সূর্যডিম আম এখন খাগড়াছড়িতে, কেজি হাজার টাকা
জাপানের বিখ্যাত মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম এখন আবাদ হচ্ছে খাগড়াছড়ির পাহাড়ে। এই আম বেশ দামি। বাগান থেকে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়।
খাগড়াছড়ি থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে মহালছড়ি জিরোমাইল। এর পূর্ব দিকে মহালছড়ি জালিয়াপাড়া সড়ক। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা এই সড়ক দিয়ে চার কিলোমিটার দূরে ধুমনিঘাট। সেখানেই ৩৫ একর জমিতে গড়ে ওঠা ক্রা এএ অ্যাগ্রো ফার্মে সূর্যডিম আমের বাগান করা হয়েছে। শুধু সূর্যডিম নয়, এ বাগানে প্রায় ৬০টি জাতের আম রয়েছে।
বাগানটি করেছেন হ্ল্যাশিমং চৌধুরী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করা এই যুবকের আমবাগানে গিয়ে সম্প্রতি দেখা যায়, ১২০টি আমগাছে ঝুলছে রঙিন সূর্যডিম আম। প্রতিটি গাছে ৩০ থেকে ৫০টি আম। একেকটি আমের ওজন প্রায় ৩০০ গ্রাম। হঠাৎ দেখলে মনে হবে, যেন সবুজ আমের ওপর লাল রঙ করা হয়েছে।
হ্ল্যাশিমং চৌধুরী জানালেন, ২০১৭ সালে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেন সূর্যডিম আমের চারা। এ বছর প্রথমবার প্রতিটি গাছে ফলন এসেছে। প্রতি কেজি আম তিনি বিক্রি করছেন এক হাজার টাকায়। তিনি বলেন, দাম বেশি হওয়ায় স্থানীয় বাজারে চাহিদা খুব কম। তবে ঢাকার সুপারশপ আর ব্যক্তিপর্যায়ের অনেক লোক ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এই আম। অনেকে আমগাছের চারার জন্যও যোগাযোগ করছেন।
মহালছড়ি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষিত পরিবারে জন্ম হ্ল্যাশিমং চৌধুরীর। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে গুইমারা উপজেলার সিন্দুকছড়ি বাজার চৌধুরীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাগান দেখানোর সময় কথায় কথায় জানান, ২০১৫ সালে শখের বশে বিভিন্ন জাতের ১০০টির মতো আমের চারা রোপণ করেন তিনি। দুই বছর পর থেকেই নিজেদের খাওয়ার বাইরে বাড়তি ফল বিক্রি করতে শুরু করেন। তিনি বলেন, একসময় বাণিজ্যিকভাবে বাগান করার চিন্তাটি মাথায় এল।
হ্ল্যাশিমং চৌধুরীর বাগানে বর্তমানে এখন স্থানীয় ১২ শ্রমিক কাজ করেন। বাগান করার জন্য প্রথম থেকে অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা করেছেন হ্ল্যাশিমং চৌধুরীর স্ত্রী উনুচিং চৌধুরী, যিনি চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর করা। দুজনই স্বপ্ন দেখেন, তাঁদের বাগানটি একদিন জামপ্লাজম সেন্টার হিসেবে গড়ে উঠবে।
খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুন্সী রাশীদ বলেন, সূর্যডিম বা মিয়াজাকি আম বিশ্বে রেড ম্যাংগো নামে পরিচিত। এ আম বিশ্ববাজারে সবচেয়ে দামি। এটি মূলত জাপানি আম। আমটি খেতে খুবই সুস্বাদু। তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকার মাটি ও আবহাওয়া মিয়াজাকি আম উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। প্রাকৃতিকভাবে আমটি লাল হওয়ায় দেখতে অনেক সুন্দর।
হ্ল্যাশিমং চৌধুরীর বাগানে ব্যানানা, কিউজাই, থ্রি টেস্ট, ফুনাই, লাল ফুনাই, কিং অব চাকপাত, ব্লাক স্টার, আম্রপালি, কাঁচা মিঠা, রাংগুই, ওক্রাং, মল্লিকা, কেশোয়াই, নীলম্বরী, ফিলিফাইন, ব্লাক কিং, মাহাথির, বারি-৪, বারি-১১, স্থানীয় গুটি আম, গৌরমতী, ব্রুনাইকিং, আশ্বিনা, সুবর্ণরেখা, গোপালভোগ, ওক্রাংসহ ৬০ জাতের দেশি–বিদেশি ও বিলুপ্ত প্রজাতির আম রয়েছে।