সুনামগঞ্জে বন্যায় পাঁচ শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ
সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় প্রায় ৫০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ আছে। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা সাড়ে তিন শ’এর বেশি। মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে আরও শতাধিক।
গত ছয় দিন ধরে বন্যা কবলিত হয়ে আছে সুনামগঞ্জ। জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, সদর উপজেলাসহ অনেক এলাকায় লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িসহ সরকারি-বেসরকারি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। রাস্তা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি ওঠায় বাধ্য হয়েই পাঠদান বন্ধ রাখতে হয়েছে। বন্যার পানিতে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় অভিভাবকেরাও ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ হাওর এলাকা হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে এমনিতেই ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। বন্যার কারণে ঝুঁকি আরও বেড়েছে। এমন অনেক স্কুল আছে যেগুলোতে নৌকা ছাড়া যাতায়াত করা যায় না। হাওর পাড়ি দিয়ে যেতে হয়, এমন অনেক স্কুলও আছে। এ অবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য হাওরে যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ।
তাহিরপুর উপজেলা সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার ১৩৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বেশির ভাগই এখন বন্যার পানিতে প্লাবিত। রাস্তাঘাট, গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারছে না। কিছু প্রতিষ্ঠানে ঘোষণা দিয়েই পাঠদান স্থগিত করা হয়েছে। অনেক স্কুলে ঘোষণা না দিলেও বন্যার কারণে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বলেন, ‘বন্যার কারণে হাওর এলাকার মানুষ বড় বিপদে আছে। এ অবস্থায় শিশুদের কোনোভাবেই স্কুলে পাঠানো ঠিক হবে না। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে। তাই সংগত কারণেই উপজেলার প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।’
বিশ্বম্ভরপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদ জানান, বন্যার জন্য পাঠদানের কোনো পরিবেশ নেই। উপজেলার রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল আজিজ বলেন, মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না, পানিবন্দী হয়ে আছে। স্কুলও ডুবে আছে। এ অবস্থায় বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর প্রশ্নই আসে না।
জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গকুল চন্দ্র দেবনাথ প্রথম আলোকে জানান, সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলায় ৩৫৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। এগুলোতে পাঠদান স্থগিত রয়েছে। এর বাইরে আরও ১৮টি বিদ্যালয়ে বন্যার্ত লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন। সেগুলোতেও পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান বলেন, বর্ষা মৌসুমে হাওর এলাকায় এমনিতেই শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে। যেহেতু সব উপজেলাতেই বন্যা হয়েছে, তাই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কোনো স্কুল প্লাবিত হলে বা শিক্ষার্থীদের জন্য ঝুঁকি মনে করলে তারা সেটির পাঠদান স্থগিত করতে পারবেন।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, জেলায় ২৩০ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১১৯ টিই প্লাবিত হওয়ায় সেগুলোতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
গত বুধবার সুনামগঞ্জের পাঁচটি উপজেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়। এরপর একে একে জেলার ১১ টি উপজেলাই বন্যা কবলিত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত এক লাখ চার হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে।