স্বজনের খোঁজে নেদারল্যান্ডস থেকে বাংলাদেশে

চট্টগ্রামের দোহাজারী এলাকার রেললাইন আর রেললাইনের পাশে ব্যস্ত এক বাজার—বাংলাদেশে শৈশবের স্মৃতি বলতে এটুকুই আছে তাঁর। সেই স্মৃতিও স্পষ্ট নয়। নিজের মা কিংবা বাবার নামটি মুছে গেছে স্মৃতি থেকে। জানা নেই অন্য কোনো স্বজনের নাম-ঠিকানা। তারপরও নেদারল্যান্ডসে বেড়ে ওঠা সুলতানা ভ্যান ডি লিস্ট ৩৭ বছর পর বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন স্বজনের খোঁজে।
স্বজনদের খুঁজে পেতে সবার সহযোগিতা চাইতে গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন সুলতানা ভ্যান ডি লিস্ট। সঙ্গে ছিলেন স্বামী ইউরি জ্যাকবস ও একমাত্র সন্তান নোয়া আবেদ নাবিলাহ জ্যাকবস।
সুলতানা জানান, ১৯৭৯ সালের নভেম্বরে মাসে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তাঁর দাদি আইনগতভাবে তাঁকে ঢাকায় অবস্থিত নেদারল্যান্ডসভিত্তিক একটি শিশুকল্যাণ সংস্থার হাতে তুলে দেন। সেখান থেকে একটি ডাচ পরিবার তাঁকে দত্তক সন্তান হিসেবে নেদারল্যান্ডসে নিয়ে যায়। সেখানেই তিনি বেড়ে ওঠেন।
সুলতানা জানান, নেদারল্যান্ডসে তাঁর মতো অনেক বাংলাদেশি শিশুকে দত্তক হিসেবে নেওয়া হয় একসময়। তাঁরা নেদারল্যান্ডসে ‘শাপলা’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। শাপলা ও স্লোব বাংলাদেশ নামের ডাচভিত্তিক একটি সংগঠনের মাধ্যমে কয়েকজন বাংলাদেশি দত্তক শিশু নানা সময়ে তাঁদের শেকড়ের সন্ধানে দেশে এসেছেন। তাঁদের অনেকে সফলও হয়েছেন। সবকিছু দেখেশুনে তাঁরও নিজের শেকড় সম্পর্কে জানার তীব্র ইচ্ছা হয়।
স্বজনদের খুঁজতে দেশে এলেও সুলতানার সম্বল শুধু তাঁকে দত্তক দেওয়ার সময়ের এফিডেভিটের একটি কপি। ওই নথি অনুযায়ী তাঁর দাদির নাম রহিমা খাতুন আর দাদার নাম কদম আলী। সেখানে লেখা আছে, সুলতানার মা-বাবা বেঁচে নেই। তাঁর খরচ বহনে অক্ষম দাদি কোনো দাবি ছাড়াই নাতনিকে দত্তক দিয়েছেন।
বাংলাদেশে সুলতানাকে সহায়তা করছেন মো. ইসমাইল শরীফ ও শরীফ মো. ওমর আলী নামের দুই ব্যক্তি। তাঁরাও গতকাল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
মো. ইসমাইল শরীফ জানান, দুই দিন (আজ শুক্রবার ও কাল শনিবার) তাঁরা দোহাজারীতে সুলতানার শেকড়ের সন্ধান করবেন।
স্বজনের খোঁজে সুলতানা বাংলাদেশে এসেছেন ১ ফেব্রুয়ারি। ফিরে যাবেন ১২ ফেব্রুয়ারি। স্বজনের খোঁজ পেলে কী করবেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সুলতানা বলেন, ‘এখনো জানি না। তবে তাঁদের খুঁজে পেলে খুব ভালো লাগবে।’