স্বাস্থ্যসেবায় ৮৮ প্রতিষ্ঠান

সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে আশ্রয়শিবিরের দিকে চলেছে একদল রোহিঙ্গা। গতকাল কক্সবাজারের পালংখালীতে l ছবি: রয়টার্স
সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে আশ্রয়শিবিরের দিকে চলেছে একদল রোহিঙ্গা। গতকাল কক্সবাজারের পালংখালীতে l ছবি: রয়টার্স

ছোট-বড় ৮৮টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা দিচ্ছে। আরও নতুন হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তাব সরকারের কাছে আসছে। রোহিঙ্গাদের নতুন দুটি টিকা দেওয়ার কথা ভাবছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র এ তথ্য দিয়েছে।

কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা আছে। গতকাল শুক্রবার রোহিঙ্গাবিষয়ক স্থানীয় টাস্কফোর্সের একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন মিয়ানমার থেকে দেড় থেকে দুই হাজার রোহিঙ্গা আসছে। আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত এলাকায় বহু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় আছে।

কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন মো. আবদুস সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গারা স্বাস্থ্যসেবাবঞ্চিত ছিল। তাদের মধ্য ডায়রিয়া, হামসহ নানা সংক্রামক রোগের প্রকোপ বেশি। মালয়েশিয়া সরকার ১০০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণ ও তা পরিচালনার সব খরচ বহন করবে। ইরান সরকারও একটি হাসপাতাল করার জন্য সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছে।

বর্তমানে সরকারি ২৫টি, সেনাবাহিনীর ১০টি এবং বেসরকারি ৫৩টি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টিসেবা দিচ্ছে। উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা হাসপাতাল এবং কক্সবাজার সদর হাসপাতালকে এই হিসাবের মধ্যে ধরা হয়েছে। নতুন সবচেয়ে বড় হাসপাতালটি আন্তর্জাতিক রেডক্রস ফেডারেশন তৈরি করেছে। ৬০ শয্যার এই হাসপাতালে অত্যাধুনিক অস্ত্রোপচারব্যবস্থা আছে, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রও (আইসিইউ) থাকবে।

রোহিঙ্গাদের জন্য ২০০৯ সাল থেকে ৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল কুতুপালংয়ে চালু রেখেছে সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল বা এমএসএফ। প্রতিষ্ঠানের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মো. সজীব হোসেন প্রথম আলোকে জানান, এমএসএফ ৫০ শয্যার আরও তিনটি নতুন হাসপাতাল বালুখালী, মাইন্যাঘোনা ও জামতলীতে তৈরি করবে।

সংক্রমণের আশঙ্কা

রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে কলেরা ছড়িয়ে পড়তে পারে, সেই আশঙ্কায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের পরামর্শে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোহিঙ্গাদের কলেরার টিকা খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। গত ১০ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৭ লাখ ৪৮৭ জনকে কলেরার টিকা খাওয়ানো হয়েছে। এ ছাড়া ৭২ হাজার ৩৩৪টি রোহিঙ্গা শিশুকে পোলিও টিকা দেওয়া হয়েছে। ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়েছে ৭২ হাজার ৬৪ শিশুকে। ৩৫ হাজার ৫১৯টি শিশুকে হাম-রুবেলার টিকা দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, শীতকাল আসছে। এই সময় রোটা ভাইরাসের সংক্রমণ (এতে ডায়রিয়া হয়) বেশি হয়। তাই রোটা ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা ব্যবহারের কথা ভাবা হচ্ছে। তা ছাড়া রোহিঙ্গাদের নিউমোনিয়ার টিকাও দেওয়া হবে। এ ছাড়া উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায় স্বাস্থ্যসেবাকে জোরদার করার জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা চলছে।

ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের একটি চিকিৎসক দল ২১ অক্টোবর ৩০০ গর্ভবতী রোহিঙ্গার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। তাতে ২৪ জনের শরীরে হেপাটাইটিস-সি শনাক্ত হয় (৮ শতাংশ)। ওই দলের সঙ্গে ছিলেন ডা. জুনায়েদ পাইকার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মধ্যে হেপাটাইটিসে সংক্রমণের হার খুব বেশি (বাংলাদেশে ৩ শতাংশ)। প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে দ্রুত তা শিবির অতিক্রম করে বৃহত্তর সমাজে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।’