।
জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সংগ্রামপুর গ্রামের বাসিন্দা মুক্তার আলী জানান, বন্যায় তিনি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাঁর ঘর ভেঙেছে। ঢলের পানিতে ভেসে গেছে হাঁস-মুরগি। বন্যার সময় ১৭ দিন পরিবার নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখন পানি নামায় বাড়িতে ফিরেছেন। একই গ্রামের সফিক নূর জানান, দুই দফা বন্যার পানি ঘরে প্রবেশ করায় পানিতে গোলার বেশ কিছু ধান ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া তার বসতঘরেরও ক্ষতি হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয় ২৫ জুন। এর সপ্তাহখানেক পর পরিস্থিতি যখন উন্নতি হচ্ছিল, তখন ১০ জুলাই থেকে দ্বিতীয় দফায় বন্যা দেখা দেয়। এতে জেলার সব কটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়ায় মানুষজন ভোগান্তিতে পড়েন। বন্যার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখনো জেলা সদরের সঙ্গে তাহিরপুর, ছাতক ও জামালগঞ্জ উপজেলার সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে গত পাঁচ দিন সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। জেলার নদ-নদী ও হাওরে পানি কমছে।
আজ শনিবার সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। এ ছাড়া জেলার যাদুকাটা, নলজুর, পাটনাই, বালুখালি, মহাসিং নদীর পানিও কমেছে। তবে পুরাতন সুরমা নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সুনামগঞ্জে বন্যায় ১ লাখ ৮ হাজার ১২৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আজকের দিন পর্যন্ত জেলায় ২ হাজার ৩২৪টি পরিবার এখনো পানিবন্দী রয়েছে। জেলার ২৩২টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩২৪টি পরিবার রয়েছে। জেলায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪৮৯ হেক্টর জমির ফসল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জহিরুল আলম জানান, জেলায় এ পর্যন্ত বন্যার্তদের মধ্যে ৮৬৫ মেট্রিক টন চাল, ৫১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ৩ হাজার ৬০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, ২ লাখ টাকার শিশুখাদ্য ও ২ লাখ টাকার গোখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। এখন মজুত আছে ৪৫ মেট্রিক টন চাল, ১ লাখ টাকা ও ৪০০ প্যাকেট শুকনা খাবার। জেলায় আরও ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ টাকা, ৬ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, ১ হাজার বান্ডিল ঢেউটিন ও ৫ লাখ টাকার গোখাদ্য প্রয়োজন। জেলার প্রতিটি উপজেলায় বন্যার্তদের মধ্যে সরকারের ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
পাউবো সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। আগামী দুই দিন আরও পানি কমবে। তবে ২০ জুলাই থেকে বৃষ্টি হতে পারে। তখন আবার পানি কিছুটা বাড়তে পারে।