আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) মানুষের আস্থা অর্জনে সচেষ্ট হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ইসিকে সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে ক্ষমতার দৃশ্যমান প্রয়োগ করতে বলেছেন। গতকাল সোমবার ইসির সংলাপে অংশ নেন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা।
সংলাপে অংশ নিতে ৩৮ জন সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে অংশ নেন ২৭ জন। সব দলকে নির্বাচনে আনা ইসির দায়িত্ব কি না, তা নিয়ে সংলাপে পরস্পরবিরোধী মত এসেছে। বিএনপিকে ভোটে আনতে ইসির উদ্যোগ নেওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে বিতর্কও হয়।
সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, সে বিষয়ে জোর (ফোর্স) করা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয়। কমিশনের দায়িত্ব থাকবে সবাইকে নির্বাচনে অংশ নিতে আহ্বান জানানো। সব দল নির্বাচনে অংশ না নিলে তা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করছে ইসি। এর অংশ হিসেবে গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে কর্মরত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে ইসি। গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইসি প্রথমে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে সংলাপ করে। এর পর বিশিষ্ট নাগরিক এবং সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপ করেছে তারা।
গতকালের সংলাপে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, নির্বাচন কমিশন জানে তাদের কাজ কী। তাদের কাজ একটাই, ভালো নির্বাচন করা। ভালো নির্বাচন করা ছাড়া ডানে–বাঁয়ে কিছু নেই। নির্বাচনে যাতে সহিংসতা না হয়, সবাই যেন ভোটের ফলাফল মেনে নেয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি ইসিকে আস্থার সংকট এবং ইভিএম নিয়ে সংশয় দূর করতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
কখনো কখনো রাজনৈতিক দলগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ইসিকে বিতর্কিত করেছে বলে উল্লেখ করেন একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু। তিনি বলেন, সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গঠিত শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন বিএনপিকে ভাঙার জন্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদকে ধানের শীষ প্রতীক দিতে চেয়েছিল। বিএনপিকে নির্বাচনে আনা না আনা ইসির কাজ নয় বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভোটে আসা না আসা দলগুলোর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। জামাই আদর করে কাউকে নির্বাচনে আনতে হবে না। রাতের ভোট নিয়ে আলোচনা–বিতর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে দিনেই ভোট হয়েছে।
তবে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে আনার ক্ষেত্রে ইসির একটি ভূমিকা থাকতে হবে বলে মনে করেন মাছরাঙা টিভির হেড অব নিউজ রেজওয়ানুল হক।
ইসির উদ্দেশে এটিএন বাংলার হেড অব নিউজ জ ই মামুন বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার এখতিয়ার আইনে ইসির আছে কি না, সেটা বড় বিষয় নয়। ইসিকে চেষ্টা করতে হবে, যাতে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়। সে রকম একটি আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
আবুল কালামের বক্তব্যের জের টেনে জ ই মামুন বলেন, ‘আসলে রাতে নির্বাচন হয় না। রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয় ব্যালট পেপার দিয়ে। রাতে ভোটের বাক্স ভরে রাখা হয়েছিল। ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে পরের দিন। এগুলোই ঘটেছে বাংলাদেশে। আমরা এই কথাগুলো জেনেশুনেও বলি না, কারণ, আমরা বলতে ভয় পাই, লিখতে ভয় পাই।’
সংলাপে কয়েকজন সাংবাদিকদের দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে জ ই মামুন বলেন, ‘আজকে সংলাপে আমার সহকর্মী, বন্ধু, ভাইদের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছিল, আমি কোনো পলিটিক্যাল প্রোগ্রামে আসলাম নাকি। এখানে বিএনপির বক্তব্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগের বক্তব্য হচ্ছে। গণমাধ্যমেও এ ধরনের বিভক্তি আছে। আপনারা নিশ্চিয় সেটি আগে থেকে জানেন।’
জ ই মামুনের বক্তব্যের পর আবারও বক্তব্য দেন একাত্তর টিভির মোজাম্মেল বাবু। তিনি বলেন, কোনো দল যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা নির্বাচনে আসবে না, ইসি কি তাদের আনতে পারবে? এ সময় বিষয়টি নিয়ে কিছুটা তর্কবিতর্ক হয়।
সংলাপের শেষ পর্যায়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, অনেক আইন ইসির অনুকূলে থাকলেও তা প্রয়োগের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আইনে পর্যাপ্ত বিধান আছে। সৎভাবে দায়িত্ব পালনে ইসির চেষ্টা থাকবে।
সংলাপে সিইসির সঙ্গে ছিলেন নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান। সাংবাদিকদের মধ্যে সংলাপে বক্তব্য দেন রাশেদ চৌধুরী, মঞ্জুরুল ইসলাম, আবদুল হাই সিদ্দিক, সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, তৌফিক ইমরোজ খালিদী, জহিরুল আলম, মোস্তফা ফিরোজ, মাসুদ কামাল, তালাত মামুন, জাহিদ নেওয়াজ খান, আশিস সৈকত, তুষার আবদুল্লাহ, ফাহিম আহমেদ, রাহুল রাহা, দীপ আজাদ, বোরহানুল হক প্রমুখ।